শিলিগুড়ি, 21 জুন: একই লাইনে পর পর দুটি ট্রেন ! একেবারে শেষ মুহূর্তে তা দেখতে পান কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছন থেকে ছুটে আসা মালবাহী ট্রেনের চালক ৷ তারপর বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ঘটল ভয়াবহ দুর্ঘটনা ! ঠিক কী ঘটেছিল ধাক্কা লাগার আগের মুহূর্তে ? নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালবাহী ট্রেনের সহকারী লোকো পাইলট মনু কুমার ৷
"হে ভগবান! মন্নু সামনে তো ট্রেন হ্যায়! ম্যায় ব্রেক লাগা রাহা হুঁ । তু ভি জোর সে খিচ । বগি পাল্টেগা তো পলটনে দে । তু জোর সে ব্রেক মার", মনুকে বলেছিলেন চালক অনিল কুমার ৷ তারপর নাকি দু'জনেই সজোরে ব্রেক কষেন । কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি । শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফাঁসিদেওয়া ব্লকের নির্মলজোত এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে মালবাহী ট্রেনটি । জানা গিয়েছে, নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে নিজের প্রাথমিক বয়ানে এমনটাই নাকি জানিয়েছেন মালবাহী ট্রেনের সহকারী চালক মনু কুমার ৷ মনুই একমাত্র সোমবারের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী। সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, এই মুহূর্তে একমাত্র তিনিই সম্পূর্ণটা খোলসা করে বলতে পারবেন বলে মত রেল আধিকারিকদের।
দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন মনু ৷ আইসিইউ-তে রয়েছেন তিনি ৷ সেই কারণে তাঁর পুরো বয়ান এখনও নিতে পারেননি তদন্তকারীরা । তবে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জনক কুমার গর্গ । ইতিমধ্যে ঘটনায় একাধিক বয়ান রেকর্ড করেছেন তিনি । মালবাহী ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় খুব বেশি হলে 15 কিলোমিটার হওয়ার কথা । সেখানে কীভাবে প্রায় 70 কিলোমিটার গতিবেগে ওই মালবাহী ট্রেনটি ছুটছিল সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তদন্তকারীদের কাছে ।
মনু কুমারের বয়ান নিতে একাধিকবার তাঁর কাছে গিয়েছেন রেলের আধিকারিকরা । কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মনু ৷ টুকরো টুকরো কথা বলছেন তিনি । তাঁর মনেও যে আতঙ্ক রয়েছে, সেটা পরিষ্কার । মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তাঁর চিকিৎসা করছেন ৷
রেলের তদন্তে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, 17 জুন ভোরে রাঙাপানি এবং চটের হাট স্টেশনের মাঝের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় টি/এ 912 অথরিটি লেটার জারি করা হয় ৷ এই ফর্মের পাশাপাশি 'টি 369 (3B)' ফর্মও দেওয়া হয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও পরের মালগাড়ির চালককে ৷ রেলের নিয়ম অনুযায়ী, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপ থাকলে স্টেশন মাস্টার ট্রেনের চালক ও গার্ডকে এই ফর্মের মাধ্যমে ট্রেন চালানোর অনুমতি দিতে পারেন ৷
তবে এই পদ্ধতিতে ট্রেন চালালে তার গতিবেগ কোনও ভাবে ঘণ্টায় 15 কিলোমিটারের বেশি থাকার কথা নয় ৷ এই দুই ফর্ম অনুযায়ী, রেলের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, মালবাহী ট্রেনটির চালক অনিল কুমার টি 369 (3B)-এর নিয়ম মানেননি ৷ মালবাহী ট্রেনের গতি 15 কিলোমিটারের বেশি থাকায় এই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের ৷
অন্যদিকে, দুটো ট্রেনের সংঘাত আটকাতে মালবাহী গাড়িটি যে সজোরে ব্রেক কষেছিল তার প্রমাণও খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে । ফরেন্সিকের মাধ্যমে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন খতিয়ে দেখা হচ্ছে । জানা গিয়েছে, আচমকা ব্রেক করায় ঘটনাস্থলে ডাউন লাইনের একাধিক স্লিপার ভেঙে যায় । ওই স্লিপারগুলি সংঘাতের কারণে নাকি হঠাৎ ব্রেক করার কারণে ভেঙেছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ।
এই বিষয়ে কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার বলেন, "এগুলি এখনই বলা সম্ভব নয় । এই ধরনের অনেক প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খোঁজা হচ্ছে । তবে এখনও মনু কুমারের বয়ান মেলেনি । আধিকারিকরা গিয়েছিলেন । তিনি কেমন আছেন, তার খবর নিয়ে এসেছেন।