কলকাতা, 23 মার্চ: চার আসনের প্রার্থী ঘোষণা করল বামফ্রন্ট ৷ তৃতীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে শনিবার সন্ধ্যায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার ক্ষেত্রে আরও আলোচনা প্রয়োজন ৷ মুর্শিদাবাদ থেকে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে প্রার্থী করল বামেরা ৷ পাশাপাশি রানাঘাট আসন থেকে বামেদের প্রার্থী প্রাক্তন সাংসদ অলোকেশ দাস ৷ অন্যদিকে, বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে লড়াই করবে সুকৃতী ঘোষাল এবং বোলপুর আসন থেকে শ্য়ামলি প্রধানকে প্রার্থী করেছে বামেরা ৷ এঁরা দু'জনেই নতুন মুখ বলে শনিবার জানান বিমান বসু ৷
ইতিহাস বলছে, মহম্মদ সেলিম পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের দ্বিতীয় রাজ্য সম্পাদক যিনি পদে থাকাকালীন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে সূর্যকান্ত মিশ্র 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ কিন্তু জিততে পারেননি। এবার কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি সেলিম। 1964 সালে অবিভিক্ত সিপিআই থেকে ভেঙে সিপিএম তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয়বার দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার কোনও রাজ্য সম্পাদক নির্বাচনে লড়ছেন।
কিন্তু এতটা ভেঙে ভেঙে কেন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছে বামেরা ? তবে কি জোটের ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় ? এদিন তারও উত্তর দিয়েছেন বিমান বসু ৷ তাঁর কথায়, "আরও আলোচনা প্রয়োজন ৷ সেই আলোচনা সম্পূর্ণ না হলে আমাদের সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার একটু অসুবিধা আছে ৷ অনেকেই এক সঙ্গে 42 প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে, কেউ কিছু কিছু করছে ৷ কিন্তু বামফ্রন্ট-এর ক্ষেত্রে তা সম্ভব না ৷ আমাদের ক্ষেপে ক্ষেপে প্রার্থী ঘোষণা করতে হচ্ছে ৷ এখন সব সিটে প্রার্থী নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেই আলোচনা না হলে 42 আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করতে পারছি না।" একই সঙ্গে, এদিন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়েও সরব হয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ৷ তাঁকে গ্রেফতারি আসলে গণতন্ত্রের উপর আঘাত বলেও মন্তব্য করেন বিমান বসু ৷
বিমান বসু বলেন, "একটা স্বৈরাচারী প্রবণতা কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ৷ তারা এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে যাতে মনে হচ্ছে তারা যা খুশি করতে পারে ৷ যেটা সুস্থ গণতন্ত্রের পক্ষে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় ৷ একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে ভোটের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয় ৷ কেজরিওয়ালকে যেভাবে ধরল, তাঁর দোষ তো এখনও প্রমাণিত নয়, দোষ প্রমাণিত হলে অন্য ব্য়াপার ৷ ভোটের আগেই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারত ৷ কিন্তু ভোটের মুখে যেভাবে গ্রেফতার করা হল তা ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্য়াবস্থার পক্ষে অশনি সংকেত ৷ আমরা এটাকে সমর্থন করতে পারছি না ৷ দেশে স্বৈরাচারী প্রশাসন চলছে। তারা মনে করছে, তারা যা কিছু করতে পারে।" এখানেই শেষ নয়, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, "নির্বাচনী বিধি চালু হওয়ার পরে একটা রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী কে ধরে নিয়ে যাওয়া যায় না। উচিৎ না। গনতান্ত্রিক পদ্ধতি বিরোধী।"
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির বিরোধিতার পাশাপাশি রাজ্য নিয়েও তোপ দেগেছেন বিমান বসু ৷ তিনি বলেন, "আমাদের রাজ্যে দুর্নীতির ক্ষেত্রে যে কথা বলা হচ্ছে তা কার্যকরি হচ্ছে না ৷ একজন মন্ত্রীর ঘর থেকে 41 লক্ষ টাকা এবং নথি পাওয়া গিয়েছে ৷ যার থেকে সন্দেহ হয় রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন ৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, কেন্দ্রের তেমন কোনও ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না ৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীতির আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি ৷ আদতে তৃণমুল-বিজেপি বাইনারি পলিটিকক্স হচ্ছে।"
অন্যদিকে, গার্ডেনরিচ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিমান বসু বলেন, "গার্ডেনরিচে যে ঘটনা ঘটে গেল তার জন্য দায়ী কে ? 11 টা জীবন চলে গেল। ভয়ংকর ব্যাপার! পয়সা দিলে সব হয়ে যাবে ? আর কী ঘটবে কে জানে ? মানুষের জীবন নিয়ে খেলা উচিত নয়।"
আরও পড়ুন
সিবিআই ব়্যাডারে মহুয়া মৈত্রের বাবা, তল্লাশি শেষে বাজেয়াপ্ত ল্যাপটপ-নথি
টানা 14 ঘণ্টা জেরা শেষে মন্ত্রী চন্দ্রনাথের ঘর থেকে উদ্ধার 41 লক্ষ টাকা