আসানসোল, 14 ডিসেম্বর: কয়েকবছর আগেও আবর্জনাময় শহর হিসেবে তকমা জুটেছিল শিল্পশহর আসানসোলের । সেখান থেকেই এবার একটু হলেও আশার ছবি পাওয়া গেল । কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষায় আসানসোলের বায়ুর গুণগত মান উন্নত হয়েছে বলে প্রকাশ হয়েছে ।
বায়ুর গুণগত মানের তালিকায় গত বছর আসানসোল ছিল 35 নম্বরে । এবার সেখান থেকে উঠে এসেছে 20 নম্বরে । শুধু তাই নয়, বায়ুর গুণগত মানে কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুরকেও পিছনে ফেলেছে আসানসোল ।
সম্প্রতি কেন্দ্রের পরিবেশ, বায়ু ও জলবায়ু মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল । এই সমীক্ষায় 10 লক্ষের অধিক মানুষের বসবাসকারী শহরগুলির বায়ুর গুণগত মান নির্ণয় করা হয় । দেশের 47টি শহরের বায়ুর গুণগত মান দেখা হয় । তাতে আসানসোল 20 নম্বরে স্থান পেয়েছে ।
গতবছর এই একই সমীক্ষায় আসানসোল ছিল 35 নম্বরে । অর্থাৎ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে বায়ুর গুণগত মান অনেকটাই উন্নত হয়েছে আসানসোলে । অন্যদিকে খারাপ ফল করেছে পাশের শহর দুর্গাপুর । গতবছর 16 নম্বরে নাম ছিল দুর্গাপুরের । এবার তা নেমে গিয়েছে 37 নম্বরে । বায়ুর গুণমানে খারাপ অবস্থা কলকাতা এবং হাওড়ারও । তালিকায় কলকাতা রয়েছে 41 এবং হাওড়া 44 নম্বরে । কিন্তু কিভাবে আসানসোলের বায়ু গুণগতভাবে এত উন্নত হল?
আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমরা লক্ষ্য করেছি আসানসোল পুরনিগম এলাকায় রাস্তার ধুলো থেকেই বায়ু দূষণ বেশি হয় । সেই কারণে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে সেখানে ক্রমাগত জল কামান ও অনান্য জল সিঞ্চনকারী গাড়ি দিয়ে জল ছড়ানো হয় । কোথাও কোথাও দিনে চারবার করেও এই জল ছেটানোর কাজ চলছে । অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে পুরকর্মীরা ৷ তাই এই সাফল্যের কৃতিত্ব পুরোটাই তাঁদের ।"
জানা গিয়েছে, কেন্দ্র থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য 20 কোটি টাকা মিলবে । মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই টাকায় আরও জল কামান কেনা হবে । পাশাপাশি আরও কিভাবে এই টাকা খরচ করা যায় সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে ।
বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী ইটিভি ভারতকে ফোনে বলেন, "অত্যন্ত ভালো খবর । তবে প্রাকৃতিক তারতম্যের কারণেও এমন ফল হতে পারে । একদিকে যেমন চরম উষ্ণ ছিল এই বছর, তেমনই তার পাশাপাশি বৃষ্টিও হয়েছে । নিম্নচাপ হয়েছে বেশ কয়েকটি । ফলে বাতাসের ধূলিকণা বৃষ্টির কারণে সরে গিয়েছে বা নিম্নচাপের অন্য দিকে চলে গিয়েছে । তবে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে । ধান কেটে নেওয়ার পরে শীতকালে জমিতে খড়ের ন্যাড়া পোড়ানো হয়, তা বন্ধ করতে হবে । পাশাপাশি রাস্তায় জল সিঞ্চন ক্রমাগত চালিয়ে যেতে হবে ।"
আসানসোলের বিশিষ্ট ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "গত 10-12 বছর আগে যে পাখি আসত আসানসোলে, সেই পাখি আবার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে । স্বভাবতই পরিবেশগত উন্নতির কারণেই পাখি আসছে । তবে জানুয়ারিতে চূড়ান্ত বার্ড কাউন্টিং পর্ব হলে বোঝা যাবে এবছর কতরকমের পাখি এসেছে আসানসোলে ।"