মুম্বই, 18 এপ্রিল: এ বার লোকসভা নির্বাচনে সবার চোখ রয়েছে বারামতীর দিকে ৷ যেখানে 'নারী শক্তি'র উপর আস্থা রেখে লড়াই করছে এনসিপির দুটি দল ৷ সম্মুখসমরে এনসিপির সুনেত্রা পাওয়ার এবং এনসিপি (এসপি)-এর সুপ্রিয়া সুলে, পাওয়ার পরিবারের সদস্য হিসাবে যাঁরা একটা সময়ে উভয়েই কাছাকাছি ছিলেন, তবে এখন তাঁরা রাজনীতিতে বিপরীত অবস্থানে ভোটের ময়দানে নেমেছেন ৷
বিদায়ী সাংসদ তথা শরদ পাওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে তাঁর বাবার নেতৃত্বে এনসিপি (শরদচন্দ্র পাওয়ার)-র টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । অন্যদিকে, নিজের শক্তি এবং রাজনৈতিক যোগ্যতা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর অজিত পাওয়ার তাঁর স্ত্রী সুনেত্রা পাওয়ারকে তাঁর দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ৷
বারামতী হল দেশের এমন একটি নির্বাচনী এলাকা যেখানে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার একচ্ছত্রভাবে দীর্ঘদিন দখলে রেখেছেন ৷ তবে অসুস্থতা এবং বার্ধক্যের কারণে ভোটের ধকল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে হয়েছিল তাঁকে ৷ তাঁরই পথ ধরে বারামতী আসনে তাঁর মেয়ে সুপ্রিয়ার প্রতি ভোটাররা সামান্য ঝুঁকে রয়েছেন বলে মত রাজনীতির কারবারিদের ৷
জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির প্রধান এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের স্ত্রী সুনেত্রা পাওয়ার, তাঁর ভগ্নিপতি সুপ্রিয়া সুলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ ভোটারদের উদ্দেশে একটি দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, 2024 লোকসভা নির্বাচন তাঁর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে ৷ বিশেষ করে যখন একই পরিবারের দুই মহিলা একে-অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ।
যদিও মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পটভূমিতে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা রয়েছে, যা কয়েক দশক ধরে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী পরিবারের গড় হিসেবে গড়ে উঠেছে ৷ বারামতীও পাওয়ার পরিবারের ঘাঁটি, যা অস্তিত্বের কারণে আরও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে । কয়েক দশক ধরে, পাওয়ার পরিবার এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র নেতৃত্বাধীন শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বে বারামতী লোকসভা কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে । তবে, এবার ছবিটা আলাদা । 2023 সালের জুলাই মাসে পরিবারের পিতৃপুরুষের ভাইপো তথা বর্তমান উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপিতে বিভক্ত হওয়ার পরে, বারামতী লোকসভা কেন্দ্র এ বার একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে ৷
সুনেত্রা পাওয়ার কে ?
সুনেত্রার উপস্থিতি রাজনীতির আঙিনায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য না হলেও স্থানীয়দের মধ্যে তিনি বহিনী (বড় বোন) হিসেবে পরিচিত ৷ মারাঠওয়াড়ার ধারাশিবের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পাতিল পরিবারের সদস্য সুনেত্রা, পাওয়ার পরিবার পরিচালিত বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডের সদস্য ৷
সুনেত্রার জয়ের সম্ভাবনা কী?
বরাবরের মতো সুপ্রিয়া তাঁর বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে এই অঞ্চলের এগিয়ে আছেন । অন্যদিকে, সুনেত্রা তাঁর স্বামী অজিত পাওয়ারের জোরে কিছুটা উপকৃত হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে । শরদ পাওয়ার বারামতীর মুখ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু পাওয়ারের 'ম্যান ফ্রাইডে' হলেন অজিত পাওয়ার, যিনি নির্বাচনী এলাকাটিকে পারিবারিক দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছেন । সুনেত্রার কথায়, "এই দ্বন্দ্বটা আমি প্রথমে ভালোভাবে নিতে পারিনি । আমি কিন্তু সবার স্বার্থ বিবেচনা করে, নিজেকে সংসদের নির্বাচনের ময়দানে দেখতে পাই ৷ রাজনীতিতে প্রবেশ তাও আবার আমার পরিবারের বিরুদ্ধে, এটা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল ৷ আমার স্বামী একটি নতুন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছিলেন, যা শুধু তাঁর নয়, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির সফরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত শীর্ষ নেতা এবং দলের কর্মীদের দ্বারা নেওয়া হয়েছিল ৷" তাঁর মতে, পাওয়ার পরিবার উন্নয়নমূলক রাজনীতির তত্ত্বকে সমর্থন করেছে ৷ 18 এপ্রিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সুনেত্রা তাঁর চিঠি প্রকাশ করেছেন, কারণ ভোটগ্রহণ 7 মে হওয়ার কথা রয়েছে ।
স্বামীর পাশে সুনেত্রা
স্বামী অর্থাৎ অজিত পাওয়ারের কাকা তথা এনসিপি প্রতিষ্ঠাতা শরদ পাওয়ারকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন সুনেত্রা পাওয়ার ৷ তিনি বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্তটি লক্ষ লক্ষ দলীয় কর্মী, মহারাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক এবং সংসদ সদস্যদের দ্বারা নেওয়া হয়েছিল ।" এই সিদ্ধান্তটি সাহেবের (শারদ পাওয়ার) বিরুদ্ধে ছিল না, তবে দলের পক্ষ থেকে আগে নেওয়া অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল ।"
সুনেত্রা আরও বলেন, "বারামতী থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমার জন্য একটি অ্যাসিড পরীক্ষা ৷ কিন্তু একই সময়ে আমি আমার মধ্যে সেই শক্তি বহন করি, যা এই সময়ে অন্য যে কোনও সাধারণ মহিলার মধ্যে ফুটে ওঠে ৷" তিনি বলেছেন যে, এই নির্বাচন তাঁর সামাজিক কাজ প্রসারিত করার সুযোগ এবং রাজনীতিতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর স্বামীর মতোই স্বচ্ছ এবং সরল । তিনি বিকশিত ভারত এবং বিকশিত বারামতীর ভোটারদের কাছে নিজের জন্য একটি আবেগপূর্ণ আবেদন করেছেন ।
তিনি বলেন, "এই লোকসভা নির্বাচন আমার জন্য উন্নয়নের বিষয় । এটি দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখার এবং আমার দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করার বিষয় । নরেন্দ্র মোদি বিশ্বব্যাপী ভারতের মর্যাদা উন্নীত করেছেন, আসুন আমরা নরেন্দ্র মোদীজিকে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের পরাশক্তি হওয়ার যাত্রায় অবদান রাখি । আমি আস্থা রাখি যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় বারামতী লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা তাঁদের ভালোবাসা এবং আস্থা প্রদর্শনে নড়বেন না ৷"
আরও পড়ুন: