ডোমজুড়, 3 এপ্রিল: মিস্টার ইন্ডিয়ার পালটা মিস ইউনিভার্স, শ্রীরামপুরে জমে উঠেছে দুই প্রার্থীর রাজনৈতিক তরজা ৷ ওই আসনের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়কে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন ৷ বুধবার তারই পালটা হিসেবে দীপ্সিতাকে ‘মিস ইউনিভার্স’ বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ ৷ প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম প্রার্থীর বিদেশযাত্রা নিয়ে ৷ যার প্রত্য়ুত্তর এ দিনই দিয়ে দিয়েছেন দীপ্সিতা৷ জানিয়েছেন, চুরির টাকায় তিনি বিদেশে যাননি ৷
এই বিতর্কের সূত্রপাত গত 26 মার্চ ৷ সেদিন হুগলির চণ্ডীতলায় প্রচারে যান শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর ৷ সেখানে তিনি শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়কে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ বলে কটাক্ষ করেন ৷ শেখর কাপুরের মিস্টার ইন্ডিয়া সিনেমায় যেভাবে হাতে একটা ঘড়ি পরে অদৃশ্য হয়ে যেতে অনিল কাপুর, তেমনই কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়কে এলাকায় দেখা যায় না বলে কটাক্ষ করেছিলেন সিপিএমের এই তরুণ নেত্রী ৷
বুধবার পালটা কল্য়াণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি শুনলাম কোনও একজন নাকি আমাকে মিস্টার ইন্ডিয়া বলেছেন । আমার একটা কবিতার লাইন মনে পড়ছে । সেটা হল, বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ ঘুরে, বহু অর্থ ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু । দেখা হয় নাই দু’চোখ মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু । মিস ইউনিভার্স দেশ-বিদেশ সব জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন । শ্রীরামপুরে এসে মিস্টার ইন্ডিয়াকে দেখতে পেয়েছিল উনি । ওঁর ঘাসের উপর শিশির বিন্দু দেখার সৌভাগ্য এখানে হয়েছে ৷"
এর পর কল্যাণ সিপিএম আমলের প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ শানান দীপ্সিতার বিরুদ্ধে ৷ তিনি বলেন, "2011 সাল পর্যন্ত আপনাদের বিধায়ক ছিল ৷ স্বাধীনতার পর কোনও উন্নয়ন হয়নি, আপনি দেখতে পেয়েছিলেন ? আপনি কি দেখতে পেয়েছিলেন আপনাদের যাঁরা বিধায়ক ছিলেন, তাঁরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন ? আপনি কি দেখতে পেয়েছিলেন সিপিএমের হার্মাদরা তৃণমূল কর্মীদের খুন করেছিল, নন্দীগ্রামে মহিলাদের উপর নির্যাতন করেছিল ? সিপিএমের পূর্বসূরীরা তৃণমূল কর্মীদের খুন করে মাটির তলায় পুঁতে রেখেছিল, তাদের হাড় আজও বেরোয়, আপনি কি দেখতে পেয়েছিলেন ?’’
এর পর শ্রীরামপুরের সাংসদের সংযোজন, ‘‘আপনি কিছুই দেখতে পাননি । কারণ, আপনি কিছুই দেখেননি । আপনি হঠাৎ করে এসেছেন আর এসব বলে যাচ্ছেন । আচ্ছা আপনি বালিতে জিততে পারলেন না কেন বলুন তো ? আপনি তো আপনার মাকে নিয়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেরিয়েছিলেন ৷ জেলা পরিষদে 25 হাজার ভোটে হেরেছিলেন না ? সিপিএম আগে ভিয়েতনামে বৃষ্টি হলে এখানে কৌটো নিয়ে নেমে পড়ত । আর কোথায় জেএনইউ-তে এসএফআই জিতেছে ভাবছে, শ্রীরামপুরেও জিতে যাবে । সিপিএম আছে সিপিএমেই । 4 জুন আমি যখন সার্টিফিকেট নেব ৷ থাকবেন কিন্তু ৷ একবার মিস্টার ইন্ডিয়াকে দেখে যাবেন ৷"
হুগলির কোন্নগর থেকে এর জবাব দিয়েছেন দীপ্সিতাও ৷ তিনি বলেন, "আমার বিদেশে ঘোরায় ওঁর আপত্তি থাকা স্বাভাবিক ।কারণ, আমি তো চুরির টাকায় যাইনি । সরকারি টাকাতেও যাইনি । আমার পড়াশোনার কাজে দেশের প্রতিনিধি হয়ে আমি আমার পেপার জমা দিতে বিদেশে গিয়েছি ।’’
এর পর শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী শুধু কল্যাণ নন, তৃণমূল-বিজেপিকে একসঙ্গে বেঁধেন ৷ বলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল, বিজেপিরা চায় না সাধারণ ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে এই দেশের নাম, রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করুক । আমাদের মতো কেউ কেউ যখন বিদেশে যায় পড়াশোনার কাজে, তখন ওঁদের অসুবিধা হবেই । ওঁরা চান পড়াশোনা না করে মিথ্যাবাদী ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ তৈরী হোক । ওদের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই ৷"
আরও পড়ুন: