শক্তিগড়, 21 জুলাই: একুশে জুলাই ধর্মতলা যাওয়ার সময় কিংবা ফেরার পথে শক্তিগড়ে নেমে ল্যাংচা কিনছেন তাহলে সাবধান! বেশিরভাগ দোকানেই ল্যাংচা ভেজে রাখা হয়েছে দিন পনেরো কিংবা মাস খানেক আগে। যার বেশিরভাগ মিষ্টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে! ফলত সেখানে আরশোলা কিংবা মাছি ভনভন করছে। সেই দৃশ্য দেখে অবাক খোদ জেলা স্বাস্থ্য ও খাদ্য দফতর থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন।
শনিবার তাঁরা বিভিন্ন দোকানের হেঁশেলে অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করে প্রায় তিন কুইন্টাল ল্যাংচা। সেই সমস্ত নষ্ট হয়ে যাওয়া ল্যাংচা পুঁতে দেওয়া হয়েছে মাটির নীচে ৷ এদিকে এই ঘটনার জেরে প্রশাসনের উপরে বেজায় চটেছেন শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
- 21 জুলাই ধর্মতলায় শহিদ সমাবেশে যোগ দিতে শক্তিগড় সংলগ্ন জাতীয় সড়ক দিয়ে দুই বর্ধমান জেলা, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকরা যোগ দিতে যান। ফলে যাতায়াতের পথে শক্তিগড় ল্যাংচা হাবের একাধিক দোকানে মানুষের তিলধারণের জায়গা থাকে না। চাহিদার কথা মাথায় রেখে দিন পনেরো এমনকী এক মাস আগেই শুরু হয়েছে ল্যাংচা ভাজার কাজ। সেই ল্যাংচা যে হেঁশেলে ভাজা হয় সেখানকার পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর।
- ইতিউতি আরশোলা, পোকামাকড় চলছে। মাছি ভনভন করছে। এতদিন আগে থেকে ল্যাংচা ভেজে রাখায় বেশিরভাগ ল্যাংচায় ছত্রাক জমেছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও শক্তিগড় থানার পুলিশ-সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা ব্যবসায়ীদের দোকান ও হেঁশেলে অভিযান চালান। তারপরই চক্ষু চড়কগাছ! সেই মিষ্টি পেটে গেলেই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর যেহেতু অধিকাংশই বাইরের ক্রেতা তাই মিষ্টি খারাপ হলেও কেউ আর অভিযোগ জানাতে পারবে না। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলে, এমনটাই অভিযোগ।
ল্যাংচা ব্যবসায়ী বাসেদ মণ্ডল বলেন, "21 জুলাইয়ের জন্য এত পরিমাণ ল্যাংচা বিক্রি হয় যে সেই মিষ্টি একদিন আগেই ভেজে রেখে দিতে হয়। একদিনে রসে ডুবিয়ে বিক্রি করা হয়। অথচ হঠাৎ করেই খবর পাচ্ছি আমাদের একাধিক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশ তল্লাশি চালায়। বেআইনি কাজ করছে প্রশাসন। প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমরা পথে নামব ৷" ব্যবসায়ী প্রভাত ঝা বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীরা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব। প্রশাসন অত্যাচার করছে।"
জেলা উপস্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "শক্তিগড়ে ল্যাংচার গুণগত মান খতিয়ে দেখা হয়। দেখা যায় দু-একটা দোকান বাদ দিয়ে বাকি দোকানগুলোর হাল খুব খারাপ। যেখানে ল্যাংচা তৈরি হয় সেই কিচেনের অবস্থা চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর। ঘর পরিষ্কার হয় না। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরশোলা, পোকামাকড়। সবচেয়ে বড় কথা কুইন্টাল-কুইন্টাল ল্যাংচা ভেজে প্রায় মাস খানেক ধরে রেখে দেওয়া হয়েছে। 21 জুলাই সেই ল্যাংচা বিক্রি করা হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, যাঁরা ল্যাংচা কিনে নিয়ে যাবেন তাঁরা কেউ আর অভিযোগ জানাতে আসবেন না।"
তিনি আরও বলেন, "গোডাউনে রেখে দেওয়া ভাজা ল্যাংচায় ফাংগাস পড়ে গিয়েছে। সেই ল্যাংচা খেলে অবধারিত মানুষ অসুস্থ হবে। ফলে প্রায় তিন কুইন্টাল ল্যাংচা বাজেয়াপ্ত করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ল্যাংচা তৈরি করেন তাঁদের সংগঠনকে একাধিকবার ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করেছে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হল। শক্তিগড়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করব না।"