ETV Bharat / sports

স্পট বোলিং ও আমলকির গুণেই ভারতের জার্সিতে উজ্জ্বল আকাশ দীপ, পড়ুন বিস্তারিত - আকাশ দীপ

Aakash Deep in India vs England: টেনিস বলে গায়ের জোরে বল করা থেকে, ডিউসে দ্রুতগতিতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং ৷ বাংলার আকাশ দীপের উত্থানের কাহিনী ইটিভি ভারত শুনল, তাঁর তিন গুরুর কাছে ৷

Image Courtesy: BCCI X
Image Courtesy: BCCI X
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 23, 2024, 6:26 PM IST

প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত

কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি: গলি থেকে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে পৌঁছলেন বাংলা রঞ্জি দলের পেসার আকাশ দীপ ৷ রাঁচিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লালবলে প্রথমদিনেই আগুন ঝরালেন ৷ তাঁর ক্রিকেটের সফর যেকোনও হিট সিনেমার চিত্রনাট্যকে হারা মানাবে ৷ ভারতীয় 'এ' দলের হয়ে ভালো বল করে নজরে পড়েছিলেন ৷ এই সিরিজের শেষ তিন টেস্টে ভারতীয় সিনিয়র দলে ডাক পান ৷ অবশেষে জসপ্রীত বুমরার জায়গায় চতুর্থ টেস্টে একাদশে জায়গা পেলেন ৷

আসানসোলের ছেলে আকাশ দীপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন ৷ সেখান থেকে বাংলার অনূর্ধ্ব-23 শিবিরে খেলার সময় থেকে আরও বেশি পরিণত হয়েছেন তিনি ৷ তাঁকে গড়ে পিঠে আজকের ঝকঝকে পেসার তৈরি করার পিছনে ভূমিকা রয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লা, শিবশঙ্কর পাল এবং সৌরাশিস লাহিড়ীর ৷ ভারতীয় সিনিয়র দলের জার্সিতে 27 বছরের পেসারকে দীপের আলো প্রজ্বলিত করতে দেখে উচ্ছ্বসিত লক্ষ্মীরতন শুক্লা ৷

বাংলা দলের হেড কোচ বলছেন, "ক্লাব ক্রিকেটে আকাশদীপ ভালো খেলেছিল ৷ তারপর সৌরাশিসের অধীনে অনূর্ধ্ব-23 দলে খেলতে শুরু করে ৷ তারপর অনূর্ধ্ব-25 দলে খেলে ৷ আমি গতবছর থেকে বাংলা দলে একটা জিনিস শুরু করেছি, তা হল স্পট বোলিং ৷ মানে আপনি জোরে বল করবেন, একই সঙ্গে বলটা জায়গায় রাখবেন ৷ গতবছর থেকেই ওর পারফরম্যান্সটা সবার নজরে এসেছে ৷ গত মরশুমে রঞ্জি ট্রফিতে আকাশ দীপ 50টি উইকেট নিয়েছিল ৷"

ওই 50 উইকেটের পিছনেও ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনা ৷ লক্ষ্মী বলেন, "আমি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি এই ক্ষেত্রে ৷ শিবশঙ্কর পালকে নেটের পিছনে দাঁড় করিয়ে রাখতাম ৷ বাংলা দলের পুরো বোলিং ইউনিটের জন্যই এই স্পট বোলিং করিয়েছি ৷ মুকেশ, আকাশ দীপ, জয়সওয়াল, কাইফ, পোড়েল সবার জন্য এই স্পট বোলিং প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করেছিলাম ৷ স্পট বোলিংটা আকাশ দীপ দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে ৷ আমি ওকে বলেছিলাম ভারতীয় দলে ডাক পাবি ৷ আর সুযোগ পেলে থামিয়ে রাখা যাবে না ৷ আজ যে ধামাকা দেখতে পাচ্ছে সবাই, সেটা ওই প্র্যাকটিসের ফল ৷"

বাংলা রঞ্জি দলের কোচের মতে, "ওর এই সাফল্যের পেছনে শুধুমাত্র আমি নই ৷ পুরো কোচিং ব্রিগেড জড়িয়ে ৷ ফিজিও, ম্যাসিওরদের চেষ্টাও এর পিছনে রয়েছে ৷ সবাই মিলে ওকে গড়ে তোলার কাজ করেছে ৷" বলা হচ্ছে আকাশ দীপের এই ভালো বোলিংয়ের পেছনে আমলকির ভূমিকা রয়েছে ৷ তাঁকে আমলকি খেতে অভ্যস্ত করার পিছনেও কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার ভূমিকা রয়েছে ৷ কথাটা শুনেই হেসে ফেললেন ৷

তিনি বলেন, "শুধু আকাশদীপ নয়, বাংলা দলের সবার খাদ্যতালিকায় আমলকি আবশ্যিক করেছি ৷ আমলকির গুণ অসামান্য ৷ ভিটামিন সি রয়েছে ৷ চোট আঘাত লাগতে দেয় না ৷ পেশি গঠনে সাহায্য করে ৷ ক্লান্ত হতে দেয় না ৷ এই যে লম্বা স্পেলে বল করছে, তাতে এই খাদ্যগুণের ভূমিকা তো রয়েছে ৷"

বিহারের সাসারামের কাছে দেহরীতে আকাশ দীপের ছোটবেলা কেটেছে ৷ অর্থের অনটন, তাই বাবা তাঁকে উপার্জনের চেষ্টা করতে বলেছিলেন ৷ কিন্তু, আকাশ দীপ চাইতেন ক্রিকেট খেলতে ৷ তার জন্যই দুর্গাপুরে তাঁর এক কাকার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ৷ সেখানেই একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভরতি হন আকাশ ৷ কিছুদিন এইভাবে চলার পরে হঠাৎই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ ফলে ক্রিকেট ছাড়তে বাধ্য হন আকাশ দীপ ৷ এইভাবে বছর তিনেক চলার পর পিতৃহীন হন আকাশ ৷ মা ও দাদাকে নিয়ে চলছিল তাঁর জীবন ৷ কিন্তু, দুঃখ ছেড়ে যায়নি ৷ ফের ধাক্কা লাগে আকাশের জীবনে ৷ এবার দাদা মারা যান ৷

কিছুটা দিগভ্রষ্ট হয়ে পড়া আকাশ দীপের জীবন এবার শুরু হয় কলকাতায় ৷ টেনিস বলে পাড়ার টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াতে শুরু করেন তিনি ৷ অচিরেই নাম ছড়িয়ে পড়ে বলের গতির জন্য ৷ ততদিনে কলকাতা ময়দানে প্রথম ডিভিশনের ক্লাব ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে শুরু করেছিলেন ৷ সেখানেও নজর টানেন বলের গতিতে ৷ সময়টা 2016-17 মরশুম ৷ বাংলার অনূর্ধ্ব-23 দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সৌরাশিস লাহিড়ীকে ৷

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে, কোচ হিসেবে প্রথম দায়িত্ব তাঁর ৷ ভালো কিছু করার জন্য নতুন প্রতিভার সন্ধান করতে থাকেন ৷ সেইসময় তাঁর কাছে আসে আকাশ দীপের নাম ৷ সিএবির ইনডোরে আকাশ দীপকে ডেকে পাঠান সৌরাশিস ৷ তিনি বলেন, "কি গতিতে বল করছিল চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না ৷ কেউ খেলতে চাইছিল না, ভয় পাচ্ছিল ৷ সেইসময় বোলিংয়ের সঠিক খুটিনাটি জানা ছিল না আকাশ দীপের ৷ সেই থেকে গড়ে তোলার কাজ শুরু ৷ রণদেব বসুও প্রচুর পরিশ্রম করেছে ওকে তৈরি করতে ৷"

তবে, মাঝে চোটের জন্য ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ৷ সৌরশিস বলেন, "সব যখন ঠিক এগোচ্ছে, তখনই কোমরে স্ট্রেচ ফ্যাকচার হয় ৷ চিকিৎসকরা বলেন বোলিং করা যাবে না ৷ কিন্তু, চোট সারাতে নিয়মিত রিহ্যাব দরকার ৷ দল নিয়ে বাইরে গেলে সেই কাজে ফাঁক পড়বে ৷ চোট পাওয়া ক্রিকেটার তাই দলে নেই ৷ নির্বাচকরা দলের সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি নন ৷ এই সময় আমি দাদি সৌরভ গাঙ্গুলির দ্বারস্থ হই ৷ দাদি বলেন, 'তোর যখন আকাশদীপে আস্থা রয়েছে, মনে করছিস কিছু হবে প্রতিভা আছে তখন গো অ্যাহেড ৷' তারপর তো সবাই দেখছে ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আমাকে যখন ফোন করে বলল অভিষেক হচ্ছে, কিছু বলতে পারিনি ৷ আবেগের ধাক্কায় বিহ্বল হয় গিয়েছিলাম ৷ ফোন কেটে দুই মিনিট পরে ফোন করি ৷ আজও গুরুপূর্ণিমার দিনে আমাকে প্রণাম গুরুজি লিখে পাঠায় ৷"

ছাত্রের সাফল্যের উচ্ছ্বাসিত বাংলার আরেক কোচ শিবশঙ্কর পাল ৷ বলছেন, "গত তিনবছর ধরে ওকে গড়ে তুলতে আমি লক্ষ্মী খেটে গিয়েছি ৷ এখন ইনস্যুইং, আউটস্যুইং দু’টোই করাতে পারে ৷ আমরা গতবছর থেকে স্পট বোলিং প্র্যাকটিস করাচ্ছি ৷ তাতেও প্রচুর লাভ হয়েছে ৷ আকাশ দীপ খাটতে ভালোবাসে ৷ কখনও কোন কিছুতেই 'না' নেই ৷ ওর কাছে উইকেটের চরিত্র কোনও ব্যাপার নয় ৷ নির্দিষ্ট লাইনে বল করে যেতে পারে ৷ ছাত্রের সাফল্যে একটা তৃপ্তি তো থাকেই ৷ তাই ভীষণ খুশি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক আকাশ দীপের, শিকারের তালিকায় ক্রলি-ডাকেট-পোপ
  2. ধোনি-কোহলি দ্বৈরথ দিয়ে 22 মার্চ শুরু আইপিএল, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত সূচি
  3. রাঁচির পিচ দেখে হতবাক বেন স্টোকস, কী বললেন ব্রিটিশ অধিনায়ক

প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত

কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি: গলি থেকে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে পৌঁছলেন বাংলা রঞ্জি দলের পেসার আকাশ দীপ ৷ রাঁচিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লালবলে প্রথমদিনেই আগুন ঝরালেন ৷ তাঁর ক্রিকেটের সফর যেকোনও হিট সিনেমার চিত্রনাট্যকে হারা মানাবে ৷ ভারতীয় 'এ' দলের হয়ে ভালো বল করে নজরে পড়েছিলেন ৷ এই সিরিজের শেষ তিন টেস্টে ভারতীয় সিনিয়র দলে ডাক পান ৷ অবশেষে জসপ্রীত বুমরার জায়গায় চতুর্থ টেস্টে একাদশে জায়গা পেলেন ৷

আসানসোলের ছেলে আকাশ দীপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন ৷ সেখান থেকে বাংলার অনূর্ধ্ব-23 শিবিরে খেলার সময় থেকে আরও বেশি পরিণত হয়েছেন তিনি ৷ তাঁকে গড়ে পিঠে আজকের ঝকঝকে পেসার তৈরি করার পিছনে ভূমিকা রয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লা, শিবশঙ্কর পাল এবং সৌরাশিস লাহিড়ীর ৷ ভারতীয় সিনিয়র দলের জার্সিতে 27 বছরের পেসারকে দীপের আলো প্রজ্বলিত করতে দেখে উচ্ছ্বসিত লক্ষ্মীরতন শুক্লা ৷

বাংলা দলের হেড কোচ বলছেন, "ক্লাব ক্রিকেটে আকাশদীপ ভালো খেলেছিল ৷ তারপর সৌরাশিসের অধীনে অনূর্ধ্ব-23 দলে খেলতে শুরু করে ৷ তারপর অনূর্ধ্ব-25 দলে খেলে ৷ আমি গতবছর থেকে বাংলা দলে একটা জিনিস শুরু করেছি, তা হল স্পট বোলিং ৷ মানে আপনি জোরে বল করবেন, একই সঙ্গে বলটা জায়গায় রাখবেন ৷ গতবছর থেকেই ওর পারফরম্যান্সটা সবার নজরে এসেছে ৷ গত মরশুমে রঞ্জি ট্রফিতে আকাশ দীপ 50টি উইকেট নিয়েছিল ৷"

ওই 50 উইকেটের পিছনেও ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনা ৷ লক্ষ্মী বলেন, "আমি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি এই ক্ষেত্রে ৷ শিবশঙ্কর পালকে নেটের পিছনে দাঁড় করিয়ে রাখতাম ৷ বাংলা দলের পুরো বোলিং ইউনিটের জন্যই এই স্পট বোলিং করিয়েছি ৷ মুকেশ, আকাশ দীপ, জয়সওয়াল, কাইফ, পোড়েল সবার জন্য এই স্পট বোলিং প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করেছিলাম ৷ স্পট বোলিংটা আকাশ দীপ দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে ৷ আমি ওকে বলেছিলাম ভারতীয় দলে ডাক পাবি ৷ আর সুযোগ পেলে থামিয়ে রাখা যাবে না ৷ আজ যে ধামাকা দেখতে পাচ্ছে সবাই, সেটা ওই প্র্যাকটিসের ফল ৷"

বাংলা রঞ্জি দলের কোচের মতে, "ওর এই সাফল্যের পেছনে শুধুমাত্র আমি নই ৷ পুরো কোচিং ব্রিগেড জড়িয়ে ৷ ফিজিও, ম্যাসিওরদের চেষ্টাও এর পিছনে রয়েছে ৷ সবাই মিলে ওকে গড়ে তোলার কাজ করেছে ৷" বলা হচ্ছে আকাশ দীপের এই ভালো বোলিংয়ের পেছনে আমলকির ভূমিকা রয়েছে ৷ তাঁকে আমলকি খেতে অভ্যস্ত করার পিছনেও কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার ভূমিকা রয়েছে ৷ কথাটা শুনেই হেসে ফেললেন ৷

তিনি বলেন, "শুধু আকাশদীপ নয়, বাংলা দলের সবার খাদ্যতালিকায় আমলকি আবশ্যিক করেছি ৷ আমলকির গুণ অসামান্য ৷ ভিটামিন সি রয়েছে ৷ চোট আঘাত লাগতে দেয় না ৷ পেশি গঠনে সাহায্য করে ৷ ক্লান্ত হতে দেয় না ৷ এই যে লম্বা স্পেলে বল করছে, তাতে এই খাদ্যগুণের ভূমিকা তো রয়েছে ৷"

বিহারের সাসারামের কাছে দেহরীতে আকাশ দীপের ছোটবেলা কেটেছে ৷ অর্থের অনটন, তাই বাবা তাঁকে উপার্জনের চেষ্টা করতে বলেছিলেন ৷ কিন্তু, আকাশ দীপ চাইতেন ক্রিকেট খেলতে ৷ তার জন্যই দুর্গাপুরে তাঁর এক কাকার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ৷ সেখানেই একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভরতি হন আকাশ ৷ কিছুদিন এইভাবে চলার পরে হঠাৎই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ ফলে ক্রিকেট ছাড়তে বাধ্য হন আকাশ দীপ ৷ এইভাবে বছর তিনেক চলার পর পিতৃহীন হন আকাশ ৷ মা ও দাদাকে নিয়ে চলছিল তাঁর জীবন ৷ কিন্তু, দুঃখ ছেড়ে যায়নি ৷ ফের ধাক্কা লাগে আকাশের জীবনে ৷ এবার দাদা মারা যান ৷

কিছুটা দিগভ্রষ্ট হয়ে পড়া আকাশ দীপের জীবন এবার শুরু হয় কলকাতায় ৷ টেনিস বলে পাড়ার টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াতে শুরু করেন তিনি ৷ অচিরেই নাম ছড়িয়ে পড়ে বলের গতির জন্য ৷ ততদিনে কলকাতা ময়দানে প্রথম ডিভিশনের ক্লাব ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে শুরু করেছিলেন ৷ সেখানেও নজর টানেন বলের গতিতে ৷ সময়টা 2016-17 মরশুম ৷ বাংলার অনূর্ধ্ব-23 দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সৌরাশিস লাহিড়ীকে ৷

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে, কোচ হিসেবে প্রথম দায়িত্ব তাঁর ৷ ভালো কিছু করার জন্য নতুন প্রতিভার সন্ধান করতে থাকেন ৷ সেইসময় তাঁর কাছে আসে আকাশ দীপের নাম ৷ সিএবির ইনডোরে আকাশ দীপকে ডেকে পাঠান সৌরাশিস ৷ তিনি বলেন, "কি গতিতে বল করছিল চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না ৷ কেউ খেলতে চাইছিল না, ভয় পাচ্ছিল ৷ সেইসময় বোলিংয়ের সঠিক খুটিনাটি জানা ছিল না আকাশ দীপের ৷ সেই থেকে গড়ে তোলার কাজ শুরু ৷ রণদেব বসুও প্রচুর পরিশ্রম করেছে ওকে তৈরি করতে ৷"

তবে, মাঝে চোটের জন্য ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ৷ সৌরশিস বলেন, "সব যখন ঠিক এগোচ্ছে, তখনই কোমরে স্ট্রেচ ফ্যাকচার হয় ৷ চিকিৎসকরা বলেন বোলিং করা যাবে না ৷ কিন্তু, চোট সারাতে নিয়মিত রিহ্যাব দরকার ৷ দল নিয়ে বাইরে গেলে সেই কাজে ফাঁক পড়বে ৷ চোট পাওয়া ক্রিকেটার তাই দলে নেই ৷ নির্বাচকরা দলের সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি নন ৷ এই সময় আমি দাদি সৌরভ গাঙ্গুলির দ্বারস্থ হই ৷ দাদি বলেন, 'তোর যখন আকাশদীপে আস্থা রয়েছে, মনে করছিস কিছু হবে প্রতিভা আছে তখন গো অ্যাহেড ৷' তারপর তো সবাই দেখছে ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আমাকে যখন ফোন করে বলল অভিষেক হচ্ছে, কিছু বলতে পারিনি ৷ আবেগের ধাক্কায় বিহ্বল হয় গিয়েছিলাম ৷ ফোন কেটে দুই মিনিট পরে ফোন করি ৷ আজও গুরুপূর্ণিমার দিনে আমাকে প্রণাম গুরুজি লিখে পাঠায় ৷"

ছাত্রের সাফল্যের উচ্ছ্বাসিত বাংলার আরেক কোচ শিবশঙ্কর পাল ৷ বলছেন, "গত তিনবছর ধরে ওকে গড়ে তুলতে আমি লক্ষ্মী খেটে গিয়েছি ৷ এখন ইনস্যুইং, আউটস্যুইং দু’টোই করাতে পারে ৷ আমরা গতবছর থেকে স্পট বোলিং প্র্যাকটিস করাচ্ছি ৷ তাতেও প্রচুর লাভ হয়েছে ৷ আকাশ দীপ খাটতে ভালোবাসে ৷ কখনও কোন কিছুতেই 'না' নেই ৷ ওর কাছে উইকেটের চরিত্র কোনও ব্যাপার নয় ৷ নির্দিষ্ট লাইনে বল করে যেতে পারে ৷ ছাত্রের সাফল্যে একটা তৃপ্তি তো থাকেই ৷ তাই ভীষণ খুশি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক আকাশ দীপের, শিকারের তালিকায় ক্রলি-ডাকেট-পোপ
  2. ধোনি-কোহলি দ্বৈরথ দিয়ে 22 মার্চ শুরু আইপিএল, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত সূচি
  3. রাঁচির পিচ দেখে হতবাক বেন স্টোকস, কী বললেন ব্রিটিশ অধিনায়ক
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.