উলুবেড়িয়া, 18 মে: হুগলি নদীর দুই তীরে অবস্থিত কলকাতার ও হাওড়া শহর ৷ হাওড়ার অন্তর্গত উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্র। প্রায় তিরিশ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে এবার লড়াই ঘরের ছেলে এবং ঘরের বৌমার মধ্যে ৷ লোকসভা নির্বাচনে উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে দ্বৈরথটা সেয়ানে-সেয়ানে ৷ মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ সাজদা আহমেদ এবং বিজেপির অরুণ উদয় পাল চৌধুরী ৷ যেখানে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে বাঙালি সংখ্যালঘু ভোট ৷ যদিও, নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে থাকার দাবি করছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিক ৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ৷ তাই একে দ্বিমুখী লড়াই বলাই ভালো ৷ চলতি লোকসভা নির্বাচনে কার দখলে যাবে এই কেন্দ্রের কুর্সি ? তার খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷
সাজদা আহমেদ, প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের স্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের প্রার্থী ৷ 2017 সালে সুলতান আহমেদের মৃত্যুর পর, 2018 উপনির্বাচনে সাজদা আহমেদকে উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা ৷ স্বামী ছেড়ে যাওয়া আসনে জিতে লোকসভায় যান সাজদা ৷ 2019 সালে তাঁকে ফের প্রার্থী করেন মমতা ৷ সেবারেও নিরাশ করেননি তিনি ৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে 2 লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি ৷ 2019 সালে মোদি ঝড়েও বিশাল জয়ে, সাজদার উপর মমতার আস্থা বেড়েছে ৷
তবে এবারের চ্যালেঞ্জটা একটু কঠিন ৷ কারণ, এবার আর কোনও বহিরাগত প্রার্থী নন ৷ সরাসরি উলুবেড়িয়া মাটিতে রাজনীতি করে বেড়ে ওঠা অরুণ উদয় পাল চৌধুরী বিজেপির প্রার্থী ৷ যিনি অনেক বেশি পরিণত এবং ভরসা যোগ্য৷ আর সেখানে ফারাক গড়ে দিয়েছে সাঁকরাইল ও আমতায় অরুণ উদয়ের হয়ে মোদি-শাহের প্রচার সভা ৷ তাই তিনি আরও বেশি প্রত্যয়ী ৷ তাই উলুবেড়িয়ার আসনের লড়াইয়ে ঘাসফুলকে সমূলে উপড়ে ফেলতে আত্মপ্রত্যয়ী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী ৷ এখানে তৃণমূলের 30 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট হাতিয়ার হলে, অরুণ উদয়ের নজরে বাকি 70 শতাংশ হিন্দু ভোট ৷ যার মধ্যে 50 শতাংশ ভোট নিজের দিকে আনতে পারলে, তৃণমূলকে ধরাশায়ী করতে পারেন তিনি ৷
তবে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এবারে নিজেদের জাতীয় দলের তকমা ও অস্তিত্ব বজায় রাখার কঠিন যুদ্ধে নেমেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিক ৷ যদিও, এই কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলেছে, সংখ্যালঘু সমর্থন যার দিকে ঘুরবে, শেষ হাসি তিনিই হাসবেন ৷ তাই এক্ষেত্রে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী ঘাসফুল শিবির তথা তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ ৷ তাই একদা ঘরের সামান্য গৃহবধূ থেকে তৃতীয়বার সাংসদ হওয়ার লক্ষ্যে, সংখ্যালঘু ভোটকে নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রচার মঞ্চে ৷
অরুণ উদয় পাল চৌধুরী 1982 সাল থেকে বিজেপি সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৷ হাওড়া তথা রাজ্য সংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকলেও, লোকসভার প্রার্থী হওয়ার আগে কোনও রকম জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেননি পদ্মশিবিরের এই নেতা ৷ 1982 সালে উলুবেড়িয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালীন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি ৷ দীর্ঘদিন সাংগঠনিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর, 2014 সালে বিজেপির হাওড়া জেলার গ্রামীণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক হন ৷ পরের বছরই হাওড়া গ্রামীণের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ৷
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা হল- উলুবেড়িয়া পূর্ব, উলুবেড়িয়া উত্তর, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ, শ্যামপুর, বাগনান, আমতা এবং উদয়নারায়ণপুর ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি আসনেই জয়ী হয় শাসকদল ৷
1952 সালে দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে জয়ী হয় কংগ্রেস ৷ উনিশ বছর পর 1971 সাল থেকে এই আসন বামেদের দুর্গে পরিণত হয় ৷ 2009 সাল পর্যন্ত সিপিএমের দখলে ছিল উলুবেড়িয়া ৷ ইউপিএ জোট প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল প্রার্থী সুলতান আহমেদ লোকসভা নির্বাচনে উলুবেড়িয়ার বাম দুর্গের পতন ঘটান ৷ সেই থেকে এই কেন্দ্রটি এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের দখলেই রয়েছে ৷
2019 সালে সাজদা আহমেদ 2 লক্ষ 15 হাজার 359 ভোটে জয়ী হন ৷ সাজদা আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল 6 লক্ষ 94 হাজার 945 ৷ বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় 4 লক্ষ 79 হাজার 586 ভোট পেয়েছিলেন ৷ আর মাত্র 81 হাজার 314 ভোট পেয়ে তৃতীয়স্থানে ছিলেন সিপিআইএম প্রার্থী মাকসুদা খাতুন ৷ আগামী 20 মে পঞ্চমদফায় নির্বাচন উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে ৷ যেখানে 30 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটে নজর তৃণমূলের ৷ কিন্তু, কংগ্রেস বা অন্য ছোট দলগুলি এখানে ভোট কাটতে পারে ৷ যা বিজেপি প্রার্থীকে অনেকটাই সুবিধা করে দেবে ৷ তবে, শেষ হাসি কে হাসবেন ? তা ঠিক হবে আগামী 4 জুন ইভিএম খোলার পরেই ৷
আরও পড়ুন: