সন্দেশখালি, 22 ফেব্রুয়ারি: রাজ্য পুলিশের ডিজি সন্দেশখালি ছাড়তেই ফের ক্ষোভের আগুন সন্দেশখালিতে । এ বার জনরোষ শাহজাহানের মেজো ভাই তথা তৃণমূলের যুব নেতা শেখ সিরাজউদ্দিনকে ঘিরে । তাঁর বিরুদ্ধেও উঠেছে জমি দখল করে বিঘার পর বিঘা ভেড়ি বানানোর অভিযোগ ।পুলিশকে সামনে পেয়ে শাহজাহানের 'দোসর' সিরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন গ্রামের মহিলারা । চলল বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে বচসাও ।সেই ক্ষোভের আগুনে পুড়ল ভেড়ির পাশের একটি আলাঘরও । যার জেরে নতুন করে উত্তাল হল সন্দেশখালি বেড়মজুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝুপখালি এলাকা ।
পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করলেও এখনও গোটা এলাকা যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে । ফলে, যে কোনও সময় আবারও গ্রামবাসীদের আন্দোলনে জনবিস্ফোরণের চেহারা নিতে পারে সন্দেশখালিতে । তবে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন পুলিশের শীর্ষ-কর্তারা । গ্রামে গ্রামে টহল দেওয়া শুরু হয়েছে পুলিশ বাহিনীর । তাঁরা কথা বলছেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে । আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে বলে খবর সূত্রের ।
শাহজাহান-শিবু-উত্তম ! সন্দেশখালির এই 'ত্রিমূর্তি'-র বিরুদ্ধেই এতদিন যত ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল গ্রামবাসীদের । জোর করে জমি দখল, কৃষি জমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে সেখানে বেআইনিভাবে ভেড়ি বানানো । গরিব মানুষের উন্নয়নের টাকা লুঠ, নারীদের উপর নির্যাতন - এমনই ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ ঘিরে শাহজাহান ও তাঁর দুই শাগরেদ শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়েছে ৷ তাঁদের কড়া শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামের মহিলারা ।
শাহজাহান, শিবু, উত্তমের অপকর্মের বিরুদ্ধে যখন জনরোষ বাড়ছে, তখনই সন্দেশখালিতে গায়ের জোরে জমি দখল করে ভেড়ি বানানোর অভিযোগ উঠল শাহজাহানের মেজো ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে । অভিযোগ, নিজের প্রভাব খাটিয়ে বেড়মজুর 2 নম্বর পঞ্চায়েতের ঝুপখালিতে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি দখল করে সেই জমিতে বেআইনিভাবে ভেড়ি তৈরি করেছেন সিরাজ ।
গ্রামবাসীরা বলছেন, "আগে সিরাজ গ্রামে ডাক্তারি করলেও পরে সে এলাকার মস্তান হয়ে ওঠেন । শাসকদলের যুব নেতা হওয়ার কারণে এলাকায় তাঁর দাপটও ছিল সুবিদিত ! একদিকে সম্পর্কে শাহজাহানের মেজো ভাই ৷ অন্যদিকে সিরাজ তৃণমূলের যুব নেতা হওয়ায় তাঁর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারতেন না গ্রামবাসীরা । সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন সে তার দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে গিয়েছে ৷"
এই বিষয়ে গীতা বর নামে এক মহিলা বলেন, "এখনও চাষের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে পাচার করছে সিরাজের দলবল । আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে । পুলিশকে বলতে গেলেই বলছে মীমাংসা করে নাও । কেন আমরা মীমাংসা করতে যাব ? আমরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই ! দিদি কি এ সব দেখতে পান না ? জেনেশুনেও চুপ করে রয়েছেন ? প্রশয় দিচ্ছেন অন্যায়কারীদের ? এখনও আমাদের বুকে ভয় নিতে রাত কাটাতে হয় ! কেন এটা হবে ? আমরা সুবিচার চাই ।"
এ দিকে, তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাত-সহ দলীয় নেতৃত্বরা বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রশমনে গ্রামে গ্রামে ঘোরেন । কিন্তু তা করতে গিয়ে উলটে তাঁদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় । কেন এতদিন পরে তাঁরা গ্রামে এসেছেন, সে কথাও এদিন শুনতে হয় শাসকদলের নেতাদের । ফলে, সন্দেশখালি কাণ্ডে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়ে বরং অস্বস্তি বাড়ছে শাসক শিবিরে ।
আরও পড়ুন: