ETV Bharat / politics

হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের ফলাফল আগামী নির্বাচনের জন্য কী বার্তা দিল?

হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভার ফল বের হল ৷ হরিয়ানায় জয়ের হ্যাটট্রিক করল বিজেপি ৷ জম্মু ও কাশ্মীরে আবারও সরকার গড়তে চলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 2 hours ago

ASSEMBLY POLL RESULTS 2024
হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের ফলাফল আগামী নির্বাচনের জন্য কী বার্তা দিল? (ফাইল চিত্র)

কলকাতা, 8 অক্টোবর: চারশো পারের স্লোগান দিয়ে 240-এ থামতে হয়েছিল বিজেপিকে ৷ গত জুনে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এই ফল দেখে বিরোধীদের মনে আশা জেগেছিল ৷ কিন্তু সেই আশায় কিছুটা হলেও জল ঢালল হরিয়ানা ৷ লোকসভা ভোটে মোদি ম্যাজিক যতটা ফিকে হয়েছিল, তার সামান্য বদল হল রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন এই রাজ্যে ৷ তাহলে চলতি বছরের শেষে এবং আগামী বছরের শুরুতে যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, সেখানে কি মোদি-মন্ত্রে ফের জয়ের সরণিতে ফিরতে পারবে গেরুয়া শিবির ?

প্রশ্নটা যত সহজ বলে মনে হচ্ছে, উত্তর কিন্তু ততটা সহজ না-ও হতে পারে ৷ এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর ৷ হরিয়ানায় বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই হয়েছিল কংগ্রেসের ৷ আইএনএলডি বা জেজেপি-র মতো আঞ্চলিক দল থাকলেও তারা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ছিল না ৷ সেই লড়াইয়ে আপাতত অ্যাডভান্টেজ বিজেপি ৷

এই নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার বক্তব্য, অনেকেই বলেছিলেন যে বিজেপি আর হরিয়ানায় ফিরতে পারবে না । তবে ভালো কাজ করলে যে ফিরে আসা যায় হরিয়ানায় বিজেপির ফলাফলই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ । হরিয়ানা থেকেই কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল । কৃষকরাও যে বিজেপির সঙ্গে আছে, এটা হরিয়ানা প্রমাণ করে দিল । অতএব এই জয় আগামী নির্বাচনগুলিতে বিজেপিকে লড়াইয়ের অনেকটা মনোবল যোগাবে ।

বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে হরিয়ানায় বিজেপির যে ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তা তাদের জন্য একটা সদর্থক দিক ।’’ আর ইতিবাচক ফলের উপর নির্ভর করেই আগামিদিনে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে লড়াই করতে নামতে পারবে মোদি-শাহের দল ৷

যদিও সেখানে কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি লড়াই নেই বিজেপির ৷ লড়তে হবে আঞ্চলিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে ৷ মহারাষ্ট্রে তাদের মূল লড়াই উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও শরদ পওয়ারের এনসিপি-র সঙ্গে ৷ আবার ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে লড়তে হবে হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে ৷ আগামী বছরের শুরুতেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন ৷ সেখানে আবার মোদি-শাহদের মূল প্রতিপক্ষ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷

2014 সাল থেকে ভারতীয় রাজনীতি মোদিময় হয়ে উঠলেও বারবার আঞ্চলিক শক্তিগুলির কাছে হার শিকার করতে হয়েছে বিজেপিকে ৷ যে ফলাফল কিছুটা হলেও দেখা মিলেছে জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ সেখানে আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সই এগিয়ে রয়েছে ৷ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ফের ভূস্বর্গের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ওমর আবদুল্লা ৷

2014 সালে পিডিপি-র মেহবুবা মুফতিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়েছিল বিজেপি ৷ এবার মুফতিরা একবারে কার্যত সাফ হয়ে গিয়েছে ৷ অন্যদিকে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হতে চলেছে ৷ যদিও বিশ্বজিৎ দাসের মতে, জম্মু কাশ্মীর বিজেপির কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল । অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করা, লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা, সোনাম ওয়াংচুক পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনে নেমে অনশন শুরু করেছেন । এর প্রভাব জম্মু-কাশ্মীরের ভোটে পড়েছে ।

বিজেপি যদি কাশ্মীরের মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ করত তাহলে অবশ্যই তারা সমর্থন পেত, এমনটাই মনে করেন তিনি । যদিও কাশ্মীর উপত্যকায় বিজেপি সেভাবে লড়াই করেনি৷ জম্মুতে তারা সব আসনে প্রার্থী দেয় ৷ সেখানে অবশ্য অধিকাংশ আসনে জিততে পেরেছে গেরুয়া শিবির ৷

ফলে ভূস্বর্গে আগেরবারের ফলাফল বিজেপি ধরে রাখতে পেরেছে অনেকটা ৷ তাই আগামিদিনের রাজনীতিতে এই বিষয়টিকে তারা আবারও প্রচারের অংশ করতে পারবে ৷ এই নিয়ে রাহুল সিনহার বক্তব্য, অনেকেই ভেবেছিলেন যে মুসলিম অধ্যুষিত জায়গায় বিজেপি কিছু করতে পারবে না । তবে জম্মুর পাশাপাশি কাশ্মীরের মানুষও বিজেপিকে ব্যাপক ভাবে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছে । তার মানে কাশ্মীরি মুসলিমরাও বুঝতে পারছেন যে উগ্রপন্থার নামে মানুষের উপর অত্যাচার ও লুট চলেছে ৷

কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতিম বিশ্বাস অবশ্য মনে করেন, যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস জানেন না, তাঁদেরকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভুল বোঝানো সম্ভব ৷ কিন্তু যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা, তাঁরা ভালোভাবেই জানেন জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস । এটা বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ও আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আজ প্রত্যাখ্যান করেছে ।

কিন্তু কংগ্রেস? আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে লড়াইয়ের আগে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর থেকে তাদের প্রাপ্তি কী ? বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, আশার কথা কংগ্রেস আবার তাদের জমি ফেরত পাচ্ছে । কংগ্রেস তাদের জনসমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছে । সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আবার উত্থান হচ্ছে ।

সত্যিই কি তাই? পরিসংখ্যান কী বলছে ? জম্মু ও কাশ্মীরে শেষবার বিধানসভা নির্বাচন হয় 2014 সালে ৷ সেবার কংগ্রেস 12টি আসনে জিতেছিল ৷ এবার জিতেছে কংগ্রেস ছ’টি আসনে ৷ ওমরের দলের সঙ্গে জোটে আছে বলেই তারা সরকারে থাকার সুযোগ পাচ্ছে ৷ অন্যদিকে হরিয়ানায় 2014 সালের পর থেকে পর পর তিনবার হারতে হল কংগ্রেসকে ৷

তবে এর মধ্যেও কংগ্রেসের জন্য ইতিবাচক দিক রয়েছে ৷ 2019 সালে মূলত জেজেপি-র দাপটে কংগ্রেস ও বিজেপির শক্তি কমে ৷ এবার সেই দাপট কমে যাওয়ায় দুই দলই শক্তিবৃদ্ধি করেছে ৷ বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে ৷ আর কংগ্রেসের আসন বেড়েছে ৷ ভোট শতাংশেও তার ইতিবাচক বৃদ্ধি আনতে পেরেছে ৷

এই নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘এবছর আম আদমি পার্টির জন্য হরিয়ানা নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পঞ্জাবে ভালো ফল করার পর সকলেই মনে করেছিল হরিয়ানায় তারা ভালো ফল করবে । কিন্তু আশানুরূপ ফল করতে পারেনি আম আদমি পার্টি । মনে রাখতে হবে কংগ্রেস কিন্তু প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ভালো ভোট পেয়েছে সেখানে ৷ শুধু তাই নয়, তাদের ভোট পার্সেন্টেজ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে ।’’

হরিয়ানার ফলাফল নিয়ে কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘হরিয়ানায় আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে । কংগ্রেসের সঙ্গেও এখানে বেশ কিছু আঞ্চলিক দল এসেছিল, তারাও মুছে যাওয়ার জায়গায় চলে গিয়েছে । দেখা যাচ্ছে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হচ্ছে । এ দিনের ফল আরও একবার বুঝিয়ে দিল আঞ্চলিক দলগুলি জাতীয় রাজনীতিতে যে প্রভাব তৈরি করার চেষ্টা করছিল, সেটা কমতে শুরু করেছে । মানুষ আবার এটা বুঝতে পারছে, প্রধান যে রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থন জানালেই উন্নয়ন হবে ।’’

তবে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে সেই সুযোগ কংগ্রেসের জন্য কম ৷ সরকারে থাকতে হলে এই দুই রাজ্যে শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে ও হেমন্ত সোরেনের ভরসায় থাকতে হবে কংগ্রেসকে ৷ যেভাবে তারা জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করতে পারল, সেভাবেই ৷ এমনকী, দিল্লিতেই তারা একই ফর্মুলায় যেতে পারে ৷ জোট করতে পারে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে ৷ কিন্তু লোকসভা ভোটে এই জোটের ফল ইতিবাচক হয়নি ৷ তাই বিধানসভায় জোট হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷ জোট যদি না-হয় তাহলে আপ ও বিজেপির মুখোমুখি লড়াই হবে ৷

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছিলেন যে বছর শেষের বিধানসভা নির্বাচগুলি বিজেপির জন্য কেন্দ্র সরকার চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, একের পর এক হারের মুখ দেখলে শরিকরাও বিমুখ হতে পারেন৷ সেই হিসেবে হরিয়ানা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ৷ এখন দেখার আগামী নির্বাচনগুলিতে মোদি-ম্যাজিক আবার ফেরে নাকি লোকসভায় সামান্য হলেও ঘুরে দাঁড়ানো কংগ্রেস ধীরে ধীরে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতিতে !

কলকাতা, 8 অক্টোবর: চারশো পারের স্লোগান দিয়ে 240-এ থামতে হয়েছিল বিজেপিকে ৷ গত জুনে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এই ফল দেখে বিরোধীদের মনে আশা জেগেছিল ৷ কিন্তু সেই আশায় কিছুটা হলেও জল ঢালল হরিয়ানা ৷ লোকসভা ভোটে মোদি ম্যাজিক যতটা ফিকে হয়েছিল, তার সামান্য বদল হল রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন এই রাজ্যে ৷ তাহলে চলতি বছরের শেষে এবং আগামী বছরের শুরুতে যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, সেখানে কি মোদি-মন্ত্রে ফের জয়ের সরণিতে ফিরতে পারবে গেরুয়া শিবির ?

প্রশ্নটা যত সহজ বলে মনে হচ্ছে, উত্তর কিন্তু ততটা সহজ না-ও হতে পারে ৷ এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর ৷ হরিয়ানায় বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই হয়েছিল কংগ্রেসের ৷ আইএনএলডি বা জেজেপি-র মতো আঞ্চলিক দল থাকলেও তারা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ছিল না ৷ সেই লড়াইয়ে আপাতত অ্যাডভান্টেজ বিজেপি ৷

এই নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার বক্তব্য, অনেকেই বলেছিলেন যে বিজেপি আর হরিয়ানায় ফিরতে পারবে না । তবে ভালো কাজ করলে যে ফিরে আসা যায় হরিয়ানায় বিজেপির ফলাফলই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ । হরিয়ানা থেকেই কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল । কৃষকরাও যে বিজেপির সঙ্গে আছে, এটা হরিয়ানা প্রমাণ করে দিল । অতএব এই জয় আগামী নির্বাচনগুলিতে বিজেপিকে লড়াইয়ের অনেকটা মনোবল যোগাবে ।

বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে হরিয়ানায় বিজেপির যে ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তা তাদের জন্য একটা সদর্থক দিক ।’’ আর ইতিবাচক ফলের উপর নির্ভর করেই আগামিদিনে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে লড়াই করতে নামতে পারবে মোদি-শাহের দল ৷

যদিও সেখানে কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি লড়াই নেই বিজেপির ৷ লড়তে হবে আঞ্চলিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে ৷ মহারাষ্ট্রে তাদের মূল লড়াই উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও শরদ পওয়ারের এনসিপি-র সঙ্গে ৷ আবার ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে লড়তে হবে হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে ৷ আগামী বছরের শুরুতেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন ৷ সেখানে আবার মোদি-শাহদের মূল প্রতিপক্ষ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷

2014 সাল থেকে ভারতীয় রাজনীতি মোদিময় হয়ে উঠলেও বারবার আঞ্চলিক শক্তিগুলির কাছে হার শিকার করতে হয়েছে বিজেপিকে ৷ যে ফলাফল কিছুটা হলেও দেখা মিলেছে জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ সেখানে আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সই এগিয়ে রয়েছে ৷ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ফের ভূস্বর্গের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ওমর আবদুল্লা ৷

2014 সালে পিডিপি-র মেহবুবা মুফতিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়েছিল বিজেপি ৷ এবার মুফতিরা একবারে কার্যত সাফ হয়ে গিয়েছে ৷ অন্যদিকে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হতে চলেছে ৷ যদিও বিশ্বজিৎ দাসের মতে, জম্মু কাশ্মীর বিজেপির কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল । অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করা, লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা, সোনাম ওয়াংচুক পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনে নেমে অনশন শুরু করেছেন । এর প্রভাব জম্মু-কাশ্মীরের ভোটে পড়েছে ।

বিজেপি যদি কাশ্মীরের মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ করত তাহলে অবশ্যই তারা সমর্থন পেত, এমনটাই মনে করেন তিনি । যদিও কাশ্মীর উপত্যকায় বিজেপি সেভাবে লড়াই করেনি৷ জম্মুতে তারা সব আসনে প্রার্থী দেয় ৷ সেখানে অবশ্য অধিকাংশ আসনে জিততে পেরেছে গেরুয়া শিবির ৷

ফলে ভূস্বর্গে আগেরবারের ফলাফল বিজেপি ধরে রাখতে পেরেছে অনেকটা ৷ তাই আগামিদিনের রাজনীতিতে এই বিষয়টিকে তারা আবারও প্রচারের অংশ করতে পারবে ৷ এই নিয়ে রাহুল সিনহার বক্তব্য, অনেকেই ভেবেছিলেন যে মুসলিম অধ্যুষিত জায়গায় বিজেপি কিছু করতে পারবে না । তবে জম্মুর পাশাপাশি কাশ্মীরের মানুষও বিজেপিকে ব্যাপক ভাবে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছে । তার মানে কাশ্মীরি মুসলিমরাও বুঝতে পারছেন যে উগ্রপন্থার নামে মানুষের উপর অত্যাচার ও লুট চলেছে ৷

কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতিম বিশ্বাস অবশ্য মনে করেন, যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস জানেন না, তাঁদেরকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভুল বোঝানো সম্ভব ৷ কিন্তু যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা, তাঁরা ভালোভাবেই জানেন জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস । এটা বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ও আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আজ প্রত্যাখ্যান করেছে ।

কিন্তু কংগ্রেস? আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে লড়াইয়ের আগে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর থেকে তাদের প্রাপ্তি কী ? বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, আশার কথা কংগ্রেস আবার তাদের জমি ফেরত পাচ্ছে । কংগ্রেস তাদের জনসমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছে । সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আবার উত্থান হচ্ছে ।

সত্যিই কি তাই? পরিসংখ্যান কী বলছে ? জম্মু ও কাশ্মীরে শেষবার বিধানসভা নির্বাচন হয় 2014 সালে ৷ সেবার কংগ্রেস 12টি আসনে জিতেছিল ৷ এবার জিতেছে কংগ্রেস ছ’টি আসনে ৷ ওমরের দলের সঙ্গে জোটে আছে বলেই তারা সরকারে থাকার সুযোগ পাচ্ছে ৷ অন্যদিকে হরিয়ানায় 2014 সালের পর থেকে পর পর তিনবার হারতে হল কংগ্রেসকে ৷

তবে এর মধ্যেও কংগ্রেসের জন্য ইতিবাচক দিক রয়েছে ৷ 2019 সালে মূলত জেজেপি-র দাপটে কংগ্রেস ও বিজেপির শক্তি কমে ৷ এবার সেই দাপট কমে যাওয়ায় দুই দলই শক্তিবৃদ্ধি করেছে ৷ বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে ৷ আর কংগ্রেসের আসন বেড়েছে ৷ ভোট শতাংশেও তার ইতিবাচক বৃদ্ধি আনতে পেরেছে ৷

এই নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘এবছর আম আদমি পার্টির জন্য হরিয়ানা নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পঞ্জাবে ভালো ফল করার পর সকলেই মনে করেছিল হরিয়ানায় তারা ভালো ফল করবে । কিন্তু আশানুরূপ ফল করতে পারেনি আম আদমি পার্টি । মনে রাখতে হবে কংগ্রেস কিন্তু প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ভালো ভোট পেয়েছে সেখানে ৷ শুধু তাই নয়, তাদের ভোট পার্সেন্টেজ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে ।’’

হরিয়ানার ফলাফল নিয়ে কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘হরিয়ানায় আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে । কংগ্রেসের সঙ্গেও এখানে বেশ কিছু আঞ্চলিক দল এসেছিল, তারাও মুছে যাওয়ার জায়গায় চলে গিয়েছে । দেখা যাচ্ছে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হচ্ছে । এ দিনের ফল আরও একবার বুঝিয়ে দিল আঞ্চলিক দলগুলি জাতীয় রাজনীতিতে যে প্রভাব তৈরি করার চেষ্টা করছিল, সেটা কমতে শুরু করেছে । মানুষ আবার এটা বুঝতে পারছে, প্রধান যে রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থন জানালেই উন্নয়ন হবে ।’’

তবে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে সেই সুযোগ কংগ্রেসের জন্য কম ৷ সরকারে থাকতে হলে এই দুই রাজ্যে শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে ও হেমন্ত সোরেনের ভরসায় থাকতে হবে কংগ্রেসকে ৷ যেভাবে তারা জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করতে পারল, সেভাবেই ৷ এমনকী, দিল্লিতেই তারা একই ফর্মুলায় যেতে পারে ৷ জোট করতে পারে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে ৷ কিন্তু লোকসভা ভোটে এই জোটের ফল ইতিবাচক হয়নি ৷ তাই বিধানসভায় জোট হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷ জোট যদি না-হয় তাহলে আপ ও বিজেপির মুখোমুখি লড়াই হবে ৷

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছিলেন যে বছর শেষের বিধানসভা নির্বাচগুলি বিজেপির জন্য কেন্দ্র সরকার চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, একের পর এক হারের মুখ দেখলে শরিকরাও বিমুখ হতে পারেন৷ সেই হিসেবে হরিয়ানা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ৷ এখন দেখার আগামী নির্বাচনগুলিতে মোদি-ম্যাজিক আবার ফেরে নাকি লোকসভায় সামান্য হলেও ঘুরে দাঁড়ানো কংগ্রেস ধীরে ধীরে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতিতে !

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.