নয়াদিল্লি, 22 ফেব্রুয়ারি: দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ফের প্রতিষ্ঠা করা হোক ৷ ফেরানো হোক রাজতন্ত্র ৷ এমনই দাবি তুলেছে নেপালের রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি বা আরপিপি ৷ কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বুধবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহলের কাছে 40টি পয়েন্টের একটি দাবি সনদও পেশ করেছে আরপিপি ৷ এর সঙ্গে নেপালের এই রাজনৈতিক দলটি আরও জানিয়েছে, এই দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রচার শুরু করবে তারা ৷ রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় শ'য়ে শ'য়ে আরপিপি কর্মীরা মিছিল করে ৷ তারপর প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহলের কাছে তাদের দাবিপত্র জমা দেয় ৷
কাঠমান্ডু পোস্ট আরপিপির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র লিংগডেনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে লিখেছে, "রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে ৷ তবে সরকার যদি এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করে, তাহলে বড়সড়ো আন্দোলনে নামব আমরা ৷" 2015 সালে নেপাল নতুন সংবিধান লাগুর মাধ্যমে সরকারিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয় ৷ যদিও 2008 সালেই নেপালে রাজতন্ত্র হঠিয়ে সরকারিভাবে অ-হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৷
আরপিপি কী ? তারা কেনই বা নেপালকে ফের হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি তুলেছে ?
1990 সালে নেপালের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সূর্য বাহাদুর থাপা এবং লোকেন্দ্র বাহাদুর চন্দ রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি বা আরপিপি প্রতিষ্ঠা করেন ৷ সেই সময় দেশে রাজতন্ত্র ছিল ৷ 1997 সালে থাপা ও চন্দের নেতৃত্বে সফল জোট সরকার গঠিত হয়েছিল ৷ সেই সময় দেশের রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র ৷ তিনি 2003 সালের সূর্য বাহাদুর থাপাকে প্রধানমন্ত্রী করেন ৷ 2002 সালে লোকেন্দ্র বাহাদুর চন্দকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন ৷
তবে দেশ প্রজাতান্ত্রিক হওয়ার পর 2022 সালে নেপালের সাধারণ নির্বাচনে আরপিপি 275টি আসনের মধ্যে 14টি আসনে জয়ী হয় ৷ দেশে পঞ্চম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে জায়গা করে নেয় ৷ নির্বাচন কমিশন দেশের যে 7টি জাতীয় দলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম ৷ নির্বাচনী ফলাফলের পর আরপিপি জোট সরকারেরই অংশ ছিল ৷ তবে পরে 2023 সালে 25 ফেব্রুয়ারি আরপিপি বিরোধী দল হয়ে যায় ৷ নেপালে এই রাজনৈতিক দলটিই একমাত্র দল, যারা নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ৷ দেশে রাজতন্ত্র পরিচালিত সরকার ফিরিয়ে আনার সমর্থনে লড়াই করে যাচ্ছে ৷
যদিও সম্প্রতি কয়েকটি হিন্দু সংগঠন এবং প্রাক্তন রাজসভার সদস্যরা এই এক দাবি তুলেছে ৷ মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ এবং নেপাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নীহার আর নায়েক ইটিভি ভারতকে এই প্রসঙ্গে বলেন, "2008 সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে রাজসভার সদস্যরা এই দাবি তুলে আসছে ৷"
তবে সম্প্রতি কয়েক বছরে কয়েকটি হিন্দু দলও এই নিয়ে দাবি তুলেছে ৷ 2021 সালের অগস্টে 20টি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন দেবহাটের তানাহুন জেলার একটি 'যৌথ ফ্রন্ট' গঠন করে ৷ তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি তুলে তারা প্রতিবাদে নামবে ৷ ওই একই মাসে, আরেকটি দল হিন্দু রাজ্যের দাবিতে প্রচার শুরু করে ৷ এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল রুকমানগুড় কাটাওয়াল ৷ তিনি 2006 সাল থেকে 2009 সাল পর্যন্ত নেপালের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন ৷
এই প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন শঙ্করাচার্য মঠের অধীশ্বর কেশবানন্দ স্বামী, কাঠমান্ডুর শান্তিধামের পীঠাধীশ স্বামী চতুর্ভুজ আচার্য, হনুমানজী মহারাজ এবং হিন্দু স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সহ-আহ্বায়ক এবং নেপাল পুলিশের প্রাক্তন সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল কল্যাণ কুমার তিমিলসিনার মতো কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তিত্ব ৷
কাঠমান্ডু পোস্ট কাটওয়ালের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লেখে, "আমদের এই প্রচার দেশকে হিন্দুত্ববাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা নয়, সংখ্যালঘু মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের একঘরে করে দেওয়া নয় ৷ আমাদের প্রচার শুধুমাত্র নেপালের হিন্দু পরিচয় ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে ৷" কাঠমান্ডু পোস্টে একটি বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে, হিন্দু রাষ্ট্রের সমর্থনে এই আন্দোলন হয়তো গতি পাবে ৷ বিশেষত, নেপালের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ৷ সেই দলগুলিই দেশকে প্রজাতান্ত্রিক করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ৷ The risk to political achievements has been exacerbated by former Prime Minister KP Sharma Oli. প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি নিজেকে কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি হিন্দুধর্ম নিয়ে আবেগ প্রকাশ করতে শুরু করেন ৷
নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে জনগণ ৷ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে, সেইরকমই একটি অনুষ্ঠানে নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে দেখা গিয়েছে ৷ নেপালের পূর্ব ঝাপা জেলার কাকরভিট্টা নামক জায়গায় 'ধর্ম, জাতি, জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি এবং নাগরিকদের মেগা ক্য়াম্পেন বাঁচানো' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জ্ঞানেন্দ্র ৷ এই অনুষ্ঠানে বহু লোক অংশ নেয় এবং তারা সবাই উচ্ছ্বসিত ছিল ৷ এই প্রচারটির উদ্যোক্তা ছিলেন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দুর্গা প্রসাই আর নেতৃত্ব দিয়েছেন ওলি ৷
নেপালকে ফের হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার নেপথ্যে কী রয়েছে ?
গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর নভেম্বরে কয়েক শতবর্ষ পুরনো রাজতন্ত্র ফেরাতে কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেপালকে আবারও হিন্দু রাষ্ট্র বলে উল্লেখ করা হোক ৷ এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রসাই ৷ নায়কের বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রতিবাদগুলি করছে গণতন্ত্র-বিরোধী দলগুলি ৷ তারা বিশ্বাস করে নেপালে এই নতুন গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে ৷ তিনি বলেন, "আরপিপি এই দাবিগুলিকেই আরও জনপ্রিয় করে তুলতে চাইছে ৷ এই মিছিলে খুব বেশি হলে 4-5 হাজার মানুষ ছিল ৷ এর কোনও রাজনৈতিক প্রভাব নেই ৷" তিনি আরও উল্লেখ করেন, নেপালি কংগ্রেসের একটা অংশ এই দাবি তুললেও দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি খারিজ করে দিয়েছে ৷ নায়ক বলেন, "নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা কখনও এই দাবিগুলিকে স্বীকৃতি দেননি ৷ আর মনে রাখবেন, নেপালি কংগ্রেস পার্টি দেশে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ৷"
আরও পড়ুন: