কলকাতা, 5 অগস্ট: বাংলাদেশের অশান্তির জেরে পণ্য পরিবহণ করতে গিয়ে লালমণিরহাটের বুড়িমারি স্থলবন্দরে আটকে পড়েছেন প্রায় 200 জন ভারতীয় ট্রাকচালক । তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানাল ট্রাকচালকদের সংগঠন ।
বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা অশান্তি আজ চরম রূপ নিয়েছে ৷ শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়ে সে দেশের শাসন এখন সেনাবাহিনীর হাতে ৷ আর এই পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা । ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ট্রাকে পাথর বোঝাই করে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার পর ওখানেই গত 1 অগস্ট থেকে লালমণিরহাটের বুড়িমারি স্থলবন্দরে আটকে রয়েছেন তাঁরা ।
বাংলাদেশের অশান্তির জেরে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি ও রফতানি । তারপর বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে আবারও দুই পড়শি দেশের মধ্যে শুরু হয় পণ্য পরিবহণ । সেইমতো আবারও বাংলার চ্যাংড়াবান্ধা থেকে পণ্য পরিবহণ করতে গিয়ে বাংলাদেশেই আটকে পড়েন ট্রাকচালকরা । এদিকে, আজ থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ।
ইটিভি ভারত আটকে থাকা চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান যে, আপাতত তাঁরা বুড়িমারিতে আটকে রয়েছেন । বাংলাদেশের বুড়িমারি স্থলবন্দরে সেদিনই পণ্য খালাস করে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁদের । কিন্তু তাঁরা ওখানেই আটকে যান । বুড়িমারিতে ট্রাকে বসেই এখন তাঁদের দিন কাটছে ।
আটকে থাকা এক ট্রাকচালক হামিদুল ইসলাম জানান যে, "বুড়িমারি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা মাত্র এক কিলোমিটার দুরত্বে ৷ ওপার থেকে ভারতের গেটও দেখা যাচ্ছে কিন্তু যাওয়া যাচ্ছে না । ট্রাকে যা শুকনো খাবারদাবার ছিল সবাই মিলে সেই খেয়ে ক'টাদিন কাটিয়েছি ৷ কিন্তু সেইসব খাবারও এখন শেষ । না-খেয়ে রয়েছি আমরা । দোকানপাট বন্ধ । আমাদের কাছে বাড়তি পোশাকও নেই, এক কাপড়ে রয়েছি । আমরা অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি । জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারব ।"
আর এক ট্রাকচালক টুন কুমার রায় জানান, "আমরা যেখানে আটকে রয়েছি, সেখানেও দফায় দফায় অশান্তি ছড়াচ্ছে । আমরা যে পার্কিংয়ে রয়েছি, সেখানেও বিক্ষোভ চলছে । আশপাশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে । এই পার্কিংয়ের যাঁরা নিরাপত্তারক্ষী বা অন্যান্য আধিকারিক রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেও কোনও লাভ হল না ।"
আর এক চালক মনসুর আলি জানান, "এখানে কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা যদি চাই ভারতে চলে যেতে পারি । কিন্তু আমরা কী করে যাব ? ভারত সরকার বা যে এজেন্সি আমাদের কাজ দিয়ে এখানে পাঠায়, তাঁদের থেকে আমরা এখনও কোনওরকম বার্তা পাইনি ।"
চ্যাংড়াবান্ধা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ আব্দুল সামাদ বলেন, "সমস্ত প্রশাসনিক ও সরকারি নিয়ম মেনেই ওই পণ্যবাহী ট্রাকগুলি বাংলাদেশে গিয়েছিল ৷ এর মধ্যে আবারও ওপার বাংলায় অশান্তি শুরু হওয়ার জেরে চালকরা ওখানেই আটকে পড়েছেন । বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ওখানে পণ্য পরিবহণ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ট্রাকচালকরা । তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চরম মানসিক যন্ত্রণা ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন । তাই রাজ্যে পরিবহণ দফতরের কাছে আমদের আবেদন যে, বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে ওই 200 জন চালককে দ্রুত ভারতে ফিরিয়ে আমার ব্যবস্থা করা হোক ।"
অন্যদিকে, ইটিভি ভারতের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি জানিয়ে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়টি দ্রুত দেখবেন বলে আশ্বাস দেন ।