কলকাতা, 12 মার্চ: মহাভারতে যিনিই অর্জুন, তিনিই পার্থ ৷ কিন্তু ব্যারাকপুরের নির্বাচনী মহা-ভারতে অর্জুন ও পার্থ এক নন ৷ বরং আলাদা দু’টি রাজনৈতিক চরিত্র ৷ এখনও তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে ‘সতীর্থ’ হলেও, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ব্যাটেলগ্রাউন্ড ব্যারাকপুরে অর্জুন ও পার্থর সম্মুখসমর হওয়ার সম্ভাবনাই ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷
এর কারণ, পার্থ ভৌমিককে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী করেছে ৷ যা একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং ৷ মঙ্গলবার নিজের অফিস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷ পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক তাঁকে অপমানিত করেছে ৷ বঞ্চিত করেছে ৷ তৃণমূলে গিয়ে গত দেড় বছর তিনি নষ্ট করেছেন বলেও দাবি করেছেন অর্জুন ৷
তাই তিনি আরও একবার ব্যারাকপুর থেকে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই নিয়েছেন ৷ সেই লক্ষ্যেই তিনি বিজেপির পথে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন ৷ যদিও তাঁর এই বারবার দলবদল মানুষ ভালোভাবে নেবে না বলেই মনে করেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ৷ সংবাদমাধ্যমে সেকথা অনেকটা অর্জুনকে পরামর্শ দেওয়ার মতো করেই জানিয়েছেন তিনি ৷ তৃণমূলের তরফেও বরফ গলানোর চেষ্টা হয়েছিল ৷ যোগাযোগ করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম ৷ তার পরও পরিস্থিতিতে কোনও বদল হয়নি ৷
পাঁচ বছর আগেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ৷ 2019 সালেও ব্য়ারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি ৷ এমনকী এই নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠকও করেন ৷ শেষে বিজেপিতে যোগ দেন ৷ তবে সেবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত খোলাখুলি আক্রমণ তিনি করেননি ৷ পরে বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী হন ৷ দু’বারের সাংসদ (2009 ও 2014 সালে জয়ী) দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে লোকসভায় প্রবেশ করেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে এবারও কি তাহলে ফের বিজেপিতেই যাচ্ছেন অর্জুন ? সাংসদের জবাব, তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি ৷ এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিলেই জানাবেন সকলকে ৷ সূত্রের খবর, তাঁর বিজেপিতে ফেরার সম্ভাবনাই বেশি ৷
আর সেটা যদি হয়, তাহলে তা হবে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই নেতার চতুর্থ দলবদল ৷ 1995 সালে ভাটপাড়া পৌরসভায় কংগ্রেস কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু অর্জুন সিংয়ের ৷ পরে দলবদলে তিনি আসেন তৃণমূল কংগ্রেসে ৷ তাঁর প্রথম দলবদল সেটাই ৷ 2001 সালে তিনি ভাটপাড়া থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিধায়ক হন ৷ টানা চারবার (2001, 2006, 2011, 2016) ওই কেন্দ্রে জেতেন ৷ 2019 সাল থেকে সেই কেন্দ্রের বিধায়ক অর্জুন-পুত্র পবন সিং ৷
2019 সালেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে দ্বিতীয়বার দলবদল করেন অর্জুন সিং ৷ 2022 সালের 22 মে বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে আসেন ৷ সেটা ছিল তাঁর তৃতীয় দলবদল ৷ 2004 সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে ভোটে লড়েছিলেন অর্জুন সিং ৷ সিপিএমের তরিৎবরণ তোপদারের কাছে তিনি হেরে যান ৷ 20 বছর পর একই কেন্দ্রের আবার তৃণমূলের হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি ৷ সেটা না হওয়ায় অর্জুন চতুর্থবার দলবদলের পথে ৷
কিন্তু তাঁর জায়গায় তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছেন, সেই পার্থ ভৌমিকের নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা কিছুটা কম৷ অর্জুন যেমন বামজমানায় ভাটপাড়া থেকে জিতেছিলেন ৷ পার্থর ক্ষেত্রের ব্যাপারটা তেমন নয় ৷ তিনি 2011 সালে প্রথমবার নৈহাটি থেকে জিতে বিধায়ক হন ৷ আরও দু’বার ওই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন তিনি ৷ এখন রাজ্যের মন্ত্রী ৷ অর্জুনের তৃণমূলে ফেরার দিন সহাস্যে তাঁকে পাশে থাকতে দেখা গিয়েছিল ৷ এবার এই দু’জনই সম্মুখসমরে নামতে চলেছেন বলেই মনে হচ্ছে ৷
মহাভারতে যেহেতু যিনিই অর্জুন, তিনিই পার্থ, তাই সারথী (কৃষ্ণ) একজনই ছিলেন ৷ সারথীই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ জয়ে পথ দেখিয়েছিলেন এই পাণ্ডবকে ৷ কিন্তু ব্য়ারাকপুরের ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ অর্জুন ও পার্থ মুখোমুখি হলে তাঁদের সারথী স্বাভাবিকভাবেই আলাদা হবেন ৷ কিন্তু কোন সারথী সঠিক পথ দেখিয়ে বিজয়ী করতে পারবেন অর্জুন বা পার্থকে, সেই উত্তর পেতে হলে নির্বাচনের ফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ৷
আরও পড়ুন: