ETV Bharat / opinion

ভারতীয় নৌবাহিনীর জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরে লোহিত সাগরের সমস্যা - Red Sea Crisis - RED SEA CRISIS

Indian Navy's Anti Piracy Operations: ভারত এখন লোহিত সাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ৷ 2008 সাল থেকে, ভারতীয় নৌবাহিনী এডেন উপসাগর এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরদারি চালাচ্ছে ৷ যদিও লোহিত সাগরে চলা সংকটের আবহে ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সে যোগ দেয়নি ৷ এ বিষয়ে সবিস্তারে জানালেন ডঃ রাভেল্লা ভানু কৃষ্ণ কিরণ...

Indian Navy
ভারতীয় নৌবাহিনীর জলদস্যু বিরোধী অভিযানে জোর লোহিত সাগরীয় সমস্যা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 3, 2024, 2:29 PM IST

হায়দরাবাদ, 3 এপ্রিল: ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সমস্যা এবং এডেন উপসাগর এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্য জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে হুথি বিদ্রোহীদের হুমকিকে কাজে লাগিয়ে সোমালিয় জলদস্যুদের উপদ্রবের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে । 2018 সালের তুলনায় 2023 সালের শেষের দিকে জলদস্যুদের কার্যকলাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে । এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি লোহিত সাগরে হুথিদের হুমকির মোকাবেলায় অভিযান সমৃদ্ধি কার্যকলাপ এবং অপারেশন অ্যাসপিডস নিয়ে ব্যস্ত ৷ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জলদস্যুদের উপদ্রপ বৃদ্ধি ভারতীয় নৌবাহিনীকে সোমালিয়ার জলসীমায় বাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য করেছে । জলদস্যু বিরোধী অভিযান, দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতিতে 20 বছরের অভিজ্ঞতার ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী বাণিজ্য জাহাজগুলির জন্য নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ।

ভারত এখন লোহিত সাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেটি 2008 সাল থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং চিনের চেয়ে এই অঞ্চলের বৃহত্তম নৌবাহিনী-সহ টহল দিচ্ছে । 2008 সাল থেকে, ভারতীয় নৌবাহিনী এডেন উপসাগর এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরদারি চালাচ্ছে ৷ প্রায় 106টি নজরদারি জাহাজ ব্যবহার করে সফলভাবে 3,440টি জাহাজ এবং 25,000 জনেরও বেশি নাবিককে নিরাপত্তা দিয়েছে ৷ জুন 2019-এ ওমান উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার পর, ভারতীয় নৌবাহিনী হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভারতীয় জাহাজের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরে ‘অপারেশন সংকল্প’ শুরু করে । লোহিত সাগরে চলা সংকটের আবহে ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সে যোগ দেয়নি ৷ যদিও এই টাস্ক ফোর্স হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে । কিন্তু লোহিত সাগরের ক্রমবর্ধমান সঙ্কট এবং জলদস্যুদের উপদ্রবের মোকাবেলায় একটি কৌশলগত পদক্ষেপে, ভারতীয় নৌবাহিনী জিবুতি, এডেন উপসাগর এবং সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলে উত্তর ও মধ্য আরব সাগর-সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ।

লোহিত সাগরে হুথিদের সঙ্গে লড়াই করার পরিবর্তে, ভারতীয় নৌবাহিনী প্রাথমিকভাবে এডেন উপসাগর এবং আরব সাগরে বর্ধিত জলদস্যু উপদ্রবের মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিয়েছে ৷ এ জন্য নৌবাহিনী 12টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যেগুলিতে রয়েছে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, দূরপাল্লার নজরদারিতে সক্ষম সামুদ্রিক বিমান, ডর্নিয়ার বিমান-সহ একাধিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । বাণিজ্যিক জাহাজের যাতায়াতে সুরক্ষা দিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর এমকিউ9বি ড্রোন এবং বিশেষ কমান্ডোরা আরব সাগরে প্রায় 40 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার (15 লক্ষ বর্গ মাইল) এলাকাজুড়ে নজরদারি চালাচ্ছে । জলদস্যুদের হামলা প্রতিহত করতে বিধ্বংসী আইএনএস কলকাতা, আইএনএস বিশাখাপত্তনম, আইএনএস কোচি, আইএনএস চেন্নাই, আইএনএস মুরমুগাও এবং তলোয়ার-শ্রেণীর ফ্রিগেট এবং মিসাইল বোট সম্বলিত টাস্ক গ্রুপ মোতায়েন করা হয়েছে । এর মধ্যে 2টি উন্নত জাহাজ এডেন উপসাগরে এবং বাকি 10টি জাহাজ উত্তর ও পশ্চিম আরব সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে । এর মধ্যে অন্তত 4টি যুদ্ধজাহাজে ব্রহ্মোস ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল, সারফেস টু এয়ার মিসাইল, অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার-সক্ষম হেলিকপ্টার, সি গার্ডিয়ান ড্রোন এবং নজরদারির জন্য পি8আই বিমান রয়েছে ।

এই অঞ্চলে নিয়োজিত ভারতীয় নৌবাহিনী গত দুই মাসে 250টিরও বেশি জাহাজ এবং ছোট নৌকার উপর নজরদারি চালিয়েছে, 40টিরও বেশি জাহাজকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে ৷ 2023 সালের ডিসেম্বর থেকে এই অঞ্চলে অনেকগুলি বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে । সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের সম্মেলনের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমুদ্রে জলদস্যুদের জাহাজ আটক করা এবং দস্যুদের গ্রেফতার করা এবং ওই জাহাজে থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার এখতিয়ার (আইনের 105 ধারায় ) এবং জলদস্যুবৃত্তির সঙ্গে জড়িত সন্দেহজনক জাহাজ দেখার অধিকার (আইনের 110 ধারা) মেনেই এই নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় নৌসেনারা । পাশাপাশি, ভারতের 2022 সালের মেরিটাইম অ্যান্টি-পাইরেসি অ্যাক্ট সমুদ্রে জলদস্যুদের দমন সংক্রান্ত এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত ধারাগুলিকেই কার্যকর করে ।

2023 সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক জাহাজ রুয়েন, এমভি কেম প্লুটো, এমভি সাই বাবা এবং 2024 সালের জানুয়ারিতে এমভি লীলা নরফোক, এফভি ইমান, এফভি আল নঈমি, এমভি জেনকো পিকার্ডি, এমভি মার্লিন লুন্ডা এবং মার্চে এমএসসি স্কাই 2, এমভি আবদুল্লাহ যেগুলিকে জলদস্যুদের হাত থেকে এই অঞ্চলে মোতায়েন করা ভারতীয় নৌসেনার জাহাজ উদ্ধার করেছে । সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাত থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ এক্স এমভি রুয়েনকে উদ্ধার করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী পরিচালিত সাম্প্রতিকতম বিশাল এবং নির্ভীক অভিযানটি এর অসামান্য প্রতিরক্ষা ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে । ভারতীয় নৌবাহিনী এক্স এমভি রুয়েনকে লুঠ করতে সোমালি জলদস্যুদের বাধা দিয়েছে । 14 ডিসেম্বর, 2023 সালে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা জাহাজটি 15 মার্চ আইএনএস কলকাতা আটকে দেয়, 16 মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনী এটিকে পুনরুদ্ধার করে, 17 জন ক্রু সদস্য এবং ক্যারিয়ার এমভি রুয়েনের 37,800 টন কার্গোকে উদ্ধার করে । এই অভিযানে, ভারতীয় নৌবাহিনী একটি আইএএফ সি-17 বিমান দ্বারা মেরিন কমান্ডো (মার্কোস) সহ দুটি কমব্যাট রাবারাইজড রেইডিং ক্রাফ্ট (সিআরআরসি) বোটগুলির একটি নির্ভুল ড্রপিং-এর মাধ্যমে বিশ্বমানের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে যা ভারত থেকে প্রায় 2,600 কিলোমিটার দূরে উত্তর আরব সাগরের তীরে সংগঠিত হয় । অনেক বিশেষজ্ঞই এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন । কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের জন ব্র্যাডফোর্ড এই অভিযানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, "একটি সমন্বিত শক্তি ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো হয়েছে যার মধ্যে একটি যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, ফিক্সড অ্যান্ড রোটারি-উইং বিমান এবং মার্কোস কমান্ডোদের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত ।"

মজার বিষয় হল, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনীর কার্যকরী জলদস্যু বিরোধী অভিযান দেশের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে যথাযথ স্বীকৃতি এবং গতি দিয়েছে । বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ জলদস্যুদের হাতে বন্দি হওয়া নাগরিকদের সফলভাবে উদ্ধার করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান । ইন্দো-প্যাসিফিক বিশেষজ্ঞ যোগেশ জোশী বলেন, "ভারতের ক্ষমতা, বিশেষ করে তার সামরিক এবং নৌবাহিনীর দক্ষতা সাম্প্রতিক কয়েক দশকে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে নতুন প্রেরণা দিয়েছে যা ভারতীয় অ্যাডমিরালরা বিগত কয়েক দশক ধরে চেয়েছিলেন । এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এই মূল সত্যটিকে সমর্থন করে বলেন, "ভারতীয় নৌবাহিনী লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য এবং অত্যন্ত সক্ষম টাস্ক গ্রুপ তৈরি করছে। "

গ্লোবাল কমন্সের প্রতিরক্ষায় তার নৌবাহিনীর কৌশলগত মোতায়েন থেকে শুরু করে, সামুদ্রিক রিকনেসান্স বিমানের সাহায্যে ক্রমাগত নজরদারি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং নৌ সেনা কমান্ডোদের এয়ার-ড্রপিং, ভারত সাগরে সংঘাতের পরিস্থিতিগুলির মোকাবিলা করার জন্য একটি চিত্তাকর্ষক এবং দৃষ্টান্তমূলক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে । ভারত কীভাবে বিশ্ব সাধারণের সুরক্ষায় একটি নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠছে তা ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশ্বমানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বারবার প্রমাণ করেছে ৷ এর পাশাপাশি বেইজিংকে একটি বার্তাও দেয় যে ভারত মহাসাগরে ভবিষ্যতের শক্তির ভারসাম্যের জন্য নয়াদিল্লি কতটা ক্ষমতা রাখে ।

আরও পড়ুন:

চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে হামলা দু'দেশের মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়েছে

ঋণের বোঝা! প্রত্যাশিতভাবেই ভারতের সম্পর্কে সুর নরম করল মলদ্বীপ

দাম কমলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবহার-বিক্রিও বাড়তে পারে

হায়দরাবাদ, 3 এপ্রিল: ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সমস্যা এবং এডেন উপসাগর এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্য জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে হুথি বিদ্রোহীদের হুমকিকে কাজে লাগিয়ে সোমালিয় জলদস্যুদের উপদ্রবের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে । 2018 সালের তুলনায় 2023 সালের শেষের দিকে জলদস্যুদের কার্যকলাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে । এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি লোহিত সাগরে হুথিদের হুমকির মোকাবেলায় অভিযান সমৃদ্ধি কার্যকলাপ এবং অপারেশন অ্যাসপিডস নিয়ে ব্যস্ত ৷ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জলদস্যুদের উপদ্রপ বৃদ্ধি ভারতীয় নৌবাহিনীকে সোমালিয়ার জলসীমায় বাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য করেছে । জলদস্যু বিরোধী অভিযান, দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতিতে 20 বছরের অভিজ্ঞতার ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী বাণিজ্য জাহাজগুলির জন্য নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ।

ভারত এখন লোহিত সাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেটি 2008 সাল থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং চিনের চেয়ে এই অঞ্চলের বৃহত্তম নৌবাহিনী-সহ টহল দিচ্ছে । 2008 সাল থেকে, ভারতীয় নৌবাহিনী এডেন উপসাগর এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরদারি চালাচ্ছে ৷ প্রায় 106টি নজরদারি জাহাজ ব্যবহার করে সফলভাবে 3,440টি জাহাজ এবং 25,000 জনেরও বেশি নাবিককে নিরাপত্তা দিয়েছে ৷ জুন 2019-এ ওমান উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার পর, ভারতীয় নৌবাহিনী হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভারতীয় জাহাজের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরে ‘অপারেশন সংকল্প’ শুরু করে । লোহিত সাগরে চলা সংকটের আবহে ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সে যোগ দেয়নি ৷ যদিও এই টাস্ক ফোর্স হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে । কিন্তু লোহিত সাগরের ক্রমবর্ধমান সঙ্কট এবং জলদস্যুদের উপদ্রবের মোকাবেলায় একটি কৌশলগত পদক্ষেপে, ভারতীয় নৌবাহিনী জিবুতি, এডেন উপসাগর এবং সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলে উত্তর ও মধ্য আরব সাগর-সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ।

লোহিত সাগরে হুথিদের সঙ্গে লড়াই করার পরিবর্তে, ভারতীয় নৌবাহিনী প্রাথমিকভাবে এডেন উপসাগর এবং আরব সাগরে বর্ধিত জলদস্যু উপদ্রবের মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিয়েছে ৷ এ জন্য নৌবাহিনী 12টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যেগুলিতে রয়েছে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, দূরপাল্লার নজরদারিতে সক্ষম সামুদ্রিক বিমান, ডর্নিয়ার বিমান-সহ একাধিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । বাণিজ্যিক জাহাজের যাতায়াতে সুরক্ষা দিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর এমকিউ9বি ড্রোন এবং বিশেষ কমান্ডোরা আরব সাগরে প্রায় 40 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার (15 লক্ষ বর্গ মাইল) এলাকাজুড়ে নজরদারি চালাচ্ছে । জলদস্যুদের হামলা প্রতিহত করতে বিধ্বংসী আইএনএস কলকাতা, আইএনএস বিশাখাপত্তনম, আইএনএস কোচি, আইএনএস চেন্নাই, আইএনএস মুরমুগাও এবং তলোয়ার-শ্রেণীর ফ্রিগেট এবং মিসাইল বোট সম্বলিত টাস্ক গ্রুপ মোতায়েন করা হয়েছে । এর মধ্যে 2টি উন্নত জাহাজ এডেন উপসাগরে এবং বাকি 10টি জাহাজ উত্তর ও পশ্চিম আরব সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে । এর মধ্যে অন্তত 4টি যুদ্ধজাহাজে ব্রহ্মোস ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল, সারফেস টু এয়ার মিসাইল, অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার-সক্ষম হেলিকপ্টার, সি গার্ডিয়ান ড্রোন এবং নজরদারির জন্য পি8আই বিমান রয়েছে ।

এই অঞ্চলে নিয়োজিত ভারতীয় নৌবাহিনী গত দুই মাসে 250টিরও বেশি জাহাজ এবং ছোট নৌকার উপর নজরদারি চালিয়েছে, 40টিরও বেশি জাহাজকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে ৷ 2023 সালের ডিসেম্বর থেকে এই অঞ্চলে অনেকগুলি বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে । সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের সম্মেলনের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমুদ্রে জলদস্যুদের জাহাজ আটক করা এবং দস্যুদের গ্রেফতার করা এবং ওই জাহাজে থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার এখতিয়ার (আইনের 105 ধারায় ) এবং জলদস্যুবৃত্তির সঙ্গে জড়িত সন্দেহজনক জাহাজ দেখার অধিকার (আইনের 110 ধারা) মেনেই এই নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় নৌসেনারা । পাশাপাশি, ভারতের 2022 সালের মেরিটাইম অ্যান্টি-পাইরেসি অ্যাক্ট সমুদ্রে জলদস্যুদের দমন সংক্রান্ত এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত ধারাগুলিকেই কার্যকর করে ।

2023 সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক জাহাজ রুয়েন, এমভি কেম প্লুটো, এমভি সাই বাবা এবং 2024 সালের জানুয়ারিতে এমভি লীলা নরফোক, এফভি ইমান, এফভি আল নঈমি, এমভি জেনকো পিকার্ডি, এমভি মার্লিন লুন্ডা এবং মার্চে এমএসসি স্কাই 2, এমভি আবদুল্লাহ যেগুলিকে জলদস্যুদের হাত থেকে এই অঞ্চলে মোতায়েন করা ভারতীয় নৌসেনার জাহাজ উদ্ধার করেছে । সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাত থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ এক্স এমভি রুয়েনকে উদ্ধার করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী পরিচালিত সাম্প্রতিকতম বিশাল এবং নির্ভীক অভিযানটি এর অসামান্য প্রতিরক্ষা ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে । ভারতীয় নৌবাহিনী এক্স এমভি রুয়েনকে লুঠ করতে সোমালি জলদস্যুদের বাধা দিয়েছে । 14 ডিসেম্বর, 2023 সালে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা জাহাজটি 15 মার্চ আইএনএস কলকাতা আটকে দেয়, 16 মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনী এটিকে পুনরুদ্ধার করে, 17 জন ক্রু সদস্য এবং ক্যারিয়ার এমভি রুয়েনের 37,800 টন কার্গোকে উদ্ধার করে । এই অভিযানে, ভারতীয় নৌবাহিনী একটি আইএএফ সি-17 বিমান দ্বারা মেরিন কমান্ডো (মার্কোস) সহ দুটি কমব্যাট রাবারাইজড রেইডিং ক্রাফ্ট (সিআরআরসি) বোটগুলির একটি নির্ভুল ড্রপিং-এর মাধ্যমে বিশ্বমানের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে যা ভারত থেকে প্রায় 2,600 কিলোমিটার দূরে উত্তর আরব সাগরের তীরে সংগঠিত হয় । অনেক বিশেষজ্ঞই এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন । কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের জন ব্র্যাডফোর্ড এই অভিযানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, "একটি সমন্বিত শক্তি ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো হয়েছে যার মধ্যে একটি যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, ফিক্সড অ্যান্ড রোটারি-উইং বিমান এবং মার্কোস কমান্ডোদের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত ।"

মজার বিষয় হল, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনীর কার্যকরী জলদস্যু বিরোধী অভিযান দেশের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে যথাযথ স্বীকৃতি এবং গতি দিয়েছে । বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ জলদস্যুদের হাতে বন্দি হওয়া নাগরিকদের সফলভাবে উদ্ধার করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান । ইন্দো-প্যাসিফিক বিশেষজ্ঞ যোগেশ জোশী বলেন, "ভারতের ক্ষমতা, বিশেষ করে তার সামরিক এবং নৌবাহিনীর দক্ষতা সাম্প্রতিক কয়েক দশকে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে নতুন প্রেরণা দিয়েছে যা ভারতীয় অ্যাডমিরালরা বিগত কয়েক দশক ধরে চেয়েছিলেন । এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এই মূল সত্যটিকে সমর্থন করে বলেন, "ভারতীয় নৌবাহিনী লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য এবং অত্যন্ত সক্ষম টাস্ক গ্রুপ তৈরি করছে। "

গ্লোবাল কমন্সের প্রতিরক্ষায় তার নৌবাহিনীর কৌশলগত মোতায়েন থেকে শুরু করে, সামুদ্রিক রিকনেসান্স বিমানের সাহায্যে ক্রমাগত নজরদারি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং নৌ সেনা কমান্ডোদের এয়ার-ড্রপিং, ভারত সাগরে সংঘাতের পরিস্থিতিগুলির মোকাবিলা করার জন্য একটি চিত্তাকর্ষক এবং দৃষ্টান্তমূলক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে । ভারত কীভাবে বিশ্ব সাধারণের সুরক্ষায় একটি নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠছে তা ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশ্বমানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বারবার প্রমাণ করেছে ৷ এর পাশাপাশি বেইজিংকে একটি বার্তাও দেয় যে ভারত মহাসাগরে ভবিষ্যতের শক্তির ভারসাম্যের জন্য নয়াদিল্লি কতটা ক্ষমতা রাখে ।

আরও পড়ুন:

চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে হামলা দু'দেশের মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়েছে

ঋণের বোঝা! প্রত্যাশিতভাবেই ভারতের সম্পর্কে সুর নরম করল মলদ্বীপ

দাম কমলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবহার-বিক্রিও বাড়তে পারে

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.