বর্ধমান, 24 জানুয়ারি: এ রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা যে নেই, বুধবার পূর্ব বর্ধমানের যাওয়ার আগেই সেই কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । জোট বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পরেই বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপিকে এক সারণীতে এনে বর্ধমান থেকে ফের আক্রমণ শানালেন তিনি । রাজনীতির ময়দানে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীপক্ষ যখন তাঁর সরকারকে কোণঠাসা করতে বদ্ধপরিকর, ঠিক তখনই নিয়োগ না হওয়ার কারণ হিসাবে এই বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় তুললেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। বুঝিয়ে দিলেন ‘রাম-বাম ও শ্যামের’ কারণে চাকরি হচ্ছে না নতুন প্রজন্মের । সরকার চাকরি দিতে প্রস্তুত থাকলেও আদালতে গিয়ে বাধা তৈরির চেষ্টা করছে তারা ।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "শিক্ষকদের নিয়োগের বিষয়টি তৈরি আছে । কয়েক হাজার শিক্ষক আমরা নেব । কিন্তু আদালতে মামলা করে আটকে রেখে দিয়েছে এই সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি । অর্থাৎ রাম-বাম-শ্যামের জোট । তাই তরুণদের চাকরি আটকে গিয়েছে । তা না হলে 60-70 হাজার ছেলেমেয়েরা শুধু স্কুলেই চাকরি পেতেন জেনে রাখবেন । আমরা সমস্ত কিছু তৈরি করে বসে আছি । আপনারা আওয়াজ তুলুন ।"
শুধু বিরোধীদের আক্রমণ নয়, এ দিন বিচারব্যবস্থার কাছেও শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মমতা । তিনি বলেন, "আমরা চাই, যদি কোথাও অন্যায় হয়ে থাকে আদালত তা শুধরে দিক । আমার কিছু বলার নেই । কিন্তু নতুন ছেলেমেয়েরা যাতে সুযোগ পায়, তার জন্য অবিলম্বে যে শূন্যপদ আছে, সেগুলি পূরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে । কারণ আমি চাই শূন্যপদগুলো পূরণ হলে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হবে ।"
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও বলেন, "আমি দুঃখিত কখনও কখনও সরকারের হাত বেঁধে রেখে দেওয়া হয় । কেউ কেউ ভোটে জেতে না, কোর্টে চলে যায় । আদালতের প্রতি আমার সম্মান আছে । আমি কোনও বিচারপতি সম্পর্কে বলতে চাই না । বলাও যায় না । তবে রায় সম্পর্কে বলা বা সমালোচনা করা যেতে পারে । এটা নিয়মে আছে । আমি নিজেও আইনজীবী । আমি জানি কিভাবে কী করতে হয়, না করতে হয় । আমি আবেদন করব, মাননীয় আদালতের কাছে দয়া করে নতুন শূন্যপদগুলো পূরণ করার ব্যবস্থা করে দিন । যাতে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে চাকরির সুযোগ পায় । তাদের চাকরি তৈরি আছে ।"
রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন নির্বাচনের আগে তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল কর্মসংস্থান । নিয়োগ তথা দুর্নীতির প্রশ্নে যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এই অবস্থায় একমাত্র নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিই তার ভাবমূর্তি ফেরাতে পারে । কিন্তু আদালতে মামলা অনেক সময় নতুন নিয়োগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ৷ সেই কারণেই বর্ধমানের সভা থেকে সরাসরি বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে রাজ্যে নিয়োগ আটকে রাখার জন্য কাঠগড়ায় তুললেন তিনি ।
আরও পড়ুন: