শ্রীরামপুর, 17 মে: তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি শ্রীরামপুর লোকসভা ৷ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় গত তিনবারের সাংসদ এই কেন্দ্রে ৷ এবারেও শ্রীরামপুর লোকসভায় প্রার্থী হিসেবে বেশ শক্তিশালী কল্যাণ ৷ আর তাঁর বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কবির শঙ্কর বোস ৷ যিনি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন জামাইও বটে ৷ আর কংগ্রেস সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর শ্রীরামপুরের ঘরের মেয়ের তকমা নিয়ে প্রচারে নেমেছেন ৷ কিন্তু, শ্রীরামপুরের নানান ইস্যুকে কেন্দ্র করে, ভোট বাক্সে সাম্প্রদায়িক বিভাজন দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল ৷ এই পরিস্থিতিতে শ্রীরামপুর লোকসভার কুর্সি দখলের লড়াইয়ে কে, কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে ? তার খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷
শ্রীরামপুর লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে দু’টি বিধানসভা হাওড়া জেলার মধ্যে ৷ একটি জগৎবল্লভপুর ও দ্বিতীয় ডোমজুড় ৷ এর বাইরে উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, চণ্ডীতলা ও জাঙ্গিপাড়া হুগলি জেলার মধ্যে অবস্থিত ৷ তবে, এখানেও রয়েছে জাতি ভিত্তিক ভোট ভাগের খেলা ৷ একদিকে চাঁপদানি, চণ্ডীতলা ও জাঙ্গিপাড়ার সংখ্যালঘু ভোট ৷ আরেকদিকে উত্তরপাড়ার রেল কলোনি-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও শ্রীরামপুরের বেশ কিছু অবাঙালি ভোট ৷ যার অধিকাংশটাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহলের একাংশ ৷
এর অন্যতম কারণ, জাঙ্গিপাড়া বিধানসভার অন্তর্গত ফুরফুরা শরীফ ৷ আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে আইএসএফ ৷ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর হাত ধরে এখান থেকেই আইএসএফের জন্ম ৷ তাই আতুঁড়ঘর শ্রীরামপুর লোকসভায় আইএসএফ প্রার্থী শাহরিয়ার মল্লিক সংখ্যালঘু ভোটের অনেকটাই নিয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ সেক্ষেত্রে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটবাক্সের ওজন খানিকটা হলেও কমবে ৷ সেখানে বিজেপি প্রার্থী কবির শঙ্কর বোস প্রার্থী হিসেবে বিশাল কিছু না হলেও, অবাঙালি হিন্দু ভোটের দাবিদারি তিনি পেশ করছেন ৷ ফলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমান কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী সেখানে কেউ না থাকলেও, বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির যে অভিযোগ তৃণমূল করে আসছে ৷ তার প্রভাব ভোটবাক্সে খানিকটা হলেও পড়বে ৷
তবে, শ্রীরামপুরের ঘরের মেয়ে দীপ্সিতা অবশ্য সেই ভোট বিভাজনের রাজনীতি নয় ৷ তিনি ভোটের ময়দানে প্রচারে নেমেছেন মানুষের ইস্যুকে হাতিয়ার করে ৷ বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের বক্তব্য,"15 বছর অনেক সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই শিল্পাঞ্চলের মানুষের জন্য কিছুই করেননি ৷ এতদিনের সাংসদ হিসেবে একটা বন্ধ জুট মিল খোলাতে পারেননি ৷ তিনি তো সাংসদ হিসেবে এই জুট মিলগুলি খোলাতে সংসদে প্রাইভেট বিল পেশ করতে পারতেন ৷ যা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে ৷ লোকসভার সাইটে গিয়ে দেখুন ৷ তিনি এমনটা করেছেন কিনা ! পাবেন না ৷"
আর বিজেপি প্রার্থী কবির শঙ্কর বোসকে নিয়ে দীপ্সিতার মন্তব্য, "বিজেপি প্রার্থী একটা ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ হেরে যাওয়ার পর হারিয়ে গেলেন ৷ এর বাইরে তাঁর পরিচয় তিনি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামাই ৷ এর বাইরে তাঁর রাজনৈতিক কী পরিচয় বা প্রোফাইল আছে ? যে তাঁকে নিয়ে আমায় ভাবতে হবে !"
যদিও, বিজেপি প্রার্থী কবির শঙ্কর বোসের দাবি, সকলের অতীত থাকে ৷ সেই অতীত নিয়ে বর্তমান ৷ আর বর্তমানের উপর নির্ভর করেই ভবিষ্য়ৎ তৈরি হয় ৷ তাই অতীতকে তিনি অস্বীকার করছেন না ৷ কিন্তু, সেটাকে কাঁটাছেঁড়ে করে তিনি বর্তমানকে ক্ষতবিক্ষত করে ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলতে চান না ৷ তিনি মূলত, মানুষের কাছে 'মোদির নামে' ভোট চাইছেন ৷ স্থানীয় ইস্যুকে তুলে ধরে মানুষের কাছে কোনও বক্তব্য তাঁকে রাখতে শোনা যায়নি ৷
আর সেখানেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে 2024 লোকসভা নির্বাচনে ৷ বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে তিনি বিশেষ কোনও মন্তব্যই করলেন না ৷ বরং তাঁর নিশানায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন সিপিআইএমের জোটপ্রার্থী দীপ্সিতা ধর ৷ শ্রীরামপুর তথা বাংলার মেয়ে হলেও, বছরের অধিকাংশ সময় তিনি দিল্লিতে পড়ে থাকেন বলে কটাক্ষ করলেন কল্যাণ ৷ তাঁর মতে, বামেদের মানুষ আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ তাই নতুন প্রজন্মকে নিয়ে এলেও, কোনও লাভ হবে না ৷
আরও পড়ুন: