কলকাতা, 9 জুলাই: দু’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আবারও সম্মুখসমরে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ৷ এবার লড়াই পশ্চিমবঙ্গের চারটি বিধানসভা আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য ৷ যা আগামিকাল বুধবার হতে চলেছে ৷ মূল লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে হলেও বামফ্রন্টও বিধানসভায় খাতা খোলার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷
যে চারটি আসনে ভোট, তার মধ্য়ে দু’টি - বাগদা ও রানাঘাট দক্ষিণে মতুয়া ভোটারদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে ৷ এই ভোটারদের উপরই কার্যত নির্ভর করছে এই দুই বিধানসভা আসনের ফলাফল ৷
রানাঘাট দক্ষিণে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল বিজেপি ৷ বিধায়ক হয়েছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মুকুটমণি অধিকারী ৷ গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, মুকুটমণি আশা করেছিলেন যে রানাঘাট লোকসভা আসনে 2024 সালের ভোটে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করবে ৷ কিন্তু বিজেপি 2019 সালে ওই আসনে জয়ী জগন্নাথ সরকারের উপরই ফের আস্থা রাখে ৷ এর পরই মুকুটমণি দলবদল করেন ৷ তৃণমূলে যোগ দিয়ে ওই আসনে প্রার্থী হন৷ কিন্তু হেরে যান ৷
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য বিধায়ক পদ ছেড়েছিলেন মুকুটমণি ৷ তাই ওই আসনে উপ-নির্বাচন হচ্ছে ৷ সেই ভোটে ফের প্রার্থী হয়েছেন তিনি ৷ এবার তিনি লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটে ৷ এবার তিনি তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপির মনোজকুমার বিশ্বাসের মুখোমুখি হয়েছেন । সিপিআই(এম)-এর অরিন্দম বিশ্বাসও আরেকজন প্রতিপক্ষ । ওই আসনে সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে 36 হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল ৷ তাই মাত্র দেড় মাস আগে যে আসনের ভোটাররা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, মুকুট কি সেই আসন থেকে জয় পাবেন ? ‘দলবদলু’ মুকুটমণির জন্য লড়াইটা সত্যিই কঠিন ৷
বাগদার অবস্থাও অনেকটা রানাঘাট দক্ষিণের মতো ৷ 2021 সালে সেখানে জিতেছিলেন বিজেপির বিশ্বজিৎ দাস ৷ তিনি পরে তৃণমূলে চলে যান ৷ এবার লোকসভা ভোটে তিনি তৃণমূলের টিকিটে লড়েন বনগাঁ লোকসভা আসনে ৷ ফলে বিধায়ক পদ তাঁকে ছাড়তে হয় ৷ মুকুটমণির মতো তিনিও জিততে পারেননি ৷
বাগদাকে মতুয়াদের গড় হিসেবে ধরা হয় ৷ এখানকার ঠাকুরনগরেই মতুয়াদের মন্দির অবস্থিত ৷ সেই কেন্দ্রে মতুয়াদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বজিৎ দাসের ভাগ্য মুকুটমণির মতো ভালো নয় ৷ তাই এখানকার জন্য অন্য পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ এখানে রানাঘাট ফর্মুলা প্রয়োগ না করে বরং তিনি প্রার্থী করেছেন মধুপর্ণা ঠাকুরকে ৷
রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ ও শান্তনু ঠাকুরের জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ৷ তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন বিজেপির বিনয়কুমার বিশ্বাস ৷ তিনিও মতুয়া সম্প্রদায়ের ৷ এছাড়া রয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের গৌরাদিত্য বিশ্বাস ৷ ফলে ওই আসনে কী ফলাফল হয়, সেদিকেই তাকিয়েই সকলে ৷
তবে রানাঘাটের মতো উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে 2021 সালের জয়ী প্রার্থীকেই আবার টিকিট দিয়েছে তৃণমূল ৷ ওই আসনে একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ পরে তিনি তৃণমূলে আসেন ৷ লোকসভা ভোটের আগে বিধায়ক পদ ছেড়ে তিনি তৃণমূলের প্রার্থী হন রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে ৷ বিজেপির কার্তিক পালের কাছে তিনি হেরে যান ৷ তার পর আবার ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ৷ তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন বিজেপির মানসকুমার ঘোষ ও কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত ৷
চার আসনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন লড়াই হচ্ছে রায়গঞ্জে ৷ একদিকে সেখানে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষ্ণ কল্য়াণী ও মানস ঘোষ, দু’জনেই লড়ছেন তাঁদের পলিটিক্য়াল মেন্টর এবং রায়গঞ্জের দু’বারের বিধায়ক ও সেখানকার পুরসভার চেয়ারম্যান কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷
চার আসনের মধ্যে একটি আসন কলকাতায় ৷ মহানগরের মানিকতলা আসনে ভোট ৷ 2022 সালের 20 ফেব্রুয়ারি মারা যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য় ও মানিকতলার বিধায়ক সাধন পান্ডে ৷ তাঁর মৃত্যুর পর এই আসনে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ৷ কল্যাণ চৌবের দায়ের করা মামলার জন্য ওই উপ-নির্বাচন আটকে ছিল ৷ গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি ওই মামলা করেছিলেন ৷ পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি চলতি বছরের 29 এপ্রিল মামলা প্রত্যাহার করেছেন ৷ তার পরই ওই আসনে নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয় ৷ ফলে মানিকতলাবাসীর বিধায়কের জন্য অপেক্ষা প্রায় দু’বছর পর কাটতে চলেছে ৷
এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী প্রয়াত সাধন পান্ডের স্ত্রী সুপ্তি পান্ডে ৷ বিজেপি আবারও প্রাক্তন ফুটবলার তথা এআইএফএফ-এর প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে উপর আস্থা রেখেছে ৷ সিপিআইএম প্রার্থী রাজীব মজুমদার৷ তিনি এই কেন্দ্রে আগেও প্রার্থী হয়ে হেরে গিয়েছিলেন ৷
সদ্য় শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা উত্তরের বিজয়ী প্রার্থী তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মানিকতলা বিধানসভা আসন থেকে মাত্র 4 হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন ৷ ফলে সেই মার্জিন অবশ্যই বাড়ানোর চেষ্টা করবে শাসক দল ৷ তবে গোষ্ঠী কোন্দল এই এলাকায় তৃণমূলের একটা চিন্তার কারণ ৷
শেষপর্যন্ত কোন আসনে কে জিতবেন, তা জানতে অপেক্ষা করতেই হবে আগামী 13 জুলাই পর্যন্ত ৷