ETV Bharat / opinion

স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা মানুষকে কুসংস্কার-গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠতে উজ্জীবিত করুক - 2024 Uttar Pradesh Crowd Crush

UP Hathras Stampede Lesson: সম্প্রতি এক ধর্মগুরুর সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রায় 120 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ ওই ধর্মগুরু আগে কনস্টেবল ছিলেন ৷ এই অনুষ্ঠানটির আয়োজিত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ৷ ভারতে এরকম আরও ধর্মগুরু আছেন, যাঁদের বহু ভক্ত রয়েছেন ৷ তাঁদের মধ্যে বাবা রামদেব, স্বামী নৈত্যানন্দ, স্বামী সদারাচী এবং মাতা অমৃতানন্দময়ী অন্যতম ৷ এ নিয়ে লিখছেন মিলিন্দ কুমার শর্মা ৷

Hathras Stampede Incident
হাথরসে সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানে গিয়ে মৃত 120 জন (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 19, 2024, 7:37 PM IST

হায়দরাবাদ, 19 জুলাই: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে ৷ স্বঘোষিত ধর্মগুরু সৎসঙ্গে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় 120 জনের ৷ এই ধর্মগুরু একসময় কনস্টেবল ছিলেন ৷ সমাজের একটি বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু অত্যন্ত শ্রদ্ধার ৷ এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ধর্মগুরুর পুরো বিষয়টি সমাজের সামনে আনা উচিত ৷

সত্যি, এটা একটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ৷ এই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, তাকে চিহ্নিত করা উচিত এবং তাদের বিচার হওয়া দরকার ৷ তবে এর থেকেও বড় চিন্তার বিষয় দেশজুড়ে বাড়তে থাকা স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সংখ্যা ৷ সমাজ মনে করে, ওই ধর্মগুরুরা দেবত্ব বা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, তাঁরা উচ্চমর্যাদার, এটা বিরক্তিকর ৷

এই ভাবমূর্তি নিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে প্রায় সম্মোহিত করে ফেলে ৷ আর হাথরসের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য এই সম্মোহন আংশিক দায়ী ৷ জানা গিয়েছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ধুলো স্পর্শ করার জন্য ভক্তরা দৌড়োদৌড়ি আরম্ভ করেন ৷ আর তার ফলেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায় ৷ বিপর্যয় নেমে আসে বহু পরিবারে ৷

ভারতের মতো গভীর ধর্মীয় এবং নানান সংস্কৃতির দেশে কেউ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন, এটা অস্বাভাবিক নয় ৷ যাইহোক, এটাও ঘটনা যে, বহু স্বঘোষিত দেবতার মতো মানুষজনেরা অনেক ভুলভাল কাজে প্রশ্রয় দেন, যা সমাজের সচেতনতাকে নাড়িয়ে দেয় ৷ অন্যদিকে একজনের আদর্শগত অবস্থানের জন্য একতরফাভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলিকে খারাপভাবে দেখাও ঠিক নয় ৷ কারণ তাঁরা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করে, যা সমাজকে ঐক্যবদ্ধও করে ৷ সমস্যাটা তখন হয়, যখন বিশ্বাস গোঁড়ামিতে পরিণত হয় এবং সেখানে কার্যকারণকে খাটো করা হয় ৷ পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকেও অবহেলা করার ঘটনা ঘটে ৷

অনেক ভণ্ড নিজেকে ভগবান বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন ৷ তাঁরা ধর্মান্ধতায় মানুষকে আচ্ছন্ন করে, তাঁদের চেতনাকে অন্ধ করে দেন ৷ বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক বিকাশকে বাধা দেয় ৷ ধর্মীয়গুরুদের মাদকের মতো প্রভাব, যাঁরা পৃথিবীতে মসীহা হওয়ার অভিপ্রায় রাখলেও তা অস্পষ্টতার উপর সীমাবদ্ধ ৷ কারণ এটি মানুষের মানসিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার গতিরোধ করে ৷ এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পিরামিডের সবচেয়ে নীচে থাকা মানুষ ধর্মগুরুদের পায়ে পরিত্রাণ খোঁজে ৷

ধর্মগুরুরা যেন জীবনের সবরকম দুর্দশা থেকে মুক্তির নিশ্চিত গ্যারান্টার হয়ে ওঠেন ৷ আমাদের সমাজের একটি বিশাল অংশের উপর শারীরিক-মানসিক দিক দিয়ে প্রচণ্ড আধিপত্য বিস্তার করে থাকেন এই ধর্মগুরুরা ৷ তাহলে হাথরাসে যা ঘটেছে, তার জন্য কি তথাকথিত ধর্মগুরুদের উপর আংশিক দায় চাপানো উচিত নয় ? এই স্ব-ঘোষিত গুরুরা অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন এবং বুদ্ধির দিক দিয়ে জাগ্রত ব্যক্তিত্ব যেমন স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রীঅরবিন্দের মতো মহাপুরুষদের থেকে আলাদা ৷

ধর্মগুরুরা মানুষের মগজ ধোলাই করেন ৷ আর মহাপুরুষেরা মানুষের মনে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে মনকে আলোকিত করেন, আত্মার মুক্তির পথ তৈরি করে ৷ তাঁরা সমাজে যে শিক্ষা দেন তার সামাজিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক ৷ তাঁরা অন্ধ ভক্ত ও গোঁড়ামিকে দূরে সরিয়ে কার্যকারণ সম্পর্ক, যুক্তির কথা প্রচার করেন ৷ আমাদের সামাজিক কাঠামোর নৈতিক অবক্ষয়কে আটকাতে সক্ষম হওয়ার জন্য সমাজকে অবশ্যই এই কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে ৷

সর্বোপরি ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের মানুষের মধ্য়ে কুসংস্কার ও অন্ধ রীতিনীতির তুলনায় কার্যকারণ এবং যুক্তির বোধ গড়ে তোলা উচিত ৷ জীবনের অগণিত সংগ্রাম এবং বেদনা থেকে রেহাই পেতে মানুষ বাইরের সাহায্য চায়, তার উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে বসে ৷ সেই নির্ভরতা থেকে ওই মানুষদের বের করে আনার কাজ করা উচিত ৷

ধর্মগুরুদের দমন-পীড়ন সমাজের যতটা না ভালো করেছে, তার থেকে বেশি ক্ষতি করেছে, অন্ততপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে তাই হয়েছে । সমাজের সবার স্বার্থে এই ধরনের ব্যক্তিদের প্রহসনমূলক প্রকৃতি প্রকাশ করা উচিত ৷ সামাজিক ও নৈতিক সতর্কতা, সম্প্রদায়ের প্রসার, শিক্ষা এবং তৃণমূল স্তরে সংবেদনশীলতা সমাজের দুর্বল অংশের উপর ধর্মগুরুদের রহস্যময় প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন ৷

সমাজের নৈতিক ভিত্তি মজবুত করার এটাই সময় ৷ সমাজ তার চেতনাকে এমন একটি স্তরে উন্নীত করুক যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, "মন ভয়হীন, মাথা উঁচু করে... এবং সেই স্বাধীনতার স্বর্গে" দেশ জেগে উঠুক ৷ (উপরে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত)

হায়দরাবাদ, 19 জুলাই: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে ৷ স্বঘোষিত ধর্মগুরু সৎসঙ্গে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় 120 জনের ৷ এই ধর্মগুরু একসময় কনস্টেবল ছিলেন ৷ সমাজের একটি বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু অত্যন্ত শ্রদ্ধার ৷ এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ধর্মগুরুর পুরো বিষয়টি সমাজের সামনে আনা উচিত ৷

সত্যি, এটা একটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ৷ এই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, তাকে চিহ্নিত করা উচিত এবং তাদের বিচার হওয়া দরকার ৷ তবে এর থেকেও বড় চিন্তার বিষয় দেশজুড়ে বাড়তে থাকা স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সংখ্যা ৷ সমাজ মনে করে, ওই ধর্মগুরুরা দেবত্ব বা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, তাঁরা উচ্চমর্যাদার, এটা বিরক্তিকর ৷

এই ভাবমূর্তি নিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে প্রায় সম্মোহিত করে ফেলে ৷ আর হাথরসের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য এই সম্মোহন আংশিক দায়ী ৷ জানা গিয়েছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ধুলো স্পর্শ করার জন্য ভক্তরা দৌড়োদৌড়ি আরম্ভ করেন ৷ আর তার ফলেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায় ৷ বিপর্যয় নেমে আসে বহু পরিবারে ৷

ভারতের মতো গভীর ধর্মীয় এবং নানান সংস্কৃতির দেশে কেউ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন, এটা অস্বাভাবিক নয় ৷ যাইহোক, এটাও ঘটনা যে, বহু স্বঘোষিত দেবতার মতো মানুষজনেরা অনেক ভুলভাল কাজে প্রশ্রয় দেন, যা সমাজের সচেতনতাকে নাড়িয়ে দেয় ৷ অন্যদিকে একজনের আদর্শগত অবস্থানের জন্য একতরফাভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলিকে খারাপভাবে দেখাও ঠিক নয় ৷ কারণ তাঁরা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করে, যা সমাজকে ঐক্যবদ্ধও করে ৷ সমস্যাটা তখন হয়, যখন বিশ্বাস গোঁড়ামিতে পরিণত হয় এবং সেখানে কার্যকারণকে খাটো করা হয় ৷ পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকেও অবহেলা করার ঘটনা ঘটে ৷

অনেক ভণ্ড নিজেকে ভগবান বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন ৷ তাঁরা ধর্মান্ধতায় মানুষকে আচ্ছন্ন করে, তাঁদের চেতনাকে অন্ধ করে দেন ৷ বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক বিকাশকে বাধা দেয় ৷ ধর্মীয়গুরুদের মাদকের মতো প্রভাব, যাঁরা পৃথিবীতে মসীহা হওয়ার অভিপ্রায় রাখলেও তা অস্পষ্টতার উপর সীমাবদ্ধ ৷ কারণ এটি মানুষের মানসিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার গতিরোধ করে ৷ এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পিরামিডের সবচেয়ে নীচে থাকা মানুষ ধর্মগুরুদের পায়ে পরিত্রাণ খোঁজে ৷

ধর্মগুরুরা যেন জীবনের সবরকম দুর্দশা থেকে মুক্তির নিশ্চিত গ্যারান্টার হয়ে ওঠেন ৷ আমাদের সমাজের একটি বিশাল অংশের উপর শারীরিক-মানসিক দিক দিয়ে প্রচণ্ড আধিপত্য বিস্তার করে থাকেন এই ধর্মগুরুরা ৷ তাহলে হাথরাসে যা ঘটেছে, তার জন্য কি তথাকথিত ধর্মগুরুদের উপর আংশিক দায় চাপানো উচিত নয় ? এই স্ব-ঘোষিত গুরুরা অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন এবং বুদ্ধির দিক দিয়ে জাগ্রত ব্যক্তিত্ব যেমন স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রীঅরবিন্দের মতো মহাপুরুষদের থেকে আলাদা ৷

ধর্মগুরুরা মানুষের মগজ ধোলাই করেন ৷ আর মহাপুরুষেরা মানুষের মনে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে মনকে আলোকিত করেন, আত্মার মুক্তির পথ তৈরি করে ৷ তাঁরা সমাজে যে শিক্ষা দেন তার সামাজিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক ৷ তাঁরা অন্ধ ভক্ত ও গোঁড়ামিকে দূরে সরিয়ে কার্যকারণ সম্পর্ক, যুক্তির কথা প্রচার করেন ৷ আমাদের সামাজিক কাঠামোর নৈতিক অবক্ষয়কে আটকাতে সক্ষম হওয়ার জন্য সমাজকে অবশ্যই এই কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে ৷

সর্বোপরি ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের মানুষের মধ্য়ে কুসংস্কার ও অন্ধ রীতিনীতির তুলনায় কার্যকারণ এবং যুক্তির বোধ গড়ে তোলা উচিত ৷ জীবনের অগণিত সংগ্রাম এবং বেদনা থেকে রেহাই পেতে মানুষ বাইরের সাহায্য চায়, তার উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে বসে ৷ সেই নির্ভরতা থেকে ওই মানুষদের বের করে আনার কাজ করা উচিত ৷

ধর্মগুরুদের দমন-পীড়ন সমাজের যতটা না ভালো করেছে, তার থেকে বেশি ক্ষতি করেছে, অন্ততপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে তাই হয়েছে । সমাজের সবার স্বার্থে এই ধরনের ব্যক্তিদের প্রহসনমূলক প্রকৃতি প্রকাশ করা উচিত ৷ সামাজিক ও নৈতিক সতর্কতা, সম্প্রদায়ের প্রসার, শিক্ষা এবং তৃণমূল স্তরে সংবেদনশীলতা সমাজের দুর্বল অংশের উপর ধর্মগুরুদের রহস্যময় প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন ৷

সমাজের নৈতিক ভিত্তি মজবুত করার এটাই সময় ৷ সমাজ তার চেতনাকে এমন একটি স্তরে উন্নীত করুক যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, "মন ভয়হীন, মাথা উঁচু করে... এবং সেই স্বাধীনতার স্বর্গে" দেশ জেগে উঠুক ৷ (উপরে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.