ETV Bharat / opinion

বিশ্লেষণ: জেলবন্দি অবস্থায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি পারেন সরকার চালাতে? - DELHI CM ARVIND KEJRIWAL

Arvind Kejriwal: ইডির হাতে গ্রেফতার হলেও মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ বরং আপের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, প্রয়োজনে জেল থেকেই সরকার চালাবেন আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত অরবিন্দ ৷ কিন্তু জেল থেকে সরকার চালানো কী সম্ভব? মতামত ব্যক্ত করলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন মহাসচিব বিবেক কে অগ্নিহোত্রী ৷

Arvind Kejriwal
অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি পারেন সরকার চালাতে?
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 25, 2024, 6:13 PM IST

Updated : Mar 25, 2024, 8:16 PM IST

হায়দরাবাদ, 25 মার্চ: দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আপাতত সাতদিনের ইডি হেফাজতে ৷ জামিনের আবেদন নিম্ন আদালতে খারিজ হওয়ার পরই দল সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমনত্রী ৷ তবে এতকিছুর পরেও আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়েননি ৷ আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ বিরোধী শিবিরের তরফ থেকেই ইতিমধ্যেই অরবিন্দের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে ৷

অন্যদিকে আম আদমি দলের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, জেল থেকেই সরকার চালাবেন কেজরিওয়াল ৷ এমনকী দিল্লি বিধানসভার স্পিকারও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন কেজরিওয়াল ৷ এই ঘটনরা পরেই সরব হয়েছে বিরোধী শিবির ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ দলের নেতারা ইতিমধ্যেই ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছেন ৷ তাঁদের বক্তব্য, জেল থেকে গ্যাংস্টারটা তাদের সাম্রাজ্য চালানোর জন্য পরিচিত হলেও কোনও সাংবিধানকি প্রধান এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না ৷

এরপরেই বিরোধী শিবির জয়ললিতা, লালু প্রসাদ যাদব, উমা ভারতী, বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং সাম্প্রতিক সময়ে হেমন্ত সোরেনের মামলার উদাহরণ টেনে আনেন ৷ তাদের মতে, এই সকল সাংবিধানিক প্রধানের প্রত্যেকেই সংশোধনাগারে যাওয়ার আগে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন ৷ এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ইডি হেফাজতে থাকার পরও সেখান থেকে সরকার চালানোর কথা বলা হয়েছে ৷

এর আগে, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, সাংবিধানিক নৈতিকতা, সুশাসন এবং সাংবিধানিক আস্থা জনপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মৌলিক নিয়ম। অন্যদিকে, মাদ্রাজ হাইকোর্টে এস রামচন্দ্রন বনাম ভি সেন্থিল বালাজির এজলাসে সাম্প্রতিক রায়ের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়েছে , একজন মন্ত্রী যিনি জনগণের দরবারে অধিষ্ঠিত হবেন, তাঁকে অবশ্যই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হবে ৷ তিনি কোনও ভাবেই কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না ৷

যুক্তিগুলি মনোজ নেরুলা বনাম ভারতের ইউনিয়নে সুপ্রিম কোর্টের 2014 সালের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়কে নির্দেশ করে ৷ যেখানে বলা হয়েছিল যে, সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মৌলিক নিয়মগুলি হল সাংবিধানিক নৈতিকতা যা আইনের শাসনের বিপরীতে কাজ এড়ানোর ভাল। শাসন যা বৃহত্তর জনস্বার্থে ভাল কাজ করার লক্ষ্য এবং সাংবিধানিক আস্থা, যা সরকারি অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত উচ্চস্তরের নৈতিকতাকে সমুন্নত রাখা। হাইকোর্ট সম্মত হয়েছে যে নাগরিকরা আশা করে যে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের উচ্চ নৈতিক আচরণের মান থাকতে হবে।

এর পাশাপাশি, জনসেবক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাস্তবতার বিষয়টিও রয়েছে। একজন বন্দি জেলের নিয়মের অধীন। কারাগারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করা বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা এবং কাজের নানা ফাইল দেখা, ইত্যাদি বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। আবারও সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে অসামরিক কর্মচারীদের কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া রাজনৈতিক কর্তাদের মৌখিক নির্দেশে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আদালত হোতা কমিটি (2004) এবং সান্থানম কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ উল্লেখ করেছে, যা 'সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশাবলী এবং নির্দেশাবলী রেকর্ড করার প্রয়োজনীয়তা' তুলে ধরেছে।

এই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আম আদমি পার্টির নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন যে কেজরিওয়ালকে সরকার চালানোর জন্য অস্থায়ী কারাগার হিসাবে ঘোষণা করা একটি ভবনে রাখা যেতে পারে। অন্য একটি উপায় হল দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন ৷ যদি তিনি মনে করেন কেজরিওয়াল সংশোধনাগারে থাকাকালীন সরকার চালাতে পারেন না, সেক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের 356 অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা নিয়ম অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন ৷

আরও পড়ুন:

1. অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদোক্তাদের সাহায্য জরুরি, পড়ুন বিস্তারিত

2. বিশ্লেষণ: লোকসভা ভোটের আগে কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ভুটান সফর তাৎপর্যপূর্ণ?

3. কেন ও কীভাবে হয় ভূমিকম্প ? সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কাহিনী 'দ্য রাম্বলিং আর্থ'

হায়দরাবাদ, 25 মার্চ: দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আপাতত সাতদিনের ইডি হেফাজতে ৷ জামিনের আবেদন নিম্ন আদালতে খারিজ হওয়ার পরই দল সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমনত্রী ৷ তবে এতকিছুর পরেও আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়েননি ৷ আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ বিরোধী শিবিরের তরফ থেকেই ইতিমধ্যেই অরবিন্দের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে ৷

অন্যদিকে আম আদমি দলের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, জেল থেকেই সরকার চালাবেন কেজরিওয়াল ৷ এমনকী দিল্লি বিধানসভার স্পিকারও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন কেজরিওয়াল ৷ এই ঘটনরা পরেই সরব হয়েছে বিরোধী শিবির ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ দলের নেতারা ইতিমধ্যেই ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছেন ৷ তাঁদের বক্তব্য, জেল থেকে গ্যাংস্টারটা তাদের সাম্রাজ্য চালানোর জন্য পরিচিত হলেও কোনও সাংবিধানকি প্রধান এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না ৷

এরপরেই বিরোধী শিবির জয়ললিতা, লালু প্রসাদ যাদব, উমা ভারতী, বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং সাম্প্রতিক সময়ে হেমন্ত সোরেনের মামলার উদাহরণ টেনে আনেন ৷ তাদের মতে, এই সকল সাংবিধানিক প্রধানের প্রত্যেকেই সংশোধনাগারে যাওয়ার আগে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন ৷ এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ইডি হেফাজতে থাকার পরও সেখান থেকে সরকার চালানোর কথা বলা হয়েছে ৷

এর আগে, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, সাংবিধানিক নৈতিকতা, সুশাসন এবং সাংবিধানিক আস্থা জনপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মৌলিক নিয়ম। অন্যদিকে, মাদ্রাজ হাইকোর্টে এস রামচন্দ্রন বনাম ভি সেন্থিল বালাজির এজলাসে সাম্প্রতিক রায়ের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়েছে , একজন মন্ত্রী যিনি জনগণের দরবারে অধিষ্ঠিত হবেন, তাঁকে অবশ্যই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হবে ৷ তিনি কোনও ভাবেই কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না ৷

যুক্তিগুলি মনোজ নেরুলা বনাম ভারতের ইউনিয়নে সুপ্রিম কোর্টের 2014 সালের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়কে নির্দেশ করে ৷ যেখানে বলা হয়েছিল যে, সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মৌলিক নিয়মগুলি হল সাংবিধানিক নৈতিকতা যা আইনের শাসনের বিপরীতে কাজ এড়ানোর ভাল। শাসন যা বৃহত্তর জনস্বার্থে ভাল কাজ করার লক্ষ্য এবং সাংবিধানিক আস্থা, যা সরকারি অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত উচ্চস্তরের নৈতিকতাকে সমুন্নত রাখা। হাইকোর্ট সম্মত হয়েছে যে নাগরিকরা আশা করে যে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের উচ্চ নৈতিক আচরণের মান থাকতে হবে।

এর পাশাপাশি, জনসেবক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাস্তবতার বিষয়টিও রয়েছে। একজন বন্দি জেলের নিয়মের অধীন। কারাগারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করা বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা এবং কাজের নানা ফাইল দেখা, ইত্যাদি বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। আবারও সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে অসামরিক কর্মচারীদের কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া রাজনৈতিক কর্তাদের মৌখিক নির্দেশে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আদালত হোতা কমিটি (2004) এবং সান্থানম কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ উল্লেখ করেছে, যা 'সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশাবলী এবং নির্দেশাবলী রেকর্ড করার প্রয়োজনীয়তা' তুলে ধরেছে।

এই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আম আদমি পার্টির নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন যে কেজরিওয়ালকে সরকার চালানোর জন্য অস্থায়ী কারাগার হিসাবে ঘোষণা করা একটি ভবনে রাখা যেতে পারে। অন্য একটি উপায় হল দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন ৷ যদি তিনি মনে করেন কেজরিওয়াল সংশোধনাগারে থাকাকালীন সরকার চালাতে পারেন না, সেক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের 356 অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা নিয়ম অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন ৷

আরও পড়ুন:

1. অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদোক্তাদের সাহায্য জরুরি, পড়ুন বিস্তারিত

2. বিশ্লেষণ: লোকসভা ভোটের আগে কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ভুটান সফর তাৎপর্যপূর্ণ?

3. কেন ও কীভাবে হয় ভূমিকম্প ? সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কাহিনী 'দ্য রাম্বলিং আর্থ'

Last Updated : Mar 25, 2024, 8:16 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.