বাঁকুড়া, 19 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে ব্যাকফুটে শাসক ৷ জনবিক্ষোভের আঁচ প্রশমিত করতে পথে নামতে হয়েছে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ পরিস্থিতি যে সুবিধের নয়, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি তাঁর ৷ কিন্তু তাঁর দলের লোকজন কি তা বুঝতে পারছেন ? অন্তত বাঁকুড়ার সাংসদ, বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর কথাবার্তা শুনে তেমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন মানুষজন ৷
রবিবার বিকেলে বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় মঞ্চ থেকে অরূপবাবুর হুঁশিয়ারি, যে তাঁর নেত্রী কিংবা রাজ্য সরকারের গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করবে, তার হাত মুচড়ে দেবে তৃণমূল কর্মীরা ৷ যে সময় চিকিৎসক পড়ুয়ার নৃশংস পরিণতি নিয়ে ক্ষোভের আগুনে ফুটছে সারা রাজ্য, সেই সময় বর্ষীয়ান এই সাংসদের এই হুঁশিয়ারি মানুষের ক্ষোভের সেই আগুনে ঘি ঢালল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
মমতার নির্দেশেই রবিবার সারা রাজ্যজুড়ে আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয় তৃণমূল ৷ গ্রাম থেকে শহরে সংগঠিত হয় মিছিল ৷ নেত্রীর নির্দেশ মেনে বাঁকুড়া শহরের হিন্দু স্কুল মাঠ থেকে মাচানতলা পর্যন্ত মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা ৷ মিছিল শেষ হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলায় ৷ সেখানেই মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন সাংসদ অরূপ ৷ তিনি আবার দলের বাঁকুড়া জেলার সভাপতিও ৷
বক্তব্যে ঠিক কী বলেছেন সাংসদ ! তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কারও দয়ায় ক্ষমতায় এসেছেন নাকি ? জনগণের আশীর্বাদ, ভালোবাসা নিয়ে তিনি তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৷ তাঁর গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করবেন না ৷ হাতটা মুচড়ে দেবে তৃণমূল কর্মীরা ৷ মিথ্যে অপপ্রচার ছড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে যারাই অভিযোগ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের কঠোর হতে হবে ৷ আমরা কোনোদিন বলিনি, এবার বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাংলার নেত্রী, বাংলার সরকার বা তৃণমূলের নামে যারা মিথ্যে অপপ্রচার করে, তাদের আর রেহাই মিলবে না ৷ আর রবীন্দ্র সংগীত বাজবে না ৷ একথা আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে ৷”
এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি অরূপ ৷ তিনি চিকিৎসক ও পুলিশকেও ওই মঞ্চ থেকে একহাত নিয়েছেন ৷ তাঁর দাবি, “আমার কাছে খবর আছে, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারবাবুরা ধরনার নাম করে বেড়াতে যাচ্ছেন ৷ ধরনার নাম করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন ৷ ডাক্তারি করছেন না ৷ এসব করবেন না ৷ সিনিয়ার ডাক্তারদের বলব, যেসব রোগী ভর্তি আছে, তাদের কাছে যান ৷ পুলিশকে সতর্ক করে বলছি, আইনমাফিক কাজ করুন ৷ ব্যাং আর সাপের মুখে একসঙ্গে চুমু খাবেন না ৷ বিজেপি-সিপিএমকে মিটিং মিছিল করে দেওয়ার সুযোগ বেশিদিন চলবে না ৷ মনে রাখবেন, আপনাদের রাজ্য সরকারের অধীনে চাকরি করতে হবে ৷”
সাংসদের ভাষায়, “কুলাঙ্গারের দল সিপিআইএম আর বিজেপি মা-বোনদের সুরসুড়ি দিয়ে রাস্তায় বের করছে ৷ সেই মায়েদের ধন্যবাদ ৷ কারণ, তাঁরা হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন ৷ যাঁরা আন্দোলন ও প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ ৷ প্রতিবাদ করা মানুষের কর্তব্য ৷ কিন্তু প্রতিবাদের নামে সিপিএম ঘোলা জলে তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলার চেষ্টা করছে ৷ এটা বন্ধ করতে হবে ৷ সিবিআই তদন্ত না করলে আরও ভালো হতো ৷ সিবিআই আসায় কেসটা দেরি হবে ৷ সেটাই চাইছে বিজেপি আর সিপিআইএম ৷”
সম্প্রতি মহিলা ফরেস্ট রেঞ্জারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন অখিল গিরি ৷ আরজি কর কাণ্ডে বেসুরো হয়ে নেতৃত্বের বিরাগভজন হয়েছেন শান্তনু সেন-সহ আরও কয়েকজন ৷ এসব সিদ্ধান্তে ঠারেঠোরে তৃণমূলনেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানুষের সমর্থন অক্ষুন্ন রাখতে তিনি এখন রাফ ও টাফ ৷ কিন্তু সুরে গাওয়ার পরও বাঁকুড়ার সাংসদকে এর মূল্য চোকাতে হবে না তো ? প্রশ্নটা কিন্তু উঠেই যাচ্ছে ৷