দুর্গাপুর, 9 মে: আগামী 13 মে এ রাজ্যে চতুর্থ দফা নির্বাচন । আর এই চতুর্থ দফায় এ রাজ্যের বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল লোকসভা এই দুই কেন্দ্র ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি আসনে নির্বাচন । জেলায় জেলায় প্রচার এখন একেবারে তুঙ্গে । নির্বাচনে বাকি আর মাত্র 100 ঘণ্টা । মূলত, নির্বাচনের আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন । রণংদেহি মূর্তিতে এখন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা ।
এ রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের হয়ে রাজনৈতিক হাতেখড়ি গায়ক ও নায়ক বাবুল সুপ্রিয়র । পদ্মফুল প্রতীকে দাঁড়িয়ে পরপর দু’বার আসানসোল থেকে সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় । এমনকি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি । কিন্তু বিজেপির সঙ্গে মোহত্যাগ করে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন । বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক এবং এ রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী । দুর্গাপুরে তিনি কীর্তি আজাদের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রচারে আসেন ।
সেই প্রচারের মাঝে ইটিভি ভারতকে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির দুই প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ও এসএস আলুওয়ালিয়ার প্রবল সমালোচনা করে বলেন, "দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুরের ছেলে । তাঁকে সেখান থেকে এখানে কেন নিয়ে আসা হল ? আর এসএস আলুওয়ালিয়াকে এখানে দেখা যায়নি বলে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হল আসানসোলে ।"
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সময় বলেছিলেন বিজেপির এ রাজ্যে 35টি আসন পাওয়ার কথা । এখন সেই টার্গেট কমে 30টি আসন পাওয়ার কথা বলেছেন, সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাবুল বলেন, "আরে ওটা কমবে । আমি তো বিজেপিকে জানি । এরা সারা বছর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে গিয়েছে । আপনি ভাবুন উনি এখানে এসে বলে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ সবচেয়ে বড় নেতা । দিলীপ ঘোষ যদি সবচেয়ে বড় নেতা হয়ে থাকেন, তাহলে ওঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলেন কেন ?’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে 2019 সালে সবাই মিলে জোর করে ছিল যে আসানসোলে তুমি লড়বে না, হেরে যাবে । আমি বলেছিলাম আমি সেখানে কাজ করেছি, আমি ওখানেই দাঁড়াবো । 30 থেকে 28, তারপর 26, যারা বিজেপির এমপি ছিল তাঁদের অবস্থা কী দাঁড়ায় আপনারা দেখতে পাবেন ।"
এরপরেই বাবুল সুপ্রিয় বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, "আমি আট বছর ওদের সঙ্গে ছিলাম । বিজেপি হচ্ছে একটা বাঙালি বিদ্বেষী পার্টি । তাই এখানে যে ট্রাই আ্যঙ্গেল দেখছেন, কীর্তি আজাদ কট্টর বিজেপি ছিলেন । কার সঙ্গে কার সঙ্গে কাজ করেছেন । শত্রুঘ্ন সিনহা অটল বিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রী ছিলেন । আমি আট বছর বিজেপির মন্ত্রী ছিলাম । আমরা সবাই ধাক্কা দিয়ে বিজেপিকে সরিয়ে দিয়ে চলে এসেছি । কারণ কী জানেন ? যাঁদের মানুষের কাছে পরিচিতি আছে, যাঁদের আত্মসম্মান আছে, তাঁরা বিজেপির কাছে নত করে থাকবে না । এরা বাঙালিদের মনন কিচ্ছু বোঝে না । ওই জন্য যে 30টা দেখছেন ওটা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে ।"
বাবুল সুপ্রিয় আরও বলেন, ‘‘আমার বিজেপি ছেড়ে দেওয়াটা আমার বিদ্রোহ । আমি বাঙালিদের জন্য লড়ছিলাম । দিদি আমাকে বলেছেন বাংলার হয়ে কাজ করো । দিদির মানবিকতা আছে, ভালোবাসা আছে । তাই ওঁর জন্য অতিরিক্ত কাজ করার ইচ্ছে জাগে । বাকি ওরা রাজনীতি করুক না । শুভেন্দু অধিকারীকে দেখছেন না সন্দেশখালি নিয়ে এখন অন্য গান গাইছে । স্টিং অপারেশন নাকি এআই দিয়ে করেছে । গঙ্গাধরকে জিজ্ঞাসা করুন উনি ইডির ফুল ফর্ম জানেন কি না ! এআই তো অনেক দূরের কথা । তাঁকে দিয়ে বলাচ্ছে যে এআই দিয়ে অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে এটা করাচ্ছে । সন্দেশখালিতে একটা ষড়যন্ত্র ছিল । আরে নোংরা ষড়যন্ত্রকে মানুষ ক্ষমা করবে না ।"
তাঁর আরও বক্তব্য, "দিলীপদা এখানে হেরে যাবেন । ধর্মের ভিত্তিতে সুড়সুড়ি দিয়ে কিছু করা যায় না । আমরা তাজমহলও দেখতে যাব, আমরা রাম মন্দিরে দেখতে যাব । আমিও একটা সময় ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে গিয়েছিলাম । মুসলমান ভাইয়েরা আমার গান শুনত না । আমার বিজেপিতে যাওয়ার কারণে আমার জীবনের যে কোর্সটা বেঁকেছিল, সেটা সঠিক দিকে চলে এসেছে ।"
আরও পড়ুন: