বর্ধমান, 10 মার্চ: আর দিন কয়েকের মধ্যেই ঘোষণা হতে চলেছে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ । বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তা বাড়ছে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের । দলীয় সূত্রে খবর, যেভাবে দলীয় কোন্দল দিনে দিনে বাড়ছে তাতে কর্মীদের কাছে লড়াই কঠিন হচ্ছে । বুথ কমিটিও এখনও সেভাবে বিজেপি নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি । ফলে তাদের ভরসা এখন বর্ধমান থেকে অযোধ্যাগামী আস্থা ট্রেন ।
তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি সারা বছর মানুষের পাশে থাকে না ৷ তারা শুধু ধর্মের নামে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করে ৷ অযোধ্যাগামী ট্রেন সেটাই প্রমাণ করে । কিন্তু মানুষ কোনভাবেই সেই ফাঁদে পা দেবে না । পালটা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, যেহেতু রামমন্দির আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান । তাই বিজেপি সেখানে যুক্ত আছে ।
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "বিজেপি মানুষের সঙ্গে থাকে না । তারা শুধু ধর্মের নামে রাজনীতি করে । মানুষ এটা বুঝতে পেরে গিয়েছে । তারা ভাবছে ধর্মের নামে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচনে লড়বে । মানুষ তাদের ভোট দেবে না ।" বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন,"অযোধ্যা যাওয়া নিয়ে মানুষের আগ্রহ প্রবল । আর যেহেতু রামমন্দির আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান । তাই এর সঙ্গে ভোটের কোন সম্পর্ক নেই ।"
জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির সাংগঠনিক জেলার তরফে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় পর্যন্ত বিজেপির সংগঠন অনেক মজবুত ছিল । কিন্তু 2021 সালে ফের তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে বিজেপি কর্মীদের উপরে অত্যাচার শুরু হয় । বিজেপি কর্মী খুন, তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর, বাড়ি ছাড়া করা, পরিবারের উপর হামলা-সহ একাধিক ঘটনা ঘটেছে । সেই সময় থেকেই দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায় । এইসব কর্মীরা সকলেই প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন । যদিও বিজেপির দাবি, প্রতিটা বুথকে মজবুত করার জন্য এবার অন্য পন্থা নিয়েছে জেলা নেতৃত্ব । কীভাবে সেটা করা হচ্ছে, তা প্রকাশ্যে আনা হবে না ।
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া জিতেছিলেন 2439 ভোটে । বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র আছে তার মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর, বর্ধমান উত্তর, ভাতার, গলসি এই পাঁচটা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস পায় মোট 4 লক্ষ 72 হাজার 105টি ভোট ৷ অন্যদিকে বিজেপি পায় 3 লক্ষ 97 হাজার 842টি ভোট । অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে ছিল 74 হাজার 263টি ভোটে । শুধুমাত্র দুর্গাপুর পূর্ব ও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার উপরে ভর করেই বিজেপি প্রার্থী প্রায় আড়াই হাজার ভোটে জিতে যান । ফলে সেই চিত্র মাথায় রেখে বর্ধমানের কেন্দ্র গুলি থেকে কাভাবে জয় পাওয়া যায় সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বিজেপি ।
বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, যেহেতু রাম মন্দির নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উন্মাদনা আছে তাই ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে অযোধ্যা যাওয়ার জন্য আস্থা স্পেশাল ট্রেন । বর্ধমান স্টেশন থেকে যাত্রীদের দেখভাল করার জন্য মাঝেমধ্যেই থাকছেন সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া, জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা-সহ অন্যান্যরা । এমনকী বর্ধমান স্টেশনের বাইরে যাত্রীদের স্বাগত জানানোর জন্য ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে । স্টেশন চত্বরে বিশাল বাঁশের প্যান্ডেলও করা আছে । যেসব যাত্রী অযোধ্যায় যাচ্ছেন তাদের গলায় ঝোলানো থাকছে একটা করে ব্যাচ । যেটা টিকিট বলে গণ্য করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: