পুরুলিয়া, 15 এপ্রিল: জঙ্গলমহলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা কেন্দ্র পুরুলিয়া ৷ গত লোকসভা নির্বাচনে থেকে জঙ্গলমহলের অন্যান্য জেলার মতো পুরুলিয়াতেও পদ্ম ফুলের প্রভাব দেখা গিয়েছে ৷ আদিবাসী এলাকাগুলিতে বঞ্চনা, নাগরিক পরিষেবা না-পাওয়া, অনুন্নয়নের অভিযোগকে হাতিয়ার করে পুরুলিয়া লোকসভায় 2019 সালে জিতেছিলেন বিজেপির প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ৷ তৃণমূলের প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতোকে প্রায় 2 লক্ষ ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি ৷ এবার আরেকটি লোকসভা নির্বাচন, গত পাঁচ বছরে সাংসদ কী কাজ করেছেন ? কি করতে পারেননি ? পুরুলিয়াবাসীর আশাপূরণে কতটা সফল সাংসদ ? তা নিয়ে ইটিভি ভারতের রিপোর্ট কার্ড ৷
1957 সালে তৈরি হয়েছিল পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র ৷ বাগমুণ্ডি, মানবাজার, বলরামপুর, কাশিপুর, পাড়া, জয়পুর এবং পুরুলিয়া মোট সাতটি বিধানসভা নিয়ে এই পুরুলিয়া লোকসভা ৷ পুরুলিয়া লোকসভার বেশিরভাগ বিধানসভার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের সমাজে অনুন্নয়নের ছাপ সুস্পষ্ট ৷ সেখান থেকেই মূলত 2011 সালে রাজ্যে পরিবর্তনের ঝড় উঠেছিল ৷ পরবর্তীকালে রাজ্যে পরিবর্তন হলেও, দিনলিপিতে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া জেলার এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ৷
আর সেই কারণেই হয়তো পুরুলিয়া লোকসভার ভোটাররা 2019-এর নির্বাচনে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মকে বেছে নিয়েছিল ৷ সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ৷ তিনি তাঁর সম্পূর্ণ 5 বছরে বহু কাজ করেছেন বলে দাবি করেছে পুরুলিয়া জেলার বিজেপির নেতৃত্ব ৷
সেই দাবি অনুযায়ী, সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো গত 5 বছরে মোট 18 কোটি 54 লক্ষ 15 হাজার টাকার উন্নয়নের কাজ করেছেন ৷ যদিও, কোভিডের সময় 2020-21 অর্থবর্ষে 5 কোটি ও 2021-22 অর্থবর্ষে 3 কোটি টাকা পাননি কোনও সাংসদই ৷ আর যেটুকু টাকা পেয়েছেন সমস্তটাই তিনি খরচ করেছেন উন্নয়নের স্বার্থে, এমনটাই দাবি খোদ সাংসদের ৷ বিজেপির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী,
- রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জলের জন্য 8 কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ৷ এর মধ্যে যেমন রয়েছে সাবমারসিবল পাম্প, ডিপ টিউবওয়েল, পাকা রাস্তা, স্ট্রিট লাইট ও সোলার লাইট ৷
- এছাড়াও 15টি কমিউনিটি সেন্টার তৈরিতে 2 কোটি 27 লাখ 44 হাজার টাকা ব্যয় করেছেন সাংসদ ৷
- বিভিন্ন স্কুলে ক্লাসরুম তৈরি করতে 1 কোটি 47 লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন ৷
- কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করতে 1 কোটি 25 লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে ৷
- কোভিডের সময় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিকের তহবিলে 50 লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতা ৷
- উল্লেখযোগ্য আরও কাজগুলির মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের বেড, রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র, ল্যাবরেটরি, পার্ক ও মাল্টি জিম নির্মাণ, হস্টেল, প্রার্থনা সভাগৃহ, শ্মশানঘাট নির্মাণ, কবরস্থানের বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি ও মন্দিরের উন্নয়ন ৷
যদিও, কেন্দ্রীয় সরকারের সাংসদ তহবিলের ওয়েবসাইটের তথ্য অন্য কথা বলছে ৷ সেই তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রত্যেক সাংসদের মতো জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর নামে 17 কোটি টাকা রবাদ্দ ছিল ৷ যার মধ্যে মাত্র 5 কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে পাশ করাতে পেরেছেন তিনি ৷ 12 কোটি টাকা এখনও সরকারের ঘরে পড়ে রয়েছে ৷ আর পাশ হওয়া 5 কোটির মধ্যে 2.98 কোটি টাকা এখনও খরচ করতে পারেননি তিনি ৷
যদিও, সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো দাবি করেছেন, তাঁর অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা পুরুলিয়া কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মারণ রোগ এবং অন্যান্য চিকিৎসার জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, তাঁর চেষ্টাতেই জেলায় নতুন রেলপথের সূচনা হয়েছে ৷ পাশাপাশি 7টি স্টেশনে অমৃত ভারত রেল প্রকল্পে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে ৷ সেই স্টেশনগুলিকে পুরুলিয়ার বিভিন্ন মনীষীদের নামে উৎসর্গ করা হবে ৷ এছাড়াও পুরুলিয়ার গোশালা মোড়ে উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে, পুরুলিয়া থেকে কোটশিলা যাওয়ার ডাবল লাইন হচ্ছে ৷
অন্যদিকে সাংসদের এই রিপোর্ট কার্ডকে কটাক্ষ করেছেন পুরুলিয়া জেলার তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া ৷ তাঁর কথায় "সাংসদ হিসেবে জ্যোতির্ময় সিং মাহাত সম্পূর্ণ ব্যর্থ ৷ পুরুলিয়ায় তিনি পাঁচ বছরে কোনও কাজই করেননি ৷ যদি, আসল তথ্য নিয়ে বেরোন, তাহলে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবেন না ৷ কোভিডের সময় আমাদের দলের লোকজন মানুষের সব প্রয়োজনে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ সেই সময় উনি কোথায় ছিলেন ?"
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে সাংসদের কাজ নিয়ে ৷ সাংসদের কাজ নিয়ে অনেকেই খুশি এবং তাকে চাইলেই সময় মতো পাওয়া গিয়েছে বলে একাংশের দাবি ৷ আবার কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা সাংসদকে চোখেই দেখেননি ৷ পুরুলিয়া লোকসভায় পুনরায় বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ৷ আর এবার তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো ৷ এখন জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছেন পুরুলিয়ার বিদায়ী সাংসদ ৷ এখন দেখার সাংসদের গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন তাঁর ভোট বাক্সে প্রভাব দেখায় কিনা ৷
আরও পড়ুন: