কলকাতা, 17 মে: দু'জনেই দিল্লির। দু'জনে বন্ধু। দু'জনে দুই ভিন্ন খেলায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও মুখোমুখি হলে সতীর্থ বলে ভ্রম হতে পারে। দুই বন্ধু আড্ডায় বসলে ক্রিকেট ও ফুটবল ছাপিয়ে অনেক কিছু বিষয় হিসেবে সামনে আসে, যার একটাই ক্যাপশন, 'দিল-ই-ইয়ারি'। কথা হচ্ছে সুনীল ছেত্রী এবং বিরাট কোহলির ৷ এর মধ্যে প্রথমজন দেশের হয়ে আর খেলবেন না জানিয়েছেন বৃহস্পতির সকালে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিয়ো পোস্ট করে দেশের জার্সিতে আগামী 6 জুন কুয়েতের বিরুদ্ধে অন্তিম ম্যাচ খেলার কথা বলেছেন। ভারতীয় ফুটবলের পোস্টার বয়ের এই ঘোষণার সোশাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়ার সুনামি চলছে।
এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবল দল ইগর স্টিমাচের কোচিংয়ে ভুবনেশ্বরে শিবির করতে ব্যস্ত। সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলন করে সুনীল জানিয়েছেন বিরাট কোহলির সঙ্গে আলোচনা করেই অবসরের সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। 94টি আন্তর্জাতিক গোলের মালিক বলেন, "অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেছি। কারণ আমরা ভালো বন্ধু, একে-অপরকে ভালো বুঝি। তাই ওর সঙ্গে কথা বলি।"
19 বছরের লম্বা স্পেলে দেশের হয়ে 150 ম্যাচ। 39 বছরের যুবা এখনও দলের এক নম্বর গোল শিকারি। তা সত্ত্বেও কেন এই সিদ্ধান্ত? কখনই বা মনে হয়েছিল, আলবিদা জানানোর 'এটাই সঠিক সময়?' সুনীল বলছেন, "আফগানিস্তান ম্যাচের দিন দশেক পর জাতীয় দল থেকে অবসরের ভাবনা প্রথম মাথায় আসে। তবে শারীরিক কারণে অবসর নিচ্ছি না। শারীরিকভাবে এখনও আমি চূড়ান্ত ফিট। তবে ফুটবলে শরীরটাই সব নয়। বয়স হলে অনেক প্রাধান্যের তালিকা বদলে যায়। মনে হয়, এবার থামতে হবে। জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা মিস করব। 19 বছর, 150-র বেশি ম্যাচ। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া। রেনেডি, বাইচুং থেকে ছাংতে, সুরেশ- এদের সঙ্গে খেলা মিস করব। তবে এবার থামতে হবে।"
আর মাত্র ছ'টি গোল হলেই গোলের সেঞ্চুরি হতে পারত। আর্ন্তজাতিক ফুটবলে এই নজির যথেষ্ট মান্যতা পায়। ভারতীয় ফুটবলে দেশের হয়ে গোল এর সেঞ্চুরি তো অকল্পনীয়। ফলে এত কাছে এসে ছেড়ে দেওয়ার আক্ষেপ নেই? সুনীল বলেন, "100 গোলের কথা কখনও ভাবিনি। তাই সেটা না-করতে পারা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। বরং জাতীয় দলের হয়ে 19 বছরে 150 ম্যাচ খেলার খুশি আছে। সেটা ইউনিক কাজ। কিন্তু 100 গোল না-করতে পারার কোনও ভাবনা কখনও ছিল না ৷"
তিনি নিজে দিল্লির ছেলে হলেও ফুটবল শিক্ষার প্রকৃত পাঠ কলকাতাতেই। দুই প্রধান মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছেন। ডার্বিতে গোল রয়েছে। একাধিক ট্রফি জয়ের নায়ক হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে বেঙ্গালুরুতে থিতু হয়ে বেঙ্গালুরু এফসি'কে গড়ে তুলেছেন। তাঁকে বাহন করেই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও অবসরের জন্য শেষ ম্যাচের জায়গা বাছতে কলকাতাকে বাছলেন কেন? সেটা কি এই শহরের ফুটবল আবেগের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত।
নাকি শ্বশুড়বাড়ির শহরে শেষ ম্যাচ দেশের জন্য খেলে কলকাতার ফুটবল ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান? সুনীল বলছেন, "কুয়েত ম্যাচটা আয়োজনের জন্য কলকাতাই সেরা জায়গা। কারণ ম্যাচটা জিতলে আমাদের 2026 বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কলকাতার থেকে বেশি সমর্থন আমরা এদেশে কি আর পাব? তাই এই ম্যাচের জন্য কলকাতার থেকে ভালো জায়গা পেতাম না। 6 জুন 'ক্যাপ্টেন কলিং'। কলকাতা কি মাঠ ভরাবে। উত্তর বলবে সময়।"
আরও পড়ুন: