বাঁকুড়া, 15 জুন: বুজে যাওয়া প্রাচীন জলাশয় ফুলবাঁধ খনন করতে গিয়ে উদ্ধার হল পাথরের মূর্তি । আর সেই মূর্তি দেখতে অগণিত মানুষের ভিড় বাঁকুড়ার জয়পুরের রাজশোলে ৷ মূর্তি উদ্ধারকারী তারাপ্রদ মণ্ডল বলেন, "রাস্তায় বেরিয়ে মাটির মধ্যে মূর্তিটিকে দেখতে পেলাম ৷ সেটি তুলে দেখি ঠাকুরের মূর্তি ৷ প্রাচীন পাথরের মূর্তিটি ৷ 200-400 বছরের পুরনো মন হচ্ছে ৷ তবে কোন ঠাকুরের বুঝতে পারছি না ৷ "
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার একটি বাঁধ মাটি, আবর্জনা পড়ে বুজে গিয়েছিল ৷ সেই বাঁধ আবারও খনন শুরু হয় কয়েক মাস আগে । সেই খনন কাজের সময় জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছিল ৷ পরে সেই মাটি ট্র্যাক্টরে করে এনে ফেলার সময় মাটির সঙ্গে উঠে আসে পাথরের মূর্তি ৷ খামারে মাটি ছড়ানোর সময় উদ্ধার হল ভাঙাচোরা দেব-দেবীর মূর্তিটি ৷ নিমেষের মধ্যে এলাকায় এই মূর্তি উদ্ধার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে । খবর শুনে আশপাশ থেকে ছুটে আসেন স্থানীয় মানুষজন ৷ পাথরের দেব-দেবীর মূর্তি দেখতে ভিড় জমান রাজশোল গ্রামের নামো পালপাড়া পুণ্যবুড়ির তলায় ।
এই পুণ্যবুড়ির মূর্তিও উদ্ধার হয়েছিল এই বাঁধের জলাশয় থেকেই কয়েক দশক আগে । পুণ্যবুড়ির স্নান করা পুকুর নামে পরিচিত ফুলবাঁধ । তখন থেকে গ্রামে পুন্যবুড়ির রূপে পূজিত হন মা। আবারও কয়েক দশক বাদে একই পুকুর থেকে উদ্ধার হল মূর্তি ৷ তবে এই মূর্তি কোন দেবতা বা দেবীর বোঝা যাচ্ছে না । কেউ বলছেন বিষ্ণু, কেও বলছেন কৃষ্ণ, কেও বলছেন রাধিকা ৷ আবার কারও কারও কথায় ধনদেবী লক্ষ্মীর মূর্তি এটি ।তবে মূর্তি যে দেবতারই হোক না কেন সেই মূর্তিকে নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে গ্রামে । তাহলে কি মল্ল রাজার রাজত্বে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই মূর্তি ? এরকম প্রশ্নও উঠছে ৷
রাজশোলে গ্রামের মাটির তল থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মূর্তি । এই বাঁধ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় এই মূর্তি প্রতিষ্ঠাও করা হয় বাঁধের মাঝখানে ! তা না হলে কীভাবে বাঁধের মাঝে এল মূর্তি? কারা রেখেছিল এই মূর্তিগুলো? নাকি পুর্বে ওইখানে কোনও বড় মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? বহু যুগ পূর্বে যা মল্ল রাজার রাজত্বেরও আগে? এখন গ্রাম বাংলার মানুষের মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে এইসব কৌতুহলী প্রশ্ন । গ্রামের সহজ সরল মানুষ জানেন না এই মূর্তি গুলির বয়স কত? তবে তারা মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবেই মূর্তিগুলির বিরাট মূল্য রয়েছে । তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ওই গ্রামে গিয়ে মূর্তিগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলতে পারবেন তার আনুমানিক বয়স এবং এর ইতিহাস । আপাতত গ্রামের মানুষ প্রবল উৎসাহিত এবং আনন্দিত এই মূর্তিগুলি হাতে পেয়ে ।