ছিন্দওয়ারা, 2 এপ্রিল: লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে লড়াইয়ের প্রধান দুটি মেরু হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিরোধী পক্ষ ৷ কিন্তু মধ্যপ্রদেশে সবার নজর রয়েছে কমল নাথের দিকে ৷ কারণ ছিন্দওয়াড়াই একমাত্র লোকসভা আসন, যা গত 44 বছর ধরে বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে । এখানে কাজ করে না মোদির ক্যারিশমা ৷ কোনও হাতিয়ারেই ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে না বিজেপি । তাই এ বার ছিন্দওয়াড়ায় শিকে ছিঁড়তে প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে দায়িত্ব দিয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ আর এই নেতার তৎপরতা বৃদ্ধিতে তাঁর বিরুদ্ধে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার অভিযোগ এনেছেন কমল নাথ ।
ছিন্দওয়াড়ায় বাংলার পাপ ধুয়ে ফেলার প্রয়াস: পরাসিয়ার বিধায়ক সোহান বাল্মিকী বলেছেন, "কৈলাস বিজয়বর্গীয় বিজেপিতে যোগদান করানোর মেশিন ছাড়া আর কিছুই নন । যখন তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি সেখানেও পূর্ণ গতিতে যোগদানের যন্ত্র চালান ৷ একের পর এক নেতা দলবদলু হয়ে যোগ দেন বিজেপিতে ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলায় বিজেপিকে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয় এবং এরপর পশ্চিমবঙ্গ থেকে সোজা ইন্দোরে চলে যান কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ৷ বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এরপর তাঁকে দীর্ঘ সময় কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়নি ৷ কারণ মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা পশ্চিমবঙ্গের 294টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র 77টি । বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস ৷
বাল্মিকী বলেন যে, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বক্তৃতা দিতে বিশেষ পটূ ৷ এই কাজে তাঁর দুর্দান্ত দক্ষতা রয়েছে । তবে বিজেপির নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থেকে কিছুই করতে পারেননি ৷ তাই ছিন্দওয়াড়ায় এসে জয়েনিং মেশিনের মাধ্যমে নিজের গায়ের দাগ দূর করার চেষ্টা করছেন মন্ত্রী ।
'পুণ্যভূমিকে কৈলাশ করছেন রণভূমি': সোশাল মিডিয়ায় কমল নাথ লিখেছেন, "আমি ছিন্দওয়াড়াকে ভারতের সবচেয়ে উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য 45 বছর ধরে তপস্যা করছি । ছিন্দওয়াড়া আমার জন্য কর্মভূমি এবং তপস্যার জায়গা । বিজেপির লোকেরা এই পুণ্যভূমিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায় । এ বারের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যস্ত । নেতাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে । ছিন্দওয়াড়ার মানুষ বিজেপির এই কাজটি খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে এবং যাঁরা ছিন্দওয়াড়াকে আক্রমণ করছেন, তাঁদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনতা ।
কমল নাথের কথায়, প্রতিটি নির্বাচনের আগে, ভারতীয় জনতা পার্টি মিথ্যা, প্রতারণা এবং দর কষাকষির খেলা খেলে ৷ কিন্তু যখন নির্বাচনের ফলাফল আসে, তখন প্রকাশ পায় যে ছিন্দওয়াড়ার মানুষ বিজেপিকে তার অপরাধের জন্য উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে । ছিন্দওয়াড়া কোনও অসম্মান সহ্য করবে না এবং তার উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে যেতে থাকবে ।
একসময় ইন্দিরা গান্ধির আগ্রহ ছিল, এখন এটাই মোদির ফোকাস: 1980 সালের নির্বাচনে কমল নাথ প্রথমবার ছিন্দওয়াড়া থেকে লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন । সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি নির্বাচনের প্রচারে ছিন্দওয়াড়ায় এসেছিলেন । ছিন্দওয়াড়ার শুক্লা গ্রাউন্ডে ইন্দিরা গান্ধি বলেছিলেন যে, "কমলনাথ আমার তৃতীয় ছেলে এবং আমি তাঁকে আজ ছিন্দওয়াড়ার কাছে হস্তান্তর করছি।"
তারপর থেকে গান্ধি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তৃতীয় পুত্র ছিন্দওয়াড়ায় একজন অদম্য যোদ্ধা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নজর রয়েছে এই আসনে । অমিত শাহ যখন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার করতে ছিন্দওয়াড়া পৌঁছন, তখন তিনি বলেছিলেন যে "পুরো মধ্যপ্রদেশে বিজেপি 28টি আসন জিতেছে । একমাত্র আসন যেখানে আমরা জিততে পারিনি তা হল ছিন্দওয়াড়া ৷ কিন্তু এখন আমরা আমাদের ব্যাগে এটি ফিরে পাব ।"
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক কৌশলীর প্রচার: 2018 সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে 2023 সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ অনেক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এখানে জয়লাভের জন্য নানা কৌশল তৈরি করেছেন এবং প্রচার করেছেন ৷ কিন্তু কমল নাথকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন সবাই । 2018 সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই ছিন্দওয়াড়ার সাফ মাঠে একটি নির্বাচনী সমাবেশ করেছিলেন । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ 2023 সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রচার করেছিলেন ।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, নরেন্দ্র সিং তোমর, প্রহ্লাদ প্যাটেল, রাজ্যসভার সাংসদ সুশীল মোদি, কবিতা পতিদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভানুপ্রতাপ সিং ভার্মা, ফাগ্গান সিং কুলাস্তে এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এল মুরুগান এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকরকেও ছিন্দওয়াড়ার ইনচার্জ করে মাঠে নামানো হয়েছিল ৷ কিন্তু কমল নাথকে পরাজিত করতে কেউই সফল হননি । এর বাইরেও অনেক নেতা প্রচার চালিয়েছেন । একই সময়ে, কংগ্রেসের কোনও বড় নেতা কমলনাথ ছাড়া প্রচার করতে ছিন্দওয়াড়া জেলায় আসেন না, কারণ কমল নাথের ক্যারিশ্মাই এখানে সবচেয়ে বেশি ৷
বিধায়ক এবং মেয়র-সহ প্রায় 5000 কর্মী যোগ দিয়েছেন: এখন কমল নাথকে কোণঠাসা করার কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি । তাঁকে মহাকৌশল বিভাগের ক্লাস্টার ইনচার্জও করা হয়েছে । কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ছিন্দওয়াড়ায় নিজের কাজ শুরু করার পর থেকে অমরওয়াড়ার একজন কংগ্রেস বিধায়ক, ছিন্দওয়াড়া পৌরনিগমের মেয়র-সহ প্রায় 5000 জন কংগ্রেস কর্মীকে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়েছে । কমল নাথ এখন অর্থ শক্তি, পেশিশক্তি এবং ভয় দেখানোর রাজনীতি করার অভিযোগ করছেন । মুখ্যমন্ত্রী ড. মোহন যাদব ছিন্দওয়াড়ায় নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেন যে, "এখন মানুষ কমল নাথের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছে না । তাঁরা মোদির গ্যারান্টির উপর ভরসা করছে । অতএব, বিজেপির সঙ্গে ক্রমাগত একত্রিত হওয়ার পর্ব অব্যাহত রয়েছে এবং কমল নাথ এখন সভা-সমাবেশে কান্নাকাটি করে ভোট চাইছেন ।"
আরও পড়ুন: