সুন্দরবন, 16 ফেব্রুয়ারি: ফের একবার বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালেন এক মৎস্যজীবী ৷ বৃহস্পতিবার রাতে কুলতলির কাটামারি গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ সরদা এবং তাঁর দুই সঙ্গী নয়াবাঁকিতে নদী চরে কাঁকড়া ধরছিলেন ৷ সেই সময় হঠাৎই জঙ্গলের ভিতর থেকে প্রদীপ সরদারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণ রায় ৷ তাঁকে টেনে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে যায় বাঘটি ৷ তাঁর বাকি দুই সঙ্গী বাঘের সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে প্রদীর সরদারকে উদ্ধার করেন ৷ কিন্তু, তাঁকে বাঁচানো যায়নি ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, দুই সঙ্গীর সঙ্গে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে নদীতে গিয়েছিলেন প্রদীপ সরদার (36) ৷ তিনজন মৎস্যজীবী নয়াবাঁকি জঙ্গলের চরে কাঁকড়া ধরছিলেন ৷ সেই সময়ই বাঘটি ঝোপের আড়াল থেকে প্রদীপের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ তাঁর ঘাড়ে কামড় বসায় বাঘটি ৷ এরপর তাঁকে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে যায় ৷ যদিও সঙ্গীরা লাঠি ও বৈঠা নিয়ে গিয়ে বাঘটিকে তাড়া করলে, প্রদীপকে ফেলে সে পালায় ৷ বাকি দুই মৎস্যজীবী জানিয়েছেন, প্রদীপকে উদ্ধার করা হলেও তাঁর দেহে কোনও প্রাণ ছিল না ৷
প্রদীপ সরদারের দেহ গ্রাম নিয়ে আসার পর পুলিশে ও বন দফতরে খবর দেওয়া হয় ৷ পুলিশ প্রদীপ সরদারের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে ৷ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন প্রদীপ ৷ তাঁর মৃত্যুতে দিশাহারা সরদার পরিবার ৷ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা ৷ উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে একই ঘটনা ঘটেছিল গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকায় ৷ নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন এক মৎস্যজীবী ৷ খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরার সময় ঘাড়ের উপর হামলে পড়ে একটি বাঘ ৷ সেখানেও ওই ব্যক্তিকে বাঘ জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ৷
এ দিনের ঘটনা নিয়ে প্রদীপ সরদারের সঙ্গী আশু সরদার বলেন, "আমরা 3 জন গিয়েছিলাম কাটামারি থেকে কাঁকড়া ধরতে ৷ জাল তুলতে গিয়ে প্রদীপকে বাঘ টেনে নিয়ে চলে যায় ৷ এরপর আমরা কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না । আমরা ছুটে যেতেই দেখি বাঘটি প্রদীপের দেহটা ফেলে পালিয়েছে ৷ আমরা প্রদীপের দেহ উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসি ৷" প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে ৷ এ নিয়ে প্রশাসনের তরফে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হয় ৷ কিন্তু, অর্থ পেটের টানে ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের ৷
আরও পড়ুন: