নয়াদিল্লি, 21 ফেব্রুয়ারি: খালিস্তানি মন্তব্য বিতর্কে বিজেপির সমালোচনায় সরব হলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ বুধবার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা এই মন্তব্য়ের নিন্দা করেছেন ৷ বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘তারা বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন নয় ৷’’ তাঁর আরও দাবি, এই নিয়ে বিজেপির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত ৷
এই খালিস্তানি মন্তব্য বিতর্কের সূত্রপাত মঙ্গলবার৷ উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ধামাখালিতে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপি নেতাদের ৷ সেই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক জসপ্রীত সিং ৷ তিনি অভিযোগ করেন যে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘খালিস্তানি’ মন্তব্য করা হয়েছে ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে৷ পুলিশের তরফে এই নিয়ে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় ৷ পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বিরোধী দলনেতাও ৷
কিন্তু এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ৷ তৃণমূল তো আগেই এই নিয়ে সরব হয়েছিল ৷ এবার তৃণমূলের সুরেই বিজেপিকে আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ বুধবার তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতারা একজন পুলিশ অফিসারকে খালিস্তানি বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁকে অপমান করেছেন । আমি এর নিন্দা জানাই । তাঁরা বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন নন... ৷’’
এই নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরাও যেতে চেয়েছিলাম সন্দেশখালি এবং আমাদের যেতে দেওয়া হয়নি । এর মানে এই নয় যে কোনও অফিসারকে তাঁর ধর্মের ভিত্তিতে টার্গেট করা উচিত... আইপিএস জসপ্রীত সিং অবশ্যই অপমানিত বোধ করছেন এই ধরনের কটূক্তির পরে... কংগ্রেসও বাংলার পুলিশের সমালোচনা করে ৷ কিন্তু আমরা এমন মন্তব্য করি না ৷ এর জন্য বিজেপির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত... ৷"
এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন প্রাক্তন সাংসদ তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র ৷ পুলিশ আধিকারিক জসপ্রীত সিং ও বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের মধ্য়ে বচসার ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, "এটা হচ্ছে খালিস্তানি - আপনারা কি বিজেপির নোংরা মুখ ও মনের পরিচয় পেলেন ? এটাই বিজেপির সত্য । কোন ভুল নয় ৷ আসুন আমরা এই ঘৃণাকে উপড়ে ফেলার ডাক দিই এবং শিখ সম্প্রদায়ের পক্ষে দাঁড়াই, যারা ভারতের গর্ব ।’’
এই নিয়ে বিজেপি ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন সদ্য রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী তথা প্রাক্তন সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ ৷ বুধবার সোশাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর দলের একজন পুলিশ অফিসারকে ‘খালিস্তানি’ বলার সাহস কিভাবে হল ? অফিসারটি একজন গর্বিত শিখ এবং একজন গর্বিত ভারতীয় ! বিজেপি ক্রমগত বাংলা ও ভারতকে ভাগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ এটা আটকাতে হবে ৷’’
এই প্রসঙ্গে সিপিএমের বিমান বসু বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিতভাবে অন্যায় হয়েছে । অপরাধ হয়েছে । যাঁরা পাগড়ি পরেন, তাঁদের খালিস্তানি বলা অপরাধ । এটা তৈরি হয়েছে কিভাবে ? গত বছর দিল্লি থেকে যাঁরা আসতেন, তাঁদের কী বলা হত ? চাড্ডা, নাড্ডা, ফাড্ডা বলা হত । কি মনে আছে ? কে বলতেন ? মুখ্যমন্ত্রী বলতেন । চাড্ডারা পাঞ্জাবি । এভাবে বললে বাতাসে থেকে যায় । বিকৃতির সীমা পরিসীমা থাকে না । এই বিকৃতির থেকে সমাজ সচেতন হওয়ার দরকার । সমাজ ভাঙবে ।’’
এই নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অসভ্যতামি, অসাংবিধানিক৷ কোনোরকম জ্ঞানবুদ্ধির পরিচয় তাঁর মধ্যে নেই ৷ পুরোটা হচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি ৷...এ দেশটাকে ছাড়খাড় করে দেবে ৷ শিখ বলেই খালিস্তানি বলে দাগিয়ে দিল ৷ এই অধিকার কে দিয়েছে ? এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ৷’’
আরও পড়ুন: