কলকাতা, 15 জানুয়ারি: মাম্পি সিংকে এখনও ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে । মিনারা বিবির প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্টের । এছাড়া মাম্পি সিং এবং মিনারা বিবির বুধবার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে । মেদিনীপুরের তিন প্রসূতির শারীরিক অবস্থাই এখনও আশঙ্কাজনক বলে বুধবার জানিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ । অন্যদিকে, স্যালাইন-কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এসএসকেএম হাসপাতালে উপাধ্যক্ষ তথা অধ্যাপক চিকিৎসক পীযূষকুমার রায় বলেন, "নাসরিন খাতুনকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করার ট্রায়াল চলছে ৷ যদিও এখনও ওঁর ভেন্টিলেশন চলছে । তবে তাঁর প্রতিদিন ডায়ালিসিসের প্রয়োজন পড়ছে । বাকি দু'জনের প্রয়োজন মতো আমরা ডায়ালিসিস করছি ।"
এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালাইন-কাণ্ডে অসুস্থ তিন প্রসূতি । তাঁদের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে 13 সদস্যের মেডিক্যাল টিম । এসএসকেএম হাসপাতালের সিসিইউ 13-এ রয়েছেন মিনারা বিবি ৷ সিসিইউ 14-এ আছেন মাম্পি সিং । অপরদিকে নাসরিন খাতুন রয়েছেন আইটিইউ 3-এ । সেই বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ বলেন, "তিনজনের শারীরিক অবস্থাই স্থিতিশীল নয় । তিনজনই আশঙ্কাজনক । তাই দু'জন রয়েছে সিসিইউতে, একজন আইটিউতে ।" চিকিৎসকরা খুব গুরুত্ব সহকারে প্রসূতিদের পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানান উপাধ্যক্ষ ।
অন্যদিকে বুধবার তাঁর নির্বাচনী এলাকা ফলতায় সেবাশ্রয়ের ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "প্রসূতি মৃত্যুর জন্য যিনি দায়ী হোন না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে । এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত ।"
একই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে স্যালাইন-কাণ্ডে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিয়েছেন । বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি সিআইডি তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি । কারও অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হবে বলে জানান অভিষেক ৷
প্রসঙ্গত, এদিন ফলতায় সাংবাদিকদের তরফ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সেবাশ্রয় মেডিক্যাল ক্যাম্পের সাফল্যের পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর ওঠা একের পর এক অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় । যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কোনও অভিযোগ রয়েছে বলে মেনে নিতে চাননি । বরং তৃণমূল সরকারের সময় যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে সেটাকেই মডেল বলে জানিয়েছেন তিনি । একইসঙ্গে আরজি কর প্রসঙ্গ তুলে পুলিশি তদন্তের সাফল্যের কথাও বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
তিনি বলেন, "রাজ্য সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে । বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সিআইডি তদন্তও চলছে । মানুষের প্রাণ মণিমুক্তোর মতো । কারও গাফিলতি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হবে । এমন কাজ এই সরকার আগেও করেছে । দলমত নির্বিশেষে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে, এবারও তাই হবে ।"
এদিন অবশ্য অভিষেক এটাও বলেছেন, "একটি নির্দিষ্ট ঘটনার কারণে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দিকে আঙুল তোলা উচিত নয় । তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে, এর সঙ্গে আমি একমত নই । এই ঘটনায় যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে নির্বিশেষে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে ।" তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ অতীতেও দেখা গিয়েছে । দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করেন না । এক্ষেত্রেও তিনি সঠিক পদক্ষেপ করবেন ।"
এ দিন তৃণমূল সরকারের উপর ওঠা যাবতীয় প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, "কোনও সরকার জ্যোতিষ বা গণৎকার নয়, আগে থেকে জানা যায় না কী ঘটবে । একটা ঘটনা ঘটলে জেলা বা রাজ্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটা অনেক কিছু বলে দেয় ।" এরপরই আরজি কর প্রসঙ্গ তোলেন তিনি । অভিষেক বলেন, "আরজি করের ঘটনায় সঞ্জয় রায়কে কলকাতা পুলিশ 24 ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছিল । সেই মামলার সমাধান করতে সিবিআইয়ের পাঁচ মাস লাগল । এ প্রশ্ন তো কেউ করে না ।"