মালদা, 15 জুলাই: পুরাতন মালদা পৌরসভা এলাকায় জলবন্দি মানুষের পরিস্থিতি পরিদর্শনে স্থানীয় সাংসদ ৷ কিন্তু, সেই পরিদর্শনে গিয়ে ফের ঝামেলার মুখে পড়লেন মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ 17 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি তর্কাতর্কিতে জড়ালেন ৷
ওই ওয়ার্ডের বর্জ্য জল নিকাশির জন্য সোমবার সাংসদ ডেকে পাঠিয়েছিলেন রেল ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে ৷ কীভাবে 17 নম্বর ওয়ার্ডে যথাযথ নিকাশির ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেন খগেন মুর্মু ৷ যদিও, সাংসদের এদিনের পরিদর্শনকে নাটক বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল পরিচালিত এই পৌরসভার চেয়ারম্যান ৷
বৃষ্টির জলে বেশ কিছুদিন ধরেই জলমগ্ন হয়ে রয়েছে পুরাতন মালদা পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ৷ নোংরা জল পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ৷ সেই জলে হাঁটাচলা করে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই ৷ বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রবও বাড়ছে ৷ এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের ৷ কয়েকদিন আগে একইভাবে জলমগ্ন 13 ও 14 নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সাংসদ ৷ সেবার এলাকার তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি ৷ এদিনও তাঁর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন 17 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী গাঙ্গুলির স্বামী শ্রবণ গাঙ্গুলি তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন ৷
কাউন্সিলরের প্রতিনিধি শ্রবণের বক্তব্য, "আমার স্ত্রী 2 বছর হল কাউন্সিলর হয়েছেন ৷ এখানকার মানুষজন 12 বছর ধরে বৃষ্টির জলে ডুবছে ৷ আগে কেউ এই এলাকার নিকাশি নিয়ে ভাবেনি ৷ ভোটে জিতে আমরা এই ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থার জন্য তিনটি ড্রেনের পরিকল্পনা পৌরসভায় জমা করেছি ৷ ড্রেনগুলির অনুমোদন মিলেছে ৷ একটি তৈরিও হয়ে গিয়েছে ৷ বর্ষার জন্য বাকি দু’টি ড্রেনের কাজ এগোয়নি ৷ আমি এলাকাবাসীকে জানিয়ে দিয়েছি, এবার কষ্ট করতে হবে ৷ তবে আগামী বছর থেকে কষ্ট থাকবে না ৷ আজ সাংসদ এসেছিলেন, আসতেই পারেন ৷ কিন্তু তিনি প্রচার করছেন, আমরা নাকি ছাপ্পা ভোটে জিতেছি ৷ বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নাকি আমাদের টাকা দিচ্ছে ৷ সব মিথ্যে কথা ৷ তিনি শুধু রাজনীতি করতে এখানে এসেছেন ৷"
আর জমা জল নিয়ে সাংসদের বক্তব্য, “দীর্ঘদিন থেকেই এই ওয়ার্ডে জল জমার সমস্যা রয়েছে ৷ অথচ এসব কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ফান্ড থেকে পৌরসভাগুলিকে ভালো টাকা দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, এখানে ওই টাকায় কাজ হয় না ৷ আমাকে এলাকার মানুষজন ডেকেছিলেন, তাই এসেছিলাম ৷ কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, পাশে থাকা রেল লাইনের নীচ দিয়ে একটি ড্রেন করা হলে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব ৷ তাই রেল লাইন দেখতে এসেছি ৷ এখানকার কাউন্সিলরকেও ডেকেছিলাম ৷ কিন্তু, তিনি রাজনীতি ছাড়া কিছু বোঝেন না ৷ অথচ এসব সমস্যার সমাধান তাঁরই করার কথা ৷
খগেন মুর্মুর অভিযোগ, "এই ওয়ার্ডের মানুষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট দেয়নি বলে, তিনি কোনও কাজ করবেন না ৷ কিন্তু, এখানকার মানুষের ভোটে জিতেই তো তিনি কাউন্সিলর হয়েছেন ! আমি রেল আর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ইঞ্জিনিয়ারদের এখানে ডেকেছি, তাঁরা আসছেন ৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নিকাশি ড্রেনের বিষয়টি নির্দিষ্ট জায়গায় তুলে ধরব ৷"
এই ঘটনায় দলীয় কাউন্সিলরের পাশেই দাঁড়িয়েছেন পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ ৷ তিনি বলেন, “ক’দিন ধরেই দেখছি, সাংসদ এখানে নাটক করতে আসছেন ৷ এই পৌরসভার জন্য একটিও কাজ করেননি তিনি ৷ কেন্দ্রের কোনও টাকাও এনে দেননি ৷ এখানে যা কাজ হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের টাকায় হয়েছে ৷ আসলে আগে 17 নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা ছিল সাহাপুর অঞ্চলের ভিতর দিয়ে ৷ সেখানে জাতীয় সড়কের বাইপাস হয়ে যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের জল আর বেরতে পারছে না ৷ আমরা পৌরসভার তরফে পাম্প বসিয়ে সেখানকার জল বের করেছি ৷ ইতিমধ্যে, রাজ্য সরকারের এরিয়া ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের 54 লাখ টাকায় ওই ওয়ার্ডে 55 শতাংশ নিকাশির কাজ করা হয়েছে ৷ বাকি কাজের টেন্ডার করে ঠিকাদার সংস্থাকে ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে ৷ বর্ষার জন্য কাজ শুরু হতে একটু দেরি হচ্ছে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সমস্ত পাওনা আটকে রেখেছে ৷ আর এরা এখানে নাটক করছে ৷"