বসিরহাট, 2 ডিসেম্বর: স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের শৌচালয় নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল । ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ ব্লকে । সরকারি বরাদ্দের টাকা পাইতে দিতে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত আধিকারিকের বিরুদ্ধে ৷
শৌচালয় নেই, এমন পরিবারের জন্য স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্প থেকে 12 হাজার টাকা করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার । অভিযোগ, শৌচালয়ের টাকা বরাদ্দ হলেও অনেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ঢোকেনি । টাকা তুলে নিয়েছে অন্য কেউ । সুবিচারের দাবিতে ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা দ্বারস্থ হয়েছেন বিডিও'র । অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ।
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে শৌচালয় প্রাপক পরিবারের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে । ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই হাসনাবাদ ব্লকের অন্তর্গত পাটলি খানপুর, হাসনাবাদ, বরুনহাট-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের শৌচালয় নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে কোথাও শৌচালয় অসম্পূর্ণ রেখে ও উপভোক্তাকে অন্ধকারে রেখে প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, তো কোথাও আবার শৌচালয় নির্মাণ না করেই বরাদ্দ টাকা উপভোক্তা পেয়ে গিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে । এভাবে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ।
অভিযোগ, শৌচালয় নির্মাণের বরাদ্দকৃত টাকা উপভোক্তাদের দেওয়া তো হইনি । উলটে ঠিকাদারি সংস্থাকে দিয়ে সামান্য কাজ করিয়ে সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সেই কাজও অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ । কোথাও কোথাও আবার শৌচালয় নির্মাণের কোনও কাজই হয়নি । অথচ খাতায়-কলমে কাজ হয়েছে বলে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে । সেই টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত থেকে ।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ হাউলি বলেন, "আমার বাড়িতে শৌচালয় নেই । পঞ্চায়েতের লোকেরা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন । আমাকে বলে গিয়েছিল, এক হাজার টাকা দিলে সরকারি বরাদ্দের টাকা দ্রুত অ্যাকাউন্টে ঢুকবে । ওদের কথামতো ঘর থেকে এক হাজার টাকা কাটমানি হিসেবে আমি ওঁদের দিই । কিন্তু, শৌচালয় নির্মাণের বরাদ্দকৃত টাকা আজও ঢোকেনি আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে । বিডিও অফিসে আমি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি । কিন্তু এখনও তার কোনও সুরাহা হয়নি ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে অপর ভুক্তভোগী,স্থানীয় বাসিন্দা মেহেরুন্নেসা বিবির গলাতেও । তাঁর কথায়, "বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় সরকারি প্রকল্পে শৌচালয় পাওয়ার আশায় আমি আবেদন করেছিলাম । বিডিও অফিসে গিয়ে উপভোক্তাদের তালিকায় আমার নাম আছে,তা দেখেও এসেছিলাম । কিন্তু আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি । কয়েক মাস পরে বিডিও অফিসে গিয়ে জানতে পারি, আমার বরাদ্দ টাকা নাকি তুলে নেওয়া হয়েছে । কে, কীভাবে আমার বরাদ্দ টাকা তুলে নিল, তা জানি না ।"
এ দিকে, শৌচালয় নির্মাণে পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এই নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির । বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক পলাশ সরকার বলেন, "শৌচালয় নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে,এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই । তৃণমূল দলটাই তো দুর্নীতিগ্রস্ত দল । সাধারণ মানুষের করের টাকা লুঠ করবে, এটাই তো স্বাভাবিক । তৃণমূল যতদিন এ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এই ট্রাডিশন চলবে ।"
যদিও, শৌচালয় নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রোজিনা খাতুন বলেন, "উপভোক্তাদের কেউ এখনও আমার কাছে কোনও অভিযোগ করেননি । অভিযোগ এলে আমি নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখব । প্রয়োজনে বিডিওর কাছে তদন্তের আবেদন জানাব ।"