ভারতে বৈষম্যহীনতা ও সমানাধিকারের আইনের সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ ৷ এই সপ্তাহের শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের জেরে তা আরও বেড়েছে ৷ পঞ্জাব বনাম দাবিন্দর সিং মামলায় এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণের জন্য তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতির মধ্যে উপ-শ্রেণি তৈরি করার দাবিতে এই মামলা করা হয়েছিল ৷
সাতজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ এই মামলায় রায় দেয় ৷ সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি কোনও মামলার সঙ্গে জড়িত থাকলে পাঁচ জনেরও বেশি বিচারপতিকে নিয়ে এই ধরনের বেঞ্চ গঠিত হয় । তাহলে এই ক্ষেত্রে কি কোনও ধরনের সাংবিধানিক উদ্বেগ ছিল ?
মামলার ইতিহাস: দাবিন্দর সিংয়ের মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয় চলতি বছরের 6-8 ফেব্রুয়ারি ৷ তবে এই মামলা সংক্রান্ত বিতর্কের সূত্রপাত 1975 সালে ৷ সেই সময় পঞ্জাব সরকার শিক্ষা ও চাকরিতে তফসিলি জাতিদের 25 শতাংশ সংরক্ষণকে দু’টি ভাগে ভাগ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৷ সংরক্ষণের অর্ধেক বরাদ্দ করা হয় বাল্মীকি ও মাজহাবি শিখদের জন্য ৷ বাকি অর্ধেক তফসিলি জাতির অবশিষ্ট গোষ্ঠীগুলির জন্য রাখা হয় ৷
2004 সাল পর্যন্ত সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত অবস্থায় পড়েছিল ৷ 2005 সালে সুপ্রিম কোর্ট ইভি চেন্নাইয়া বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার মামলার রায় দেয় ৷ সেখানে তফসিলি জাতি ও উপজাতি তালিকাভুক্তদের সমজাতীয় গোষ্ঠী বলে উল্লেখ করা হয় ৷ তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে আরও কোনও শ্রেণিবিভাগ বা গোষ্ঠী তৈরি করার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয় ওই মামলায় ৷
সংবিধানের 341 অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (1) এর অধীনে রাজ্য বা কোনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোনও জাতি বা উপজাতিকে তফসিলির তালিকায় আনার নির্দেশ দেওয়ার অধিকার একমাত্র ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে ৷ কোনও রাজ্য নিজে থেকে তা করলে, সেটা রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি না মানার সামিল হবে বলে ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷
1975 সালে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, ওই মামলার রায়ের ভিত্তিতে তা খারিজ করে দেয় পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ৷ এই রায়কে এড়ানোর জন্য পঞ্জাব সরকার একটি আইন তৈরি করে ৷ সেই আইনটি হল - পঞ্জাব তফসিলি জাতি ও অনগ্রসর শ্রেণি (চাকরিতে সংরক্ষণ) আইন, 2006 ৷ তফসিলি জাতি ও অনগ্রসর শ্রেণিকে চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়ার জন্যই এই আইন করা হয় ৷ কিন্তু আইনের সেকশন 4(5) এ বলা হয় যে শূন্যপদের 50 শতাংশ বরাদ্দ থাকবে বাল্মিকী ও মাজহাবি শিখদের জন্য ৷ যদি তারা আবেদন করে, তাহলে তাদের সরাসরি নিয়োগ করা হবে ৷ কিন্তু তা 2010 সালে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট খারিজ করে দেয় ৷
পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয় । মামলাটি একটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পাঠানো হয় ৷ সেখানে অন্যান্য বিষয়গুলির সঙ্গে 2005 সালে ইভি চিন্নাইয়া মামলার রায় পুনর্বিবেচনার বিষয়টিও ছিল ৷ 2020 সালে এই মামলার শুনানি শুরু হয় ৷ কিন্তু একই সংখ্যার বিচারপতি নিয়ে তৈরি সাংবিধানিক বেঞ্চ আগের মামলার রায় বাতিল করতে পারে না (ইভি চিন্নাইয়া মামলার রায়ও পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ দিয়েছিল) । তাই উচ্চতরে বেঞ্চে বিষয়টি পাঠানো হয় ৷ 2023 সালে সাত বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য এই মামলা তালিকাভুক্ত করা হয় ৷ শেষ পর্যন্ত 2024 সালের ফেব্রুয়ারিতে শুনানি হয় ৷
মামলার রায়: গত 1 অগস্ট এই মামলার রায় দেওয়া হয় ৷ সেখানে সুপ্রিম কোর্ট তফসিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যে সাব-ক্লাসিফিকেশন বা উপ-শ্রেণি তৈরি করতে অনুমতি দিয়েছে ৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়গুলির বৃহত্তর সুরক্ষার স্বার্থে এই রায় বলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে ৷ সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের ছয়জন রায়ের পক্ষে থাকলেও একজন রায়ের বিপক্ষে ছিলেন ৷ দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নিজের ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের রায় লিখেছিলেন ৷ বিচারপতি বিআর গাভাই, বিক্রম নাথ, পঙ্কজ মিথাল ও এস সি শর্মা আলাদাভাবে নিজেদের রায় লেখেন ৷ প্রত্যেকেই রায়ের পক্ষেই মত দেন ৷ তবে ভিন্নমত পোষণ করেন বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী ৷
আইন ও সংবিধানের সুনির্দিষ্ট দিকগুলিতে এই মতামতগুলি কীভাবে কার্যকর হবে ?
সমস্ত তফসিলি জাতিই কি সমজাতীয় গোষ্ঠী ?
এই ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তফসিলি জাতির তালিকার সমস্ত বর্ণের সঙ্গে একই আচরণ করা হবে কি না ! আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী 341(1) ধারা রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট জাতিকে তফসিলি জাতি হিসাবে অবহিত করার ক্ষমতা দেয় । সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করে সংবিধান আদেশ দেয় যে শুধুমাত্র সংসদই তফসিলি জাতির তালিকা থেকে কোনও জাতি, বর্ণ বা উপজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে বা বাদ দিতে পারে । দাবিন্দর সিং রায়ের মাধ্যমে দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে একটি নির্দিষ্ট তফসিলি জাতির তালিকার সমস্ত বর্ণের সঙ্গে একই আচরণ করা হবে ।
রায়ের 112 অনুচ্ছেদে, তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে - প্রথমত, তফসিলি জাতির তালিকায় না থাকা কোনও বর্ণ থেকে কিছু বর্ণকে আলাদা করার জন্যই তাদের তালিকাভুক্ত করা হয় ৷ আর দ্বিতীয়ত, এই ধরনের অন্তর্ভুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অভিন্ন ও অভ্যন্তরীণভাবে সমজাতীয় শ্রেণির গঠন নয়, যা আরও শ্রেণিবদ্ধ করা যায় না ।
প্রকৃতপক্ষে, দেশের প্রধান বিচারপতি তফসিলি জাতিদের মধ্যে ভিন্নতা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তারা যে সমজাতীয় গোষ্ঠী নয়, তা তুলে ধরতে ঐতিহাসিক ও অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণের উপর নির্ভর করেছিলেন ৷ অনুচ্ছেদ 140-এ, তিনি একটি অধ্যয়নের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা প্রকাশ করেছে যে কীভাবে নির্দিষ্ট দলিত জাতি অন্যান্য দলিত জাতির বিরুদ্ধে অস্পৃশ্যতা জারি করে রেখেছে ৷ আর কীভাবে দেশের কিছু অংশে নিম্ন উপজাতিদের দলিত মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ।
দেশের প্রধান বিচারপতি বিশেষ করে তফসিলি জাতিদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ও এই নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণও করেন ৷ এই সব প্রমাণের উপর গুরুত্ব দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ইভি চিন্নাইয়া মামলার সমস্ত পর্যবেক্ষণ খারিজ করে দেন, যেখানে তফসিলি জাতিকে তাদের আপেক্ষিক পশ্চাদপদতার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে, সেটাকে অভিন্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ৷
তফসিলি জাতি-উপজাতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির তালিকার কি গুরুত্ব থাকবে না ?
সংবিধানের 341 অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তফসিলি জাতি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি যে তালিকা তৈরি করেন, সেখানেই রাজ্যগুলিকে উপ-শ্রেণি তৈরি করার অনুমতি দেওয়া এই ক্ষেত্রে আরেকটি সমালোচনামূলক উদ্বেগ ৷ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সংবিধানের দু’টি মূল অনুচ্ছেদের দিকে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য৷ তা হল অনুচ্ছেদ 15 ও 16 ৷ অনুচ্ছেদ 15 ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য আটকানোর সঙ্গে সম্পর্কিত ৷ অন্যদিকে অনুচ্ছেদ 16 সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ তৈরির বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৷ আরও সুনির্দিষ্টভাবে, অনুচ্ছেদ 15-র ধারা (4) রাজ্যগুলিকে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিদের অগ্রগতির জন্য ‘যে কোনও বিশেষ বিধান’ করার ক্ষমতা দেয় ৷ আর অনুচ্ছেদ 16-র ধারা (4) রাজ্যগুলিকে ‘যে কোনও অনগ্রসর শ্রেণীর নাগরিকদের অনুকূলে নিয়োগ বা পদের সংরক্ষণ প্রদান করার নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেয়, যদি রাজ্যের হিসেবে চাকরিতে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকে’ ৷
এই মামলায় বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তফসিলি জাতিদের মধ্যে উপ-শ্রেণিবিভাগের পথ প্রশস্ত করতে 15 ও 16 ধারা ব্যবহার করেছেন । দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে 15 ও 16 ধারার অধীনে থাকা ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যগুলি সামাজিক অনগ্রসরতার বিভিন্ন ডিগ্রি চিহ্নিত করতে পারবে এবং তুলনামূলকভাবে আরও পিছিয়ে থাকা তফসিলি জাতিদের জন্য বিশেষ বিধান (যেমন সংরক্ষণ) প্রদান করতে পারবে স্বাধীনভাবে ।
প্রকৃতপক্ষে, দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় উপ-শ্রেণি তৈরিতে রাজ্য সরকারগুলির আইন প্রণয়ন ক্ষমতার বিষয়ে উদ্বেগ মোকাবিলা করার জন্য 15 ও 16 ধারা ব্যবহার করেছেন । তিনি উল্লেখ করেছেন যে এসসিদের উপ-শ্রেণিবদ্ধ করার ক্ষমতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নিয়োগের উদ্দেশ্যে 15(4) ও 16(4) অনুচ্ছেদে পাওয়া যায়, যা আইন প্রণয়ন ক্ষমতার বিষয়ে উদ্বেগ এড়িয়ে যেতে সাহায্য় করে ৷ এই নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বিচারপতি ত্রিবেদী জানিয়েছেন যে 341 ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতি তালিকা শুধুমাত্র সংসদই পরিবর্তন করতে পারে এবং রাজ্য সরকারগুলির দ্বারা যে কোনও উপ-শ্রেণিবিভাগ তৈরির অনুমতি দেওয়া যায় না ৷
রায়ের পক্ষে মতামত দিয়ে বিচারপতি গাভাই স্বীকার করেছেন যে অনুচ্ছেদ 15(4) একটি সক্রিয় বিধান, যা উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সরকারের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয় । তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান যে রাজ্যের দায়িত্ব হল পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই এমন অনগ্রসর শ্রেণির নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া ৷
বিচারপতি গাভাই তাঁর মতামতের অনুচ্ছেদ 258-এ একটি প্রশ্ন হিসাবে এটি তৈরি করেছিলেন - 15 ধারার অধীনে তার দায়িত্ব পালন করার সময় যদি রাজ্য দেখতে পায় যে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে নির্দিষ্ট শ্রেণিগুলি পর্যাপ্তভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে না এবং শুধুমাত্র কয়েকটি বিভাগের অন্তর্গত ব্যক্তিরা তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করছে, তাহলে রাজ্যকে কি এই ধরনের বিভাগগুলির জন্য আরও অগ্রাধিকারমূলক আচরণ করা থেকে বঞ্চিত করা যেতে পারে ? তাঁর দৃষ্টিতে এর উত্তর নেতিবাচক ।
তিনি মতামত দিয়েছিলেন যে সংবিধানের অধীনে সমানাধিকারের নীতি বাধ্যতামূলক করে যে ইতিবাচক পদক্ষেপের সুবিধাগুলি তাঁদের কাছে পৌঁছানো উচিত, যাঁদের সত্যিকারের প্রয়োজন৷ আর উপ-শ্রেণিবিভাগকে প্রকৃত সমানাধিকার অর্জনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে (যা আনুষ্ঠানিক সমানাধিকারের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে হবে) ।
রাজ্যগুলি কীভাবে উপ-শ্রেণি তৈরি করবে ?
উপ-শ্রেণি তৈরি নিয়ে সবুজ সংকেত দেওয়ার সময়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত সতর্কতা ব্যক্ত করেছে যে কেমন সুরক্ষার প্রয়োজন শ্রেণিগুলিকে উপ-শ্রেণিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে । একটি উপ-শ্রেণির যে সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, তা ঠিক করার জন্য রাজ্যগুলিকে অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণে বেশি জোর দিতে হবে এবং তার পর উপ-শ্রেণিবিভাগ তৈরি করতে হবে ৷ রাজ্যগুলিকে একটি উপ-গোষ্ঠীকে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য যুক্তিসঙ্গত কারণও দেখাতে হবে ।
বলা বাহুল্য, যখন একটি রাজ্য সরকার উপ-শ্রেণিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেবে, আদালত সেই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে । উদ্দেশ্য হবে যে কোনও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য উপ-শ্রেণিবিভাগ করা যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা ।
মজার বিষয় হল, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ক্রিমি লেয়ার নীতির প্রয়োগের বিষয়টি মামলায় ছিল না ৷ কিন্তু চারজন বিচারপতি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন ৷ বিচারপতি গাভাই উল্লেখ করেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই সরকারি পরিষেবাগুলিতে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতির সদস্যদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ক্রিমি লেয়ার নীতিকে প্রসারিত করেছে ৷ তিনি ক্রিমি লেয়ার প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছিলেন, যা ইতিমধ্যেই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্যও অনুসরণ করা হয় । বিচারপতি বিক্রম নাথ, পঙ্কজ মিথাল ও সতীশ চন্দ্র শর্মা বিচারপতি গাভাইয়ের সঙ্গে একমত হন ।
এর পর কী হবে ?
560 পাতার বেশি বিস্তৃত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সংরক্ষণ ও প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ করেছে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দেশের প্রধান বিচারপতির ‘কার্যকর প্রতিনিধিত্ব’-এর প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ এবং বিশুদ্ধভাবে সংখ্যাগত দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিনিধিত্ব বিচার না করার বিষয়টি । তিনি উল্লেখ করেছেন ধারা 16(4), পদ ও গ্রেড জুড়ে রাজ্যের চাকরিতে কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে । এটা নিশ্চিত করার জন্য যে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলি কেবল কর্মসংস্থানই অর্জন করে না, বরং তাদের উচ্চতর পদে উন্নীত হওয়ার ন্যায্য সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে । এই পর্যবেক্ষণ শুধু কথার কথা নয়৷ বরং যাদেরকে অস্বীকার করা হয়েছে, তাদের জন্য প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব আনাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয় । প্রত্যাশিতভাবে, রায়টি বেশ ঝড় তুলেছে । সারা দেশে রাজ্য সরকারগুলি কীভাবে এটি প্রয়োগ করে, তা দেখার বিষয় । এটা জরুরি যে যেকোনও বা সমস্ত উপ-শ্রেণিবিভাগ,যদি করা হয়, তাহলে শক্তিশালী তথ্যের উপর ভিত্তি করে তা করতে হবে এবং রাজনৈতিক বা আবেগগতভাবে অনুপ্রাণিত হলে চলবে না ।