কলকাতা, 4 জুন: 2021-এর লোকসভা নির্বাচনে টানা তিন মাস রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করেছেন তিনি। নিজে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হলেও প্রত্যেক প্রার্থীর হয়ে ঘুরে ঘুরে প্রচার করেছেন তিনি। নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে শেষ বেলায় প্রচারে গিয়েছেন মাত্র দুই একটি মিছিল আর জনসভা ছাড়া সেখানে মনোননিবেশ করতে পারেননি ৷ তবে মানুষ তাঁকে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করেছে। মঙ্গলবার যখন লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হল তখন দেখা গেল গোটা দেশে রেকর্ড মার্জিনে জিতে সংসদ হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমরা আরামবাগের কথা আলোচনা করলেই অনিল বসুর নাম আলোচনা করি। কারণ 2004 সালে সেই লোকসভা আসনটি 5 লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে রেকর্ড করেছিলেন এই সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। 2024-এ মোদি বনাম দিদির লড়াইয়ে দিদির সেনাপতি অভিষেককেই মানুষ দু'হাত খুলে আশীর্বাদ করেছেন। যার ফলে রেকর্ড 7 লাখ 7 হাজার 360 ভোটে জয়ী হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রচারে বারবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, "বাংলার 42টি আসন এবং দেশের 543টি আসনের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার জয়ের ব্যবধানে এক নম্বরে থাকবে। আর ফলে প্রকাশের পর সেটাই দেখা গেল। গোটা দেশের মধ্যে পহেলা নম্বরে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি। এক্ষেত্রে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি পেলেন মাত্র 3 লাখ 36 হাজার 68 । সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর-রহমান পেলেন 86 হাজার 507। আর আইএসএফ প্রার্থী মজনু নস্কর পেলেন 21 হাজার 109 ভোট।
এদিন ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহল বলছে এই বিপুল জয় মমতা যদি প্রাণভোমরা হয় অভিষেক প্রধান সেনাপতি। সেনাপতির কাজ শুধু দক্ষ ভাবে সামলালেন না, বুঝিয়ে দিলেন গোটা দেশে ডায়মন্ড হারবার তৃণমূলের গড়। আজ নির্বাচনের ফলাফল দেখে যতটা সহজ সাবলীল মনে হচ্ছে গোটা পথটা কিন্তু তেমন ছিল না। যারা তৃণমূল কংগ্রেসকে খুব কাছ থেকে জানেন তারা ভালোভাবেই জানতেন নতুন পুরনো দ্বন্দ্বে কীভাবে একটা সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাম পর্যন্ত জড়িয়ে গিয়েছিল।
একটা সময় নিজে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিষেক নিজেই জানিয়ে ছিলেন নিজের লোকসভা কেন্দ্রেই নিজেকে বেঁধে রাখতে চান তিনি। তবে দলটাকে যে দায়িত্ব দেবেন তিনি তার অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। যদিও এরপরে এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কম লেখালেখি হয়নি। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণা হতেই অভিষেককে দেখা যায় যথারীতি দলের নির্বাচনী প্রচারের বাগডোর নিজের হাতে তুলে নেন। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারের মুখ যেমন ছিলেন মমতা অন্যদিকে ছিলেন অভিষেক।
গত তিন মাস ধরে কুচবিহার থেকে কাকদ্বীপ প্রচার সভা করেছেন। দিনের শেষে নিজের কেন্দ্রে সেভাবে সময় দিতে পারেননি। কিন্তু মানুষ তার উপর আস্থা রেখেছে। আর তাই এই জয়ের পর মুখে নয়, রেজাল্টে জবাব দিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহল বলে দিনের শেষে 'যো জিতা ওহি সিকন্দর' ৷