কলকাতা, 13 এপ্রিল: দেশজুড়ে নির্বাচনী উৎসবের আবহ ৷ কলকাতা ময়দানেও কি নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ল ? বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কেউ মুখ খুলছে না । তবে, বাতাসে নির্বাচনের গন্ধ হালকা হলেও বইতে শুরু করেছে ৷ 2025-এর মার্চে ভোট হওয়ার কথা সবুজ-মেরুন ক্লাবে ৷ তার আগে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদে সরব 'উত্তরের মোহনবাগান' ফ্যান ক্লাব ৷ প্রথমে ক্লাবের দীর্ঘদিনের কর্মী, মালি নুরিকে হঠাৎ বিদায় দেওয়া ৷ এবার বারপুজোর আমন্ত্রণপত্রের বয়ান, 'উত্তরের মোহনবাগান' ফ্যান ক্লাবের উষ্মার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
তাদের অভিযোগ মোহনবাগানের বারপুজোর আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে, এবারের বারপুজো তৃতীয় বর্ষে পা-দিচ্ছে ৷ এই 'তৃতীয় বছর' লেখাটাই যাবতীয় উষ্মার মূলে ৷ উত্তরের মোহনবাগানের দাবি, "মাত্র তিন বছর ধরে বারপুজো হচ্ছে, এমনটা নয় ৷ তিন বছর আগে থেকে এইদিন (পয়লা বৈশাখ) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ৷ তা হলে আমন্ত্রণপত্রে এমনটা লেখা হল কেন ?"
উত্তরের মোহনবাগান ফ্যান ক্লাবের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "নববর্ষের প্রথম প্রভাতে বারপুজো চিরকালীন মোহনবাগানী সংস্কৃতি তথা বৃহত্তর অর্থে ময়দানী সংস্কৃতি ৷ এই উৎসব চিরদিন খেলোয়াড়, সভ্য-সমর্থক এবং কর্মকর্তাদের মিলনোৎসব রূপেই পালিত হয়ে এসেছে ৷ এক্ষেত্রে ভিন্নভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের আড়ম্বর না থাকলেও, সর্বস্তরের ক্লাবদরদীদের মুখরিত অংশগ্রহণে আবেগের অভাব ছিল না ৷ সেই ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবেগকে নস্যাৎ করার অধিকার যে কোন কমিটির পক্ষেই ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা ৷ অথচ আমরা দেখলাম আগামী পয়লা বৈশাখ মোহনবাগান ক্লাবের বারপুজার আমন্ত্রণপত্রে এ বছরের উৎসবকে তৃতীয় বর্ষ বলে উল্লেখ করে মোহনবাগানের বর্তমান কমিটি বুঝিয়ে দিল, তাদের কাছে 135 বছরের প্রাচীন মোহনবাগানী ঐতিহ্য সম্পূর্ণ অবজ্ঞীয় ৷ নিজেদের ক্লাব পরিচালনার তিন বছরের আগের মোহনবাগানী সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে সীমাহীন ঔদ্ধত্যের দেখিয়ে এরা বোঝাতে চায় 135 নয় মোহনবাগানী ঐতিহ্যের বয়স মাত্র 3 বছর ৷"
বারপুজোর যে আমন্ত্রণপত্র নিয়ে এত বিতর্ক ৷ তার বয়ানে কী লেখা রয়েছে ? মোহনবাগানের আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, "আগামী পয়লা বৈশাখ 1431 (ইং 14 এপ্রিল 2024) রবিবার সকাল 9টায় ক্লাবমাঠে ঐতিহ্যবিজড়িত বারপুজো অনুষ্ঠিত হবে ৷"
এরপরের অংশ বলা হয়েছে, "সেই সঙ্গে বাংলা নববর্ষকে আনন্দমুখর করে তোলার জন্য আমাদের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত ক্লাবে সদস্য সমর্থকদের তৃতীয় বার্ষিক প্রভাতী বর্ষবরণ মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে ৷" তবে 'উত্তরের মোহনবাগান' ফ্যান ক্লাবের অভিযোগ, ক্লাব কর্তৃপক্ষ বারপুজোকে 'তৃতীয় বর্ষ' বলে উল্লেখ করেছে ৷ যেখানে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে, মোহনবাগান ক্লাবে বারপুজোর দিন আলাদাভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কোনও আয়োজন আগে ছিল না ৷ যা গত দু’বছর ধরে চলে আসছে ৷
এই প্রতিবাদপত্রে মোহনবাগান ক্লাবে দীর্ঘ সময় মালির কাজ করা নুরি, যিনি সদস্য ও সমর্থকদের কাছে 'নুরি দা' হিসেবে পরিচিত ৷ তাঁকে সম্প্রতি ক্লাবের বাগানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদও জানিয়েছে 'উত্তরের মোহনবাগান' ফ্যান ক্লাব ৷
ওই ফ্যান ক্লাব এনিয়ে জানিয়েছে, "গত তিন বছরে আমরা কোনও প্রতিবাদ তো করিনি ? এখন করছি । নুরি দার সঙ্গে যা হল, তাঁকে তো কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না ৷ চৈত্র মাসে কোনও বাঙালির বাড়ি থেকে কুকুর-বিড়ালকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয় না ৷ সেখানে এমন একজন কর্মীকে মাত্র কয়েকটা টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হল ? আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি নুরিদার পাশে দাঁড়াতে ৷ দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর সদস্য সমর্থক সাহায্য পাঠাচ্ছেন ৷ এটাই আমাদের সাফল্য ৷" তাই সবুজ-মেরুন ক্লাব তাঁবুতে সাজ-সাজ রব, আলো সানাইয়ের মিশেলের আড়ালে বইছে নির্বাচনের সলতে পাকানোর কাজ ৷
আরও পড়ুন: