হায়দরাবাদ, 30 জুন: রাহুল শরদ দ্রাবিড় ৷ মিস্টার ডিপেন্ডেবল ৷ যার জমাটি ডিফেন্সে ভর করে বহু ম্যাচে বৈতরণী পেরিয়েছে টিম ইন্ডিয়া ৷ দেশকে চতুর্থ বিশ্বকাপ দিয়ে কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ৷ যেই বিশ্বকাপে শুধু দেশেরই নয়, তাঁরও শাপমুক্তি হয়েছে ৷ শান্ত, নিপাট ভদ্রলোকের বিশ্বকাপ হাতে উচ্ছ্বাস যেমন অপরিচিত, সেরকমই ইঙ্গিতবহও ৷
সালটা 2007 ৷ মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে প্রথম টি-20 বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত ৷ যার কয়েকমাস আগেই ওডিআই বিশ্বকাপে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘মেন ইন ব্লু’ ৷ রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ৷ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে 60 রানের ইনিংস বাদে অধিনায়ক নিজেও ব্যাট বিশেষ কিছু করতে পারেননি ৷ 2003 বিশ্বকাপেও ফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৷ 28 বছর বাদে 2011 বিশ্বকাপ এসেছিল ভারতে ৷ যদিও সেই দলে জায়গা হয়নি ‘দ্য ওয়ালে’র ৷ 5 মাস পর ওডিআই ক্রিকেট থেকেই অবসর নেন জ্যামি ৷ পরিসংখ্যান বলছে, বর্ণময় ক্রিকেটারের কেরিয়ারে 2002 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ছাড়া তেমন সাফল্য নেই ৷
𝗗𝗿𝗲𝗮𝗺 𝗙𝗶𝗻𝗶𝘀𝗵! ☺️ 🏆
— BCCI (@BCCI) June 29, 2024
Signing off in a legendary fashion! 🫡 🫡
Congratulations to #TeamIndia Head Coach Rahul Dravid on an incredible #T20WorldCup Campaign 👏👏#SAvIND pic.twitter.com/GMO216VuXy
অবসরের কাজ শুরু করেন তৃণমূল স্তর থেকে ক্রিকেটার তুলে আনার ৷ এনসিএ’র দায়িত্বে ছিলেন ৷ অনুর্ধ-19 দলের কোচ ছিলেন, জিতেছেন 2018 বিশ্বকাপও ৷ তাঁকে সিনিয়র দলের হেডস্যরের চেয়ারে বসায় বিসিসিআই ৷ দায়িত্ব নিয়েই 2023 ওডিআই বিশ্বকাপ, 2024 টি-20 বিশ্বকাপের লক্ষ্যে ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেন ৷ 2023 বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছয় ভারত ৷ কিন্তু ফের বাধ সাধে সেই অজিরা ৷ মোতেরার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রানার-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টিম ইন্ডিয়া ৷ মনে হয়েছিল, ‘পরাজিত নায়ক’ হয়েই থেকে যাবেন জ্যামি ৷ ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য তাঁকে মনে রাখবে ক্রিকেট-দুনিয়া, দলগত সাফল্যের জন্য নয় ৷
কিন্তু, বিধাতা অন্যকিছু লিখে রেখেছিলেন ‘দ্য ওয়াল’-এর জন্য ৷ বাইশ গজে তাঁকে টপকে উইকেট নেওয়া বিশ্বের তাবড় বোলারদেরও দুঃসাধ্য ছিল ৷ রোহিতরা বলছেন, কোচ হিসেবেও তাঁর মনোবল টলানো অসাধ্য ৷ ওডিআই বিশ্বকাপ হারের দিনই টি-20 বিশ্বকাপের কথা ভাবতে শুরু করেন রাহুল ৷ দ্রাবিড়ীয় ‘সভ্যতার’ ছাঁচে পড়ে মনোভাব বদলে গিয়েছে দলের খেলোয়াড়দেরও ৷ ফাইনাল যখন প্রায় পকেটে পুরে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেখান থেকে ম্যাচে ফেরে টিম ইন্ডিয়া ৷ যেমনভাবে প্রায় হেরে যাওয়া বহু ম্যাচ ইস্পাত কঠিন মানসিকতার জেরে উৎরে দিয়েছেন তাঁদের হেডস্যর ৷
যিনি অনেকটা রামায়ণের উর্মিলার মতো ৷ রাম-লক্ষ্মণ-সীতা বনবাসে থাকাকালীন অযোধ্যায় একাকী দিন কাটিয়েছেন লক্ষ্মণ-পত্নী ৷ অথচ তিনিই প্রবলভাবে উপেক্ষিত, তাঁর ত্যাগের কথা পাদপ্রদীপের আলোয় কখনই আসেনি ৷ তেমনই দিনের পর দিন বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিলেন তিনি, রাহুল শরদ দ্রাবিড় ৷ সচিন-সৌরভকে টপকে যিনি কখনও মূল কক্ষপথের নিয়মিত সদস্য হননি ৷ কিন্তু অক্লান্তভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন ৷ ফলে বিশ্বকাপ হাতে তাঁর উচ্ছ্বাস শাপমুক্তির প্রতীক, যা ভীষণভাবে ইঙ্গিতবহ, ভীষণভাবে !