ETV Bharat / politics

হুগলির উন্নয়নে 17 কোটি খরচের দাবি লকেটের, দেখা মেলে না বলে ক্ষোভ উগরে দিলেন স্থানীয়রা - BJPs Locket Chatterjee Report Card

Lok Sabha Elections 2024: হুগলি লোকসভা কেন্দ্র ৷ 2019 সালে এই কেন্দ্র থেকেই জিতেছিলেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্য়ায় ৷ এবারও ওই আসনে তাঁকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি ৷ গত পাঁচ বছরের কাজের নিরিখে কী বলছে তাঁর রিপোর্ট কার্ড ?

BJPs Locket Chatterjee Report Card
BJPs Locket Chatterjee Report Card
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 8, 2024, 11:00 PM IST

Updated : Mar 9, 2024, 6:23 PM IST

দেখুন লকেটের রিপোর্ট কার্ড

হুগলি, 8 মার্চ: বামদুর্গ হিসেবে পরিচিত হুগলিতে 2009 সালে ফাটল ধরিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রত্না দে নাগ ৷ টানা 20 বছরের সাংসদ সিপিএমের রূপচাঁদ পালকে হারিয়ে তিনি লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন ৷ পরপর দু’বার ওই কেন্দ্রে সাংসদ থাকার পর বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান তিনি ৷ 70 হাজারেরও বেশি ভোটে তাঁকে হারিয়ে 2019 সালে প্রথমবার সাংসদ হন এই বিজেপি নেত্রী ৷

তারপর পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর ৷ চলে এসেছে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবারও হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে লকেটের উপরই ভরসা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে লকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে ৷ সকলেই জানতে উৎসুক যে কী আছে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের রিপোর্ট কার্ড-এ ?

ো
হুগলির বিখ্যাত হংসেশ্বরী মন্দির

সামগ্রিকভাবে সাংসদ উন্নয়ন তহবিল খরচের নিরিখে খুব একটা পিছিয়ে নেই এই বিজেপি সাংসদ ৷ গত পাঁচ বছরে (কোভিড অতিমারীর জন্য 2020-21 অর্থবর্ষে সাংসদরা তাঁদের তহবিলে কোনও টাকা পাননি তিনি) সব মিলিয়ে 17 কোটি টাকা ওই তহবিল থেকে খরচ করেছেন লকেট ৷ এর মধ্যে 2019-20, 2022-23 ও 2023-24 অর্থবর্ষে তিনি পাঁচ কোটি টাকা করে খরচ করেছেন ৷ 2021-22 আর্থিক বছরে তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচ হয়েছে 2 কোটি টাকা ৷

ো
বিখ্যাত চন্দননগর আদালত

কোটি কোটি টাকা যে বরাদ্দ হয়েছে, তাতে কাজ কী কী হয়েছে ? সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, "হুগলির বিভিন্ন ব্লকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে । বহু স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।" তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বা তাঁর উদ্য়োগে পাঁচ বছরে হুগলিতে যা যা হয়েছে, তার যে খতিয়ান পাওয়া গিয়েছে, সেটা হল -

  • সিঙ্গুর-সহ কয়েকটি স্কুলে সাব মার্সেবল পাম্প ৷
  • স্কুলের সীমানা প্রাচীর ও ক্লাসরুম নির্মাণ ।
  • স্কুলে সাইকেল শেড ও গ্রিল দেওয়ার কাজ ৷
  • স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা ।
  • পাঁচটির অধিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ ।
  • সাতটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় 95টি সোলার হাইমাস্ট লাইট লাগানো হয়েছে । আরও 272টি জায়গায় লাইট বসানোর কাজ চলছে ।
  • ড্রেন ও গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেটরে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে ।
  • প্রতিবন্ধীদের সাইকেল ও প্রবীণদের হুইল চেয়ার এবং কানে শোনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান ।
  • ব্যান্ডেল স্টেশনে উন্নয়নের জন্য 10 কোটি টাকার কাজ হয়েছে সাংসদের সুপারিশে ৷
    রেলের বিভিন্ন স্টেশনের শেড, বাথরুম ।
  • প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ড থেকে ক্যানসার ও জটিল রোগের জন্য 125টি পরিবার কে 2 কোটি টাকার সাহায্য করা হয়েছে সাংসদ ।
  • বিভিন্ন ব্লকে 60টি জলসত্র করা হয়েছে ।
    a
    হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত৷

সাংসদের কাছে দাবি পূরণের বিষয়টি পাশাপাশি বেশ কিছু কাজ হয়নি বলেও কেউ কেউ বলছেন ৷ সেগুলি কী কী, দেখা নেওয়া যাক একনজরে -

  • বলাগড়ের ভাঙ্গনের সমস্যা সমাধান হয়নি ।
  • ডানলপ টায়ার কারখানার পরিবর্তে অন্য কোনও শিল্প হয়নি ।
  • ভদ্রেশ্বর ও বৈদ্যবাটির মাঝে খুড়িগাছি স্টেশনের দাবি পূরণ হয়নি ।
  • হুগলি লোকসভার গ্যাঞ্জেস ও কোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই থাকে সারা বছর ।
  • শিমলাগড় রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভারের দাবি ।
  • গঙ্গা-সহ একাধিক নদীর দূষণের প্রতিকার ।

তবে উন্নয়ন-অনুন্নয়নের এই তরজার মধ্যেই এই সংসদীয় এলাকার অন্যতম বড় ইস্য়ু শিল্প ৷ কারণ, এই কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ছে সিঙ্গুর ৷ যেখানে টাটাদের গাড়ি তৈরির কারখানা মাঝপথে থমকে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলনের জেরে ৷ অনেকে বলেন, ওই ঘটনাই বাংলায় শিল্পবন্ধ্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে ৷ স্বাভাবিকভাবে গত দেড় দশকে প্রতিটি নির্বাচনেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে এসেছে ৷

এবারও যে তা আসবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ তাই তিনি বলছেন, "এখানে শিল্প হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল । সেই সম্ভাবনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাংলায় 12 বছরে কোনও শিল্প হয়নি । সিন্ডিকেট-তোলাবাজি এত ভয়ংকর যে কেউ থাকতে চাইছেন না ।"

একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, "যখন মোদিজির সরকার আসবে, তখন এ রাজ্যে বিনিয়োগ হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলে গিয়ে বিজেপি সরকার এলে টাটারাও প্রস্তুত এই বাংলার শিল্প করার জন্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে টাটাদের কাছে বিনিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম । আগামিদিনে জমি জট কাটিয়ে এই সিঙ্গুর থেকেই শিল্প হবে ।"

এছাড়া হুগলির জ্বলন্ত সমস্যা বলাগড়ে গঙ্গার ভাঙ্গন । সাংসদের কথায় উঠে এসেছে গঙ্গার ভাঙনের প্রসঙ্গও ৷ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, নমামি গঙ্গে প্রকল্পে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা রাজ্য সরকার খরচ করছে না ৷ তাই এই অবস্থা ৷

কাজের খতিয়ান, দাবি পূরণ না হওয়ার হিসেব থেকে আগামীর প্রতিশ্রুতি সবই তো হল ! কিন্তু হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ কি বিজেপি সাংসদের পারফরম্যান্সে খুশি ? মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে ৷ কিছু মানুষের অভিযোগ, ভোটের সময় লকেট চট্টোপাধ্যায় দেখা যায় ৷ অন্য সময় দেখা যায় না। তাঁর কাজের নিরিখে তাঁকে কেউ 20 শতাংশ, কেউ আবার 60 শতাংশ, কেউ 70 শতাংশ নম্বর দিয়েছেন সাংসদকে ।

চন্দননগরেরটোটো চালক বাবু রায় বলেন, "হুগলির সাংসদ লকেটদিকে আমরা খুবই কম দেখেছি আমাদের কাছে আসতে । সাংসদ তহবিলের যে উন্নয়নের খতিয়ান দিচ্ছেন তা আমরা কেউই ভালোভাবে বুঝতে পারছি না । আমাদের রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই । বেড়েছে টোটো চালকের সংখ্যা । সেক্ষেত্রেও দিদি বা দাদা কেউই সাহায্য জন্য এগিয়ে আসেনি । আমাদের সমস্যা শোনার মতো কাউকেই দেখতে পাই না । আগামিদিনে যেই জয়ী হন না কেন টোটো চালকদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মের ব্যবস্থা করুক । এখানে জুটমিল ও কারখানা বন্ধ রয়েছে । বাধ্য হয়ে টোটোর সংখ্যা বাড়ছে ৷"

বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও তৃণমূল কংগ্রেস এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি ৷ ঘোষণা হয়নি বাম কিংবা কংগ্রেস প্রার্থীর নামও ৷ ফলে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, তার পূর্বাভাস এখনই দেওয়া সম্ভব নয় ৷ কিন্তু যেই জিতুন না কেন যে কাজগুলি হুগলির জন্য করা যেতে পারে, তার একটা তালিকা দিয়েছেন চন্দননগরের রাসবিহারী ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা কল্য়াণ চক্রবর্তী ৷

তিনি বলেন, "হুগলি লোকসভা তথা হুগলিতে কৃষিপণ্যের বাজার রয়েছে। এই জেলায় বিদেশি টেকনোলজিতে ফুড প্রসেসিং ইউনিট ও শিল্প তৈরি করলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে । হুগলিতে একদা গঙ্গা নদীভিত্তিক বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই গঙ্গাকে কেন্দ্র করেই ইউনেস্কো জোন তৈরি করতে পারলে, পর্যটন শিল্পেও উন্নতি হবে ৷’’

তিনি সিঙ্গুরের কথাও বলেছেন ৷ কল্য়াণের মতে, "সিঙ্গুরের যে শিল্প-সম্ভাবনা ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই যদি সিঙ্গুর-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে আইটি সেক্টর তৈরি করা যায় রাজারহাটের মতো, তাহলেও একটা দিশা পাবে যুবসমাজ । এছাড়াও রাজারহাট থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত যদি ফ্লাইওভার তৈরি করা যায়, তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিক তৈরি হবে ।" স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে হুগলিতে । সেই জন্য মনীষী পার্ক তৈরি জন্য সাংসদের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তিনি । সেটা হলেও বহু মানুষ জীবিকার সন্ধান খুঁজে পাবে বলেও মনে করেন তিনি ।

আরও পড়ুন:

রেল পরিবহণে বিকাশ, আক্ষেপ শিল্পতালুক নিয়ে; জয়ন্ত রায়ের 5 বছরের খতিয়ান

দেখুন লকেটের রিপোর্ট কার্ড

হুগলি, 8 মার্চ: বামদুর্গ হিসেবে পরিচিত হুগলিতে 2009 সালে ফাটল ধরিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রত্না দে নাগ ৷ টানা 20 বছরের সাংসদ সিপিএমের রূপচাঁদ পালকে হারিয়ে তিনি লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন ৷ পরপর দু’বার ওই কেন্দ্রে সাংসদ থাকার পর বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান তিনি ৷ 70 হাজারেরও বেশি ভোটে তাঁকে হারিয়ে 2019 সালে প্রথমবার সাংসদ হন এই বিজেপি নেত্রী ৷

তারপর পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর ৷ চলে এসেছে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবারও হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে লকেটের উপরই ভরসা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে লকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে ৷ সকলেই জানতে উৎসুক যে কী আছে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের রিপোর্ট কার্ড-এ ?

ো
হুগলির বিখ্যাত হংসেশ্বরী মন্দির

সামগ্রিকভাবে সাংসদ উন্নয়ন তহবিল খরচের নিরিখে খুব একটা পিছিয়ে নেই এই বিজেপি সাংসদ ৷ গত পাঁচ বছরে (কোভিড অতিমারীর জন্য 2020-21 অর্থবর্ষে সাংসদরা তাঁদের তহবিলে কোনও টাকা পাননি তিনি) সব মিলিয়ে 17 কোটি টাকা ওই তহবিল থেকে খরচ করেছেন লকেট ৷ এর মধ্যে 2019-20, 2022-23 ও 2023-24 অর্থবর্ষে তিনি পাঁচ কোটি টাকা করে খরচ করেছেন ৷ 2021-22 আর্থিক বছরে তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচ হয়েছে 2 কোটি টাকা ৷

ো
বিখ্যাত চন্দননগর আদালত

কোটি কোটি টাকা যে বরাদ্দ হয়েছে, তাতে কাজ কী কী হয়েছে ? সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, "হুগলির বিভিন্ন ব্লকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে । বহু স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।" তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বা তাঁর উদ্য়োগে পাঁচ বছরে হুগলিতে যা যা হয়েছে, তার যে খতিয়ান পাওয়া গিয়েছে, সেটা হল -

  • সিঙ্গুর-সহ কয়েকটি স্কুলে সাব মার্সেবল পাম্প ৷
  • স্কুলের সীমানা প্রাচীর ও ক্লাসরুম নির্মাণ ।
  • স্কুলে সাইকেল শেড ও গ্রিল দেওয়ার কাজ ৷
  • স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা ।
  • পাঁচটির অধিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ ।
  • সাতটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় 95টি সোলার হাইমাস্ট লাইট লাগানো হয়েছে । আরও 272টি জায়গায় লাইট বসানোর কাজ চলছে ।
  • ড্রেন ও গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেটরে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে ।
  • প্রতিবন্ধীদের সাইকেল ও প্রবীণদের হুইল চেয়ার এবং কানে শোনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান ।
  • ব্যান্ডেল স্টেশনে উন্নয়নের জন্য 10 কোটি টাকার কাজ হয়েছে সাংসদের সুপারিশে ৷
    রেলের বিভিন্ন স্টেশনের শেড, বাথরুম ।
  • প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ড থেকে ক্যানসার ও জটিল রোগের জন্য 125টি পরিবার কে 2 কোটি টাকার সাহায্য করা হয়েছে সাংসদ ।
  • বিভিন্ন ব্লকে 60টি জলসত্র করা হয়েছে ।
    a
    হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত৷

সাংসদের কাছে দাবি পূরণের বিষয়টি পাশাপাশি বেশ কিছু কাজ হয়নি বলেও কেউ কেউ বলছেন ৷ সেগুলি কী কী, দেখা নেওয়া যাক একনজরে -

  • বলাগড়ের ভাঙ্গনের সমস্যা সমাধান হয়নি ।
  • ডানলপ টায়ার কারখানার পরিবর্তে অন্য কোনও শিল্প হয়নি ।
  • ভদ্রেশ্বর ও বৈদ্যবাটির মাঝে খুড়িগাছি স্টেশনের দাবি পূরণ হয়নি ।
  • হুগলি লোকসভার গ্যাঞ্জেস ও কোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই থাকে সারা বছর ।
  • শিমলাগড় রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভারের দাবি ।
  • গঙ্গা-সহ একাধিক নদীর দূষণের প্রতিকার ।

তবে উন্নয়ন-অনুন্নয়নের এই তরজার মধ্যেই এই সংসদীয় এলাকার অন্যতম বড় ইস্য়ু শিল্প ৷ কারণ, এই কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ছে সিঙ্গুর ৷ যেখানে টাটাদের গাড়ি তৈরির কারখানা মাঝপথে থমকে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলনের জেরে ৷ অনেকে বলেন, ওই ঘটনাই বাংলায় শিল্পবন্ধ্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে ৷ স্বাভাবিকভাবে গত দেড় দশকে প্রতিটি নির্বাচনেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে এসেছে ৷

এবারও যে তা আসবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ তাই তিনি বলছেন, "এখানে শিল্প হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল । সেই সম্ভাবনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাংলায় 12 বছরে কোনও শিল্প হয়নি । সিন্ডিকেট-তোলাবাজি এত ভয়ংকর যে কেউ থাকতে চাইছেন না ।"

একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, "যখন মোদিজির সরকার আসবে, তখন এ রাজ্যে বিনিয়োগ হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলে গিয়ে বিজেপি সরকার এলে টাটারাও প্রস্তুত এই বাংলার শিল্প করার জন্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে টাটাদের কাছে বিনিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম । আগামিদিনে জমি জট কাটিয়ে এই সিঙ্গুর থেকেই শিল্প হবে ।"

এছাড়া হুগলির জ্বলন্ত সমস্যা বলাগড়ে গঙ্গার ভাঙ্গন । সাংসদের কথায় উঠে এসেছে গঙ্গার ভাঙনের প্রসঙ্গও ৷ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, নমামি গঙ্গে প্রকল্পে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা রাজ্য সরকার খরচ করছে না ৷ তাই এই অবস্থা ৷

কাজের খতিয়ান, দাবি পূরণ না হওয়ার হিসেব থেকে আগামীর প্রতিশ্রুতি সবই তো হল ! কিন্তু হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ কি বিজেপি সাংসদের পারফরম্যান্সে খুশি ? মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে ৷ কিছু মানুষের অভিযোগ, ভোটের সময় লকেট চট্টোপাধ্যায় দেখা যায় ৷ অন্য সময় দেখা যায় না। তাঁর কাজের নিরিখে তাঁকে কেউ 20 শতাংশ, কেউ আবার 60 শতাংশ, কেউ 70 শতাংশ নম্বর দিয়েছেন সাংসদকে ।

চন্দননগরেরটোটো চালক বাবু রায় বলেন, "হুগলির সাংসদ লকেটদিকে আমরা খুবই কম দেখেছি আমাদের কাছে আসতে । সাংসদ তহবিলের যে উন্নয়নের খতিয়ান দিচ্ছেন তা আমরা কেউই ভালোভাবে বুঝতে পারছি না । আমাদের রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই । বেড়েছে টোটো চালকের সংখ্যা । সেক্ষেত্রেও দিদি বা দাদা কেউই সাহায্য জন্য এগিয়ে আসেনি । আমাদের সমস্যা শোনার মতো কাউকেই দেখতে পাই না । আগামিদিনে যেই জয়ী হন না কেন টোটো চালকদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মের ব্যবস্থা করুক । এখানে জুটমিল ও কারখানা বন্ধ রয়েছে । বাধ্য হয়ে টোটোর সংখ্যা বাড়ছে ৷"

বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও তৃণমূল কংগ্রেস এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি ৷ ঘোষণা হয়নি বাম কিংবা কংগ্রেস প্রার্থীর নামও ৷ ফলে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, তার পূর্বাভাস এখনই দেওয়া সম্ভব নয় ৷ কিন্তু যেই জিতুন না কেন যে কাজগুলি হুগলির জন্য করা যেতে পারে, তার একটা তালিকা দিয়েছেন চন্দননগরের রাসবিহারী ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা কল্য়াণ চক্রবর্তী ৷

তিনি বলেন, "হুগলি লোকসভা তথা হুগলিতে কৃষিপণ্যের বাজার রয়েছে। এই জেলায় বিদেশি টেকনোলজিতে ফুড প্রসেসিং ইউনিট ও শিল্প তৈরি করলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে । হুগলিতে একদা গঙ্গা নদীভিত্তিক বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই গঙ্গাকে কেন্দ্র করেই ইউনেস্কো জোন তৈরি করতে পারলে, পর্যটন শিল্পেও উন্নতি হবে ৷’’

তিনি সিঙ্গুরের কথাও বলেছেন ৷ কল্য়াণের মতে, "সিঙ্গুরের যে শিল্প-সম্ভাবনা ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই যদি সিঙ্গুর-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে আইটি সেক্টর তৈরি করা যায় রাজারহাটের মতো, তাহলেও একটা দিশা পাবে যুবসমাজ । এছাড়াও রাজারহাট থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত যদি ফ্লাইওভার তৈরি করা যায়, তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিক তৈরি হবে ।" স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে হুগলিতে । সেই জন্য মনীষী পার্ক তৈরি জন্য সাংসদের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তিনি । সেটা হলেও বহু মানুষ জীবিকার সন্ধান খুঁজে পাবে বলেও মনে করেন তিনি ।

আরও পড়ুন:

রেল পরিবহণে বিকাশ, আক্ষেপ শিল্পতালুক নিয়ে; জয়ন্ত রায়ের 5 বছরের খতিয়ান

Last Updated : Mar 9, 2024, 6:23 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.