কলকাতা, 28 মে: এভাবেও ফিরে আসা যায়। কথাটা এখন দীপা কর্মকারের জন্য বললে মোটেই ভুল বলা হবে না। শনি এশিয়ান জিমন্যাস্টিক্সে সোনা দীপা কর্মকারের। 2016 অলিম্পিক্সে চতুর্থ হওয়ার পরবর্তী সময়টা মোটেই ভালো যায়নি ত্রিপুরার বাঙালি জিমন্যাস্টের। চোট-আঘাত, নির্বাসনের ধাক্কায় সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও পারেননি। তবুও হাল ছাড়েননি দীপা। তাই হোয়াটস অ্যাপ কলে উজবেকিস্তান থেকে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় দীপা জানালেন, এই পদক আমার জেদের ফল ৷
- এশিয়ান জিমন্যাস্ট প্রতিযোগিতায় দীপার হাত ধরে ভারতের প্রথম সোনা। ইতিহাস গড়েও বাঙালি তরুণী নির্লিপ্ত। আনন্দ থাকলেও তা বাঁধন ছাড়া নয়। বরং আগামীতে আরও কিছু প্রমাণের লক্ষ্যে, আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক্সে অংশ নিতে পারবেন না ভারতের কোনও জিমন্যাস্ট। সেই অবস্থায় লক্ষ্যে অবিচল থাকাই কঠিন।
দীপা বলেন, "আমি নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। যাতে অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করা যায়। 50 স্কোর করতে হত, আমি 46 মতো করেছি। ফলে লক্ষ্যপূরণ হল না। এই আক্ষেপটা রয়ে যাবে। আসলে আমাকে এবার যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে একটু সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যেতে পারলে হয়তো হয়ে যেত। ওখানে অলিম্পিক্সে ছাড়পত্র পাওয়ার লড়াইটা তুলনায় সহজ। সবক'টা বিশ্বকাপেও নামতে পারলাম না। না-হলে হয়তো প্যারিস নিয়ে আক্ষেপ করতে হত না।"
- অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে না-পারলেও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় যথেষ্ট কৃতিত্বের । ঐতিহাসিকও। সেই তৃপ্তির মধ্যেই দীপা সামনের পথটা সাজাতে চাইছেন।
দীপার আরও সংযোজন, "আসলে যে কোনও সাফল্যই প্রেরণা দেয়। একটা ভালোলাগা থাকে। তাই এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা পেয়ে ভালো লাগছে। মাঝের সময়টা চিন্তা করলে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। কখনও চোট, তার মধ্যে আবার একটা লম্বা সময় বাইরে থাকতে হয়েছে এমন একটা কাজের শাস্তির জন্য, যে কাজটা আমি করিনি। এই পদকটা আমার খুব দরকার ছিল। সব অপপ্রচার, সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য।"
- ডোপিংয়ের জন্য শাস্তির কবলে পড়তে হয়েছিল। নির্বাসিত হতে হয়েছিল দীপাকে। যা তিনি মিথ্যা অভিযোগ বলে মনে করেন। ওই পর্বটা যে এখনও দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে তা কথা বললেই আঁচ করা যায়।
বছর তিরিশের দীপার উত্তর, "ওটা দুঃস্বপ্ন। জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়। সেটা আমি কাটিয়ে এসেছি ঠিকই। কিন্তু ভুলতে চাই। আর তার জন্য এই পারফরম্যান্সটা দরকার ছিল। একটা জেদ চেপে গিয়েছিল। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ছটফট করছিলাম। এই সোনাটা জেদেরই ফল। আমি পেরেছি আমার দেশ এবং কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর মাথা উঁচু করতে। তৃপ্তি পাচ্ছি । ভালো লাগছে ৷"
- বাঙালি জিমন্যাস্টের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে প্রদুনোভা ভল্টের নাম। কিন্তু চোটের পরে প্রদুনোভা ভল্ট আর দেন না দীপা। সুকুরা 720 ভল্ট দেন। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেটা দিয়েই বাজিমাত।
বাঙালি জিমন্যাস্ট আরও বলেন, "দু'বার এসিএলের অস্ত্রোপচারের পর আমাকে ভল্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুব সাবধানে পদক্ষেপ করতে হয়। আমি এখানে প্রথমে সুকুরা 720 ডিগ্রি ভল্টটা দিয়েছি। ওটা ব্যাকের পার্টে ছিল। আর ফ্রন্টের জন্য বেছে নিয়েছিলাম হ্যান্ডস্প্রিং স্ট্রেটবডি সামারসল্ট 360 ডিগ্রি।"
প্যারিস অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র না-পেলেও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সোনার পদক যে অক্সিজেন জোগালো তা মানছেন। তাই সব ভুলে সামনের কয়েকটা দিন আনন্দ করতে চান। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে চান সোনার মেয়ে।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক সোনা জয় বঙ্গতনয়ার, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেরার সেরা দীপা