ETV Bharat / opinion

নভেম্বরের ঐতিহাসিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেক কিছুই প্রথমবার ঘটতে চলেছে - US Presidential Polls 2024

author img

By Rajkamal Rao

Published : 2 hours ago

Updated : 1 hours ago

US Presidential Polls 2024: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী 5 নভেম্বর ৷ এবারের ভোটে মুখোমুখি লড়াইয়ে রয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ৷ লেখক দাবি করেছেন যে 2024 সালের এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার এমন অনেক কিছু হবে, যা প্রথমবার ঘটতে চলেছে ৷ ফলে এবার নির্বাচন ঐতিহাসিক ।

US Presidential Polls 2024
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প (এপি)

আগামী 5 নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৷ সেদিনই তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবেন আমেরিকানরা ৷ এবারের নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক ৷ এই ভোট এতটাই ঐতিহাসিক যে আমাদের জীবনে এমন আরেকটি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব ।

1789 সালে জর্জ ওয়াশিংটন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে 2008 সালের নির্বাচন পর্যন্ত দু’জন শ্বেতাঙ্গের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই হয়েছে ৷ 2016 সালের নির্বাচন ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে ৷ কারণ, প্রথম মহিলা হিসেবে প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছিলেন । কিন্তু তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান ৷ যিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কখনও রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি ।

US Presidential Polls 2024
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস (এপি)

যদিও উপরের সমস্ত তথ্য ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে ৷ তবে এই বছরের নির্বাচনের কোনও তুলনা হয় না ৷ কারণ, এবার অনেক কিছুই প্রথমবারের জন্য হচ্ছে ৷

কমলা হ্যারিস হলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, যিনি এবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়েছেন ৷ কমলা ও তাঁর বোন মায়ার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ৷ তাঁর মা শ্যামলা গোপালন ৷ তিনি একজন তামিল ব্রাহ্মণ মহিলা, যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ক্যানসার গবেষক ৷ তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ৷ তিনি একজন জ্যামাইকান ব্যক্তি, যিনি স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । আমেরিকান রীতি অনুযায়ী, সন্তানরা বাবার নামের শেষ অংশ ব্যবহার করেন ৷ তাই কমলার পুরো নাম কমলা হ্যারিস ।

তাঁর বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়৷ আদালতে তাঁর বাবা সন্তানদের হেফাজতে নেওয়ার অধিকার হারান । কমলার বয়স তখন পাঁচ বছর । তাঁর মা প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়া এবং পরে কানাডায় বাচ্চাদের বড় করেছেন । কিন্তু কমলা তাঁর বাবার নামের শেষ অংশ ব্যবহার করেন ৷ তিনি যখন 2016 সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন (রাজ্যসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সমতুল, যদিও আমেরিকাতে উচ্চকক্ষের সদস্যরা জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হন, যেন এটা লোকসভা নির্বাচন), তখন তিনি নিজেকে এশিয়ান আমেরিকান হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন ।

US Presidential Polls 2024
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস৷ (এপি)

ক্যালিফোর্নিয়ায় অনেক এবং ধনী ভারতীয় বংশদ্ভুতের জনসংখ্যা রয়েছে, যা তাঁর প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছিল । তিনি প্রথম এশিয়ান আমেরিকান নারী হিসেবে সিনেটে জয়ী হয়েছেন ।

একবার সিনেটে কমলা নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন ৷ যদিও তিনি কখনও একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে বসবাস করেননি বা সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের কোনও সমস্যাও অনুভব করেননি । এটি তাঁর পক্ষ থেকে একটি কৌশলী পদক্ষেপ ছিল ৷ কারণ, 250 বছর ধরে আমেরিকান রাজনীতিতে কৃষ্ণাঙ্গদের কম প্রতিনিধিত্ব ছিল । এইভাবে তিনি সিনেটে দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হয়েছিলেন । [প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ছিলেন ক্যারল মোসেলি ব্রাউন (ইলিনয়), যিনি 1993 থেকে 1999 পর্যন্ত সদস্য ছিলেন] ।

2020 সালে কমলা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি রেসে প্রবেশ করেছিলেন ৷ একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি এতটাই খারাপভাবে হেরেছিলেন যে তিনি একক ভোটে জয়ী হওয়ার আগে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছিলেন । চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন যখন একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট খুঁজছিলেন, তখন তিনি ইতিহাস তৈরি করার জন্য কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছিলেন । যখন তাঁরা জিতেছেন, তখন কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ৷ একে রাজনৈতিক ক্ষমতায় চমৎকার আরোহণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ।

জো বাইডেন লড়াই থেকে বাদ পড়লেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । চলতি বছরের 27 জুন পর্যন্ত সারা বিশ্ব ধরে নিয়েছিল যে বাইডেন ও হ্যারিস নভেম্বরে ট্রাম্প ও ভ্যান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন । বাইডেন আবারও ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে অংশ নিয়েছিলেন এবং চার মাস ধরে সারা দেশে প্রচার চালিয়েছেন ৷ 98 শতাংশেরও বেশি ডেলিগেট ভোট পেয়ে তিনি নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন ।

কিন্তু, বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে বাইডেনকে বেশিরভাগ সময় উত্তরহীন হিসেবে দেখা গিয়েছিল ৷ তাঁর কথাবার্তাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে ৷ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা দ্রুত পদক্ষেপ করেন ৷ তাঁকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা করতে বাধ্য করে ৷ আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও দলের মনোনীত প্রার্থী স্বেচ্ছায় প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন ।

তারপর, আরও অবিশ্বাস্য কিছু ঘটেছে । বাইডেন বলেছিলেন যে তিনি কমলা হ্যারিসকে মনোনীত করতে চেয়েছিলেন । কিছু দিনের মধ্যে বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাটিক নেতারা কমলাকে সমর্থন করতে রাজি হন এবং এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনীত হয়েছিলেন । আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলীয় নেতারা একজন মনোনীত প্রার্থীকে বেছে নিয়েছিলেন । আমেরিকার ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো যে কেউ একটিও ভোটে জেতেননি বা ডেলিগেট ভোট পাননি ৷ 2020 সালে যেমন তিনি একটি প্রধান দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ।

ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইতিহাস গড়বেন, যা 1892 সাল থেকে হয়নি । ট্রাম্প 2017 থেকে 2021 সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন । এরপর দায়িত্ব নেন বাইডেন । এখন আবারও জয়ের দোরগোড়ায় ট্রাম্প । যদি তিনি ফের জয়ী হন, তাহলে তিনি ইতিহাস রচনা করবেন, যা 1892 সাল থেকে হয়নি । গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড একমাত্র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, যিনি অবিচ্ছিন্ন মেয়াদে জয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন ৷ সেটা 1892 সালে ঘটেছিল ৷ 1884 সালে ক্লিভল্যান্ড প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন ৷ 1888 সালে তিনি বেঞ্জামিন হ্যারিসনের কাছে হেরে যান ৷ 1892 সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়ে ফিরে আসেন । আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি হয়তো আর দেখতে পাব না ৷

ট্রাম্পকে একবার নয়, দু’বার গুলি করা হয়েছে । যদিও ট্রাম্প তাঁর নিজের শক্তঘাঁটির সঙ্গে অসাধারণ জনপ্রিয় ৷ অনেক আমেরিকান, যাঁদের মধ্যে বেশ কিছু বিশ্বনেতাও রয়েছেন, তাঁকে পছন্দ করেন না । তাঁরা মনে করেন যে ট্রাম্প খুব কড়া কথা বলেন ৷ ট্রাম্প খুব বর্ণবিদ্বেষী ৷ তাঁকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয় ৷ কারণ, 2021 সালের 6 জানুয়ারি তাঁর ক্রিয়াকলাপ নিয়েই এই কথা বলা হয় ৷ সেদিন তাঁর সমর্থকরা সংসদে হামলা চালায় ৷ যদিও ট্রাম্প কখনও হিংসার পক্ষে ছিলেন না । 2020 নির্বাচনের ফলাফলে বাইডেন ও হ্যারিসের জয়কে জালিয়াতি বলে অভিযোগ করে যখন ট্রাম্প প্রতিবাদ করছিলেন, সেই সময় হামলা হয় ।

US Presidential Polls 2024
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ (এপি)

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে জীবনের জন্য সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে । সেই কারণে তিনি জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান ৷ সেই কারণেই ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার বাটলারে একজন আততায়ীর বুলেটে নিহত হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান । ট্রাম্প একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন এবং একটি বড় স্ক্রিনে একটি তালিকা থেকে কিছু পড়ার জন্য ডানদিকে তাকিয়েছিলেন । সেই মুহূর্তে, একজন যুবক তাঁর একে-47 অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালায় ৷

একজন সিক্রেট সার্ভিস স্নাইপার গুলির শব্দ শুনতে পান এবং পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে শুটারকে খুঁজে বের করেন ৷ তাঁকে 400 গজেরও বেশি দূর থেকে হত্যা করেন, যা খুবই নিখুঁত বলে বর্ণনা করা হয় । এই পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ট্রাম্পের মাথার উপর দিয়ে গুলি বেরিয়ে যায় ৷ যদিও অন্যান্য সিক্রেট সার্ভিস পার্সোনেলরা তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন ৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দেন ৷ হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে থাকা কারও উপর শেষবার হামলা হয়েছিল 1981 সালের 30 মার্চ ৷ সেই সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে জন হিঙ্কল নামে একজন হত্যা চেষ্টা করে ৷ তিনি আহত হন । বেঁচে যান রিগান ।

US Presidential Polls 2024
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ (এপি)

যদিও একটি হত্যার প্রচেষ্টা ইতিহাস তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল না ৷ অন্য একজন শুটার, রায়ান রাউথ, যিনি একজন ইউক্রেন সমর্থক, তিনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের গল্ফ কোর্সের গাছের লাইনে অস্ত্র নিয়ে 12 ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন । ট্রাম্প যখন খেলছিলেন, তখন একজন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার সময় একটি গর্ত দেখতে পান ৷ সেখানে এজেন্টরা একটি রাইফেলের ব্যারেল দেখতে পান । এজেন্ট গুলি চালান ৷ শুটার পালিয়ে যায় এবং পরে ধাওয়া করে তাকে ধরা হয় । এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে কোনও গুলি চালানো হয়নি ৷

ফলে 5 নভেম্বর যেই জিতুক না কেন, তারা ইতিহাস তৈরি করবে । তাই এটা আকর্ষণীয় সময় ৷

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ৷ এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

আগামী 5 নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৷ সেদিনই তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবেন আমেরিকানরা ৷ এবারের নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক ৷ এই ভোট এতটাই ঐতিহাসিক যে আমাদের জীবনে এমন আরেকটি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব ।

1789 সালে জর্জ ওয়াশিংটন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে 2008 সালের নির্বাচন পর্যন্ত দু’জন শ্বেতাঙ্গের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই হয়েছে ৷ 2016 সালের নির্বাচন ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে ৷ কারণ, প্রথম মহিলা হিসেবে প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছিলেন । কিন্তু তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান ৷ যিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কখনও রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি ।

US Presidential Polls 2024
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস (এপি)

যদিও উপরের সমস্ত তথ্য ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে ৷ তবে এই বছরের নির্বাচনের কোনও তুলনা হয় না ৷ কারণ, এবার অনেক কিছুই প্রথমবারের জন্য হচ্ছে ৷

কমলা হ্যারিস হলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, যিনি এবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়েছেন ৷ কমলা ও তাঁর বোন মায়ার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ৷ তাঁর মা শ্যামলা গোপালন ৷ তিনি একজন তামিল ব্রাহ্মণ মহিলা, যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ক্যানসার গবেষক ৷ তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ৷ তিনি একজন জ্যামাইকান ব্যক্তি, যিনি স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । আমেরিকান রীতি অনুযায়ী, সন্তানরা বাবার নামের শেষ অংশ ব্যবহার করেন ৷ তাই কমলার পুরো নাম কমলা হ্যারিস ।

তাঁর বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়৷ আদালতে তাঁর বাবা সন্তানদের হেফাজতে নেওয়ার অধিকার হারান । কমলার বয়স তখন পাঁচ বছর । তাঁর মা প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়া এবং পরে কানাডায় বাচ্চাদের বড় করেছেন । কিন্তু কমলা তাঁর বাবার নামের শেষ অংশ ব্যবহার করেন ৷ তিনি যখন 2016 সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন (রাজ্যসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সমতুল, যদিও আমেরিকাতে উচ্চকক্ষের সদস্যরা জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হন, যেন এটা লোকসভা নির্বাচন), তখন তিনি নিজেকে এশিয়ান আমেরিকান হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন ।

US Presidential Polls 2024
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস৷ (এপি)

ক্যালিফোর্নিয়ায় অনেক এবং ধনী ভারতীয় বংশদ্ভুতের জনসংখ্যা রয়েছে, যা তাঁর প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছিল । তিনি প্রথম এশিয়ান আমেরিকান নারী হিসেবে সিনেটে জয়ী হয়েছেন ।

একবার সিনেটে কমলা নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন ৷ যদিও তিনি কখনও একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে বসবাস করেননি বা সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের কোনও সমস্যাও অনুভব করেননি । এটি তাঁর পক্ষ থেকে একটি কৌশলী পদক্ষেপ ছিল ৷ কারণ, 250 বছর ধরে আমেরিকান রাজনীতিতে কৃষ্ণাঙ্গদের কম প্রতিনিধিত্ব ছিল । এইভাবে তিনি সিনেটে দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হয়েছিলেন । [প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ছিলেন ক্যারল মোসেলি ব্রাউন (ইলিনয়), যিনি 1993 থেকে 1999 পর্যন্ত সদস্য ছিলেন] ।

2020 সালে কমলা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি রেসে প্রবেশ করেছিলেন ৷ একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি এতটাই খারাপভাবে হেরেছিলেন যে তিনি একক ভোটে জয়ী হওয়ার আগে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছিলেন । চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন যখন একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট খুঁজছিলেন, তখন তিনি ইতিহাস তৈরি করার জন্য কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছিলেন । যখন তাঁরা জিতেছেন, তখন কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ৷ একে রাজনৈতিক ক্ষমতায় চমৎকার আরোহণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ।

জো বাইডেন লড়াই থেকে বাদ পড়লেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । চলতি বছরের 27 জুন পর্যন্ত সারা বিশ্ব ধরে নিয়েছিল যে বাইডেন ও হ্যারিস নভেম্বরে ট্রাম্প ও ভ্যান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন । বাইডেন আবারও ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে অংশ নিয়েছিলেন এবং চার মাস ধরে সারা দেশে প্রচার চালিয়েছেন ৷ 98 শতাংশেরও বেশি ডেলিগেট ভোট পেয়ে তিনি নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন ।

কিন্তু, বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে বাইডেনকে বেশিরভাগ সময় উত্তরহীন হিসেবে দেখা গিয়েছিল ৷ তাঁর কথাবার্তাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে ৷ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা দ্রুত পদক্ষেপ করেন ৷ তাঁকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা করতে বাধ্য করে ৷ আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও দলের মনোনীত প্রার্থী স্বেচ্ছায় প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন ।

তারপর, আরও অবিশ্বাস্য কিছু ঘটেছে । বাইডেন বলেছিলেন যে তিনি কমলা হ্যারিসকে মনোনীত করতে চেয়েছিলেন । কিছু দিনের মধ্যে বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাটিক নেতারা কমলাকে সমর্থন করতে রাজি হন এবং এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনীত হয়েছিলেন । আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলীয় নেতারা একজন মনোনীত প্রার্থীকে বেছে নিয়েছিলেন । আমেরিকার ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো যে কেউ একটিও ভোটে জেতেননি বা ডেলিগেট ভোট পাননি ৷ 2020 সালে যেমন তিনি একটি প্রধান দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ।

ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইতিহাস গড়বেন, যা 1892 সাল থেকে হয়নি । ট্রাম্প 2017 থেকে 2021 সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন । এরপর দায়িত্ব নেন বাইডেন । এখন আবারও জয়ের দোরগোড়ায় ট্রাম্প । যদি তিনি ফের জয়ী হন, তাহলে তিনি ইতিহাস রচনা করবেন, যা 1892 সাল থেকে হয়নি । গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড একমাত্র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, যিনি অবিচ্ছিন্ন মেয়াদে জয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন ৷ সেটা 1892 সালে ঘটেছিল ৷ 1884 সালে ক্লিভল্যান্ড প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন ৷ 1888 সালে তিনি বেঞ্জামিন হ্যারিসনের কাছে হেরে যান ৷ 1892 সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়ে ফিরে আসেন । আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি হয়তো আর দেখতে পাব না ৷

ট্রাম্পকে একবার নয়, দু’বার গুলি করা হয়েছে । যদিও ট্রাম্প তাঁর নিজের শক্তঘাঁটির সঙ্গে অসাধারণ জনপ্রিয় ৷ অনেক আমেরিকান, যাঁদের মধ্যে বেশ কিছু বিশ্বনেতাও রয়েছেন, তাঁকে পছন্দ করেন না । তাঁরা মনে করেন যে ট্রাম্প খুব কড়া কথা বলেন ৷ ট্রাম্প খুব বর্ণবিদ্বেষী ৷ তাঁকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয় ৷ কারণ, 2021 সালের 6 জানুয়ারি তাঁর ক্রিয়াকলাপ নিয়েই এই কথা বলা হয় ৷ সেদিন তাঁর সমর্থকরা সংসদে হামলা চালায় ৷ যদিও ট্রাম্প কখনও হিংসার পক্ষে ছিলেন না । 2020 নির্বাচনের ফলাফলে বাইডেন ও হ্যারিসের জয়কে জালিয়াতি বলে অভিযোগ করে যখন ট্রাম্প প্রতিবাদ করছিলেন, সেই সময় হামলা হয় ।

US Presidential Polls 2024
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ (এপি)

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে জীবনের জন্য সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে । সেই কারণে তিনি জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান ৷ সেই কারণেই ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার বাটলারে একজন আততায়ীর বুলেটে নিহত হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান । ট্রাম্প একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন এবং একটি বড় স্ক্রিনে একটি তালিকা থেকে কিছু পড়ার জন্য ডানদিকে তাকিয়েছিলেন । সেই মুহূর্তে, একজন যুবক তাঁর একে-47 অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালায় ৷

একজন সিক্রেট সার্ভিস স্নাইপার গুলির শব্দ শুনতে পান এবং পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে শুটারকে খুঁজে বের করেন ৷ তাঁকে 400 গজেরও বেশি দূর থেকে হত্যা করেন, যা খুবই নিখুঁত বলে বর্ণনা করা হয় । এই পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ট্রাম্পের মাথার উপর দিয়ে গুলি বেরিয়ে যায় ৷ যদিও অন্যান্য সিক্রেট সার্ভিস পার্সোনেলরা তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন ৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দেন ৷ হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে থাকা কারও উপর শেষবার হামলা হয়েছিল 1981 সালের 30 মার্চ ৷ সেই সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে জন হিঙ্কল নামে একজন হত্যা চেষ্টা করে ৷ তিনি আহত হন । বেঁচে যান রিগান ।

US Presidential Polls 2024
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ (এপি)

যদিও একটি হত্যার প্রচেষ্টা ইতিহাস তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল না ৷ অন্য একজন শুটার, রায়ান রাউথ, যিনি একজন ইউক্রেন সমর্থক, তিনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের গল্ফ কোর্সের গাছের লাইনে অস্ত্র নিয়ে 12 ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন । ট্রাম্প যখন খেলছিলেন, তখন একজন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার সময় একটি গর্ত দেখতে পান ৷ সেখানে এজেন্টরা একটি রাইফেলের ব্যারেল দেখতে পান । এজেন্ট গুলি চালান ৷ শুটার পালিয়ে যায় এবং পরে ধাওয়া করে তাকে ধরা হয় । এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে কোনও গুলি চালানো হয়নি ৷

ফলে 5 নভেম্বর যেই জিতুক না কেন, তারা ইতিহাস তৈরি করবে । তাই এটা আকর্ষণীয় সময় ৷

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ৷ এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

Last Updated : 1 hours ago
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.