ETV Bharat / opinion

আতঙ্ক নয়, এমপক্স থেকে সতর্ক থাকতে হবে - MPox

author img

By K Srinath Reddy

Published : Aug 23, 2024, 8:56 PM IST

MPox: এমপক্স মূলত 1970 সালে কঙ্গোতে মানুষের মধ্যে পাওয়া যায় ৷ 2022 পর্যন্ত তা সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল । তবে ভারতে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই ৷ যদিও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে ৷

MPox
প্রতীকী ছবি (ইটিভি ভারত)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্স-কে গ্লোবাল পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে ঘোষণা করেছে ৷ এর ফলে দু’বছরের ব্যবধানে দু’বার সারা বিশ্বে বিপদের ঘণ্টা বেজে উঠছে । প্রতিবেশী পাকিস্তানেও এমপক্সে আক্রান্ত চারজনের হদিশ পাওয়া গিয়েছে ৷ ফলে ভারতেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ ভারতের বিশাল জনসংখ্যার বেশিরভাগেরই এর রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই । ভারত সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে উচ্চ নজরদারি ব্যবস্থা শুরু করেছে এবং যেকোনও প্রভাবিত দেশ থেকে ভারতীয় বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশকারী যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে ।

আমরা যখন আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনও জনসাধারণের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যার ব্যাখ্যা প্রয়োজন । এই ভাইরাসের সঠিক নাম কী - এমপক্স নাকি মাঙ্কিপক্স ? চিকেন পক্স বা স্মল পক্স থেকে এটি কীভাবে আলাদা ? ভাইরাসের উৎপত্তি কোথায় ? কীভাবে মানুষ সংক্রমিত হয় পশুর থেকে ? কীভাবে এটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ? ভারতে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বা আক্রান্ত দেশে ভ্রমণের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী কী ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ? রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন আছে কি ? রোগের চিকিৎসার জন্য কী ওষুধ পাওয়া যায় ?

মাঙ্কিপক্স নামটি ব্যবহার করা ভুল । এই নামটি মূলত দেওয়া হয়েছিল কারণ একটি জার্মান পরীক্ষাগার প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা বাঁদরের মধ্যে ভাইরাস সনাক্ত করেছিল । যাইহোক, ভাইরাসটি বেশিরভাগ ইঁদুর ও কাঠবিড়ালি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । বাঁদরের সঙ্গে মানুষের সংক্রমণ হয় এই বিভ্রান্তি দূর করতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা এর নাম পরিবর্তন করে এমপক্স করেছে ৷

MPox
আতঙ্ক নয়, এমপক্স থেকে সতর্ক থাকতে হবে (ইটিভি ভারত)

এই রোগটি মূলত 1970 সালে কঙ্গোর মানুষের মধ্যে পাওয়া যাওয়ার উল্লেখ রয়েছে এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে 2022 সাল পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখানে সীমাবদ্ধ ছিল ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম 2022 সালের জুলাইয়ে এটাকে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি বলে ঘোষণা করেছিল ৷ কিন্তু 2023 সালের মে মাসে যখন আফ্রিকাতে নতুন সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল, তখন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় । যাইহোক, আফ্রিকা জুড়ে ও অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলিতে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ও ভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পাওয়া যাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্সকে গত 14 অগস্ট পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি বলে ফের ঘোষণা করেছে ৷

এমপক্স, চিকেন পক্স এবং স্মলপক্সের মতো অর্থোপক্স ভাইরাসের একই পরিবারের অন্তর্গত । যদিও 1980 সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্মলপক্স নির্মূল করা হয়েছিল ৷ চিকেনপক্স এখনও মানুষকে, বিশেষ করে শিশুদের সংক্রামিত করতে পারে ৷ এমপক্সে হাতের তালু ও পায়ের তলায় ত্বকের ক্ষত তৈরি হয় ৷ যা চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে হয় না ৷ মুখ ও মলদ্বারের শ্লেষ্মা ঝিল্লির পাশাপাশি যৌনাঙ্গ প্রভাবিত হতে পারে ৷ ফোলা ও বেদনাদায়ক লিম্ফ নোডগুলি এক্ষেত্রে আরেকটি বৈশিষ্ট্য । রোগীদের জ্বর, পেশীতে ব্যাথা ও ত্বকের ক্ষত তৈরি হয়, যা বিভিন্ন পর্যায়ে বাড়তে থাকে ৷ এটা ততক্ষণ হয়, যতক্ষণ না শুকনো স্ক্যাব হিসাবে তা ছড়িয়ে পড়ে যা অন্যদের সংক্রামিত করে । সংক্রমণ সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক যোগাযোগ, স্পর্শ বা যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে হয় । থুতুর ফোঁটা থেকেও সংক্রামিত হতে পারে, যদি একজন ব্যক্তি সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকেন ।

সাধারণত সকলেই সেরে ওঠেন ৷ তবে অসুস্থতার তীব্রতা ও মৃত্যুর হার ভাইরাসের দু’টি স্ট্রেনের মধ্যে আলাদা । স্মলপক্সের টিকা দেওয়া থাকলে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ৷ কিন্তু 1978 সালের পরে জন্ম নেওয়া ভারতীয়রা এই সুরক্ষা পাবেন না ৷ কারণ, ওই বছরই এদেশে স্মলপক্সের টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় ৷ বয়স্ক ব্যক্তি, অপুষ্টিতে ভুগছে শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের গুরুতর রোগ ও জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।

ত্বকের ক্ষতগুলির কারণে কোভিড-19 এর তুলনায় এমপক্স শনাক্ত করা সহজ । যদি কেউ ত্বকে ভেসিকল (ফোসকা জাতীয়) দেখতে পান, সেক্ষেত্রে সকলকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে উৎসাহিত করা উচিত ৷ এমপক্সে আক্রান্ত হলে কাউকে হেনস্তার মুখে পড়তে হবে না, তাই দ্বিধাহীনভাবে চিকিৎসা করাতে যাওয়া উচিত ৷ যাঁরা এমপক্সে আক্রান্ত, তাঁদের ত্বকের ক্ষত থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্য ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করা প্রয়োজন ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করা উচিত ।

যদিও কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ তৈরি করা হয়েছে ৷ সাম্প্রতিক একটি ওষুধের ট্রায়াল সুবিধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে । দুই ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় ৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী তা বিতরণ করা হয়নি । যেহেতু বেশিরভাগ সংক্রামিত ব্যক্তি গুরুতর জটিলতা ছাড়াই সেরে উঠেছে ৷ অনেক দেশ এখনও একটি গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেনি । যখন এটা শুরু হবে, তখন 1978 সালের পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে ।

যাঁরা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সময় বা ভ্রমণের সময়, তাঁদের শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া উচিত । কথোপকথনের সময়ও সংক্রামিত ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে । নিরাপদ যৌন আচরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ৷ সমকামী পুরুষদের যৌনতা এড়িয়ে চলতে হবে ৷ যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনমিলনে ঝুঁকি রয়েছে ৷ কোভিড-19 এর মতো এমপক্স ভাইরাস অ্যারোসল দ্বারা ছড়ায় না । সুতরাং, সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি না থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে ৷

ভারতে, জুলাই 2022 থেকে মার্চ 2024 এর মধ্যে প্রায় 30টি বিক্ষিপ্ত ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল । সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময় কোনও নতুন কেস রিপোর্ট করা হয়নি । ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া, যাদের জনাকীর্ণ বিমানবন্দর দিয়ে আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীরা চলাচল করেন, তারা ভারতের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে । ভারতে একটি বড় প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা কম ৷ কারণ আমরা এই ধরনের ট্রানজিট যাত্রী দেখতে পাই না । কোভিড-19 মাঙ্কিপক্স ভাইরাস অ্যারোসলের মাধ্যমে বায়ুবাহিত সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায় না । যাইহোক, আমাদের অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে হবে এবং সংক্রমণ বেড়েছে বা কমছে কি না, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে ।

আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই ৷ তবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলিকে অবশ্যই জুনোটিক সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ৷ এমপক্স বেড়ে যাওয়া আর একটি উদাহরণ, যেখানে বোঝা যাচ্ছে জঙ্গল সাফ করার ফলে এই ধরনের সংক্রমণ বনে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের মধ্য়েও ছড়িয়ে পড়ছে ৷

(অধ্যাপক কে শ্রীনাথ রেড্ডি পিএইচএফআই এর পাবলিক হেলথের অধ্য়াপক এবং পালস টু প্ল্যানেটের লেখক)

এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্স-কে গ্লোবাল পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে ঘোষণা করেছে ৷ এর ফলে দু’বছরের ব্যবধানে দু’বার সারা বিশ্বে বিপদের ঘণ্টা বেজে উঠছে । প্রতিবেশী পাকিস্তানেও এমপক্সে আক্রান্ত চারজনের হদিশ পাওয়া গিয়েছে ৷ ফলে ভারতেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ ভারতের বিশাল জনসংখ্যার বেশিরভাগেরই এর রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই । ভারত সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে উচ্চ নজরদারি ব্যবস্থা শুরু করেছে এবং যেকোনও প্রভাবিত দেশ থেকে ভারতীয় বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশকারী যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে ।

আমরা যখন আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনও জনসাধারণের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যার ব্যাখ্যা প্রয়োজন । এই ভাইরাসের সঠিক নাম কী - এমপক্স নাকি মাঙ্কিপক্স ? চিকেন পক্স বা স্মল পক্স থেকে এটি কীভাবে আলাদা ? ভাইরাসের উৎপত্তি কোথায় ? কীভাবে মানুষ সংক্রমিত হয় পশুর থেকে ? কীভাবে এটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ? ভারতে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বা আক্রান্ত দেশে ভ্রমণের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী কী ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ? রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন আছে কি ? রোগের চিকিৎসার জন্য কী ওষুধ পাওয়া যায় ?

মাঙ্কিপক্স নামটি ব্যবহার করা ভুল । এই নামটি মূলত দেওয়া হয়েছিল কারণ একটি জার্মান পরীক্ষাগার প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা বাঁদরের মধ্যে ভাইরাস সনাক্ত করেছিল । যাইহোক, ভাইরাসটি বেশিরভাগ ইঁদুর ও কাঠবিড়ালি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । বাঁদরের সঙ্গে মানুষের সংক্রমণ হয় এই বিভ্রান্তি দূর করতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা এর নাম পরিবর্তন করে এমপক্স করেছে ৷

MPox
আতঙ্ক নয়, এমপক্স থেকে সতর্ক থাকতে হবে (ইটিভি ভারত)

এই রোগটি মূলত 1970 সালে কঙ্গোর মানুষের মধ্যে পাওয়া যাওয়ার উল্লেখ রয়েছে এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে 2022 সাল পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখানে সীমাবদ্ধ ছিল ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম 2022 সালের জুলাইয়ে এটাকে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি বলে ঘোষণা করেছিল ৷ কিন্তু 2023 সালের মে মাসে যখন আফ্রিকাতে নতুন সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল, তখন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় । যাইহোক, আফ্রিকা জুড়ে ও অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলিতে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ও ভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পাওয়া যাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্সকে গত 14 অগস্ট পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি বলে ফের ঘোষণা করেছে ৷

এমপক্স, চিকেন পক্স এবং স্মলপক্সের মতো অর্থোপক্স ভাইরাসের একই পরিবারের অন্তর্গত । যদিও 1980 সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্মলপক্স নির্মূল করা হয়েছিল ৷ চিকেনপক্স এখনও মানুষকে, বিশেষ করে শিশুদের সংক্রামিত করতে পারে ৷ এমপক্সে হাতের তালু ও পায়ের তলায় ত্বকের ক্ষত তৈরি হয় ৷ যা চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে হয় না ৷ মুখ ও মলদ্বারের শ্লেষ্মা ঝিল্লির পাশাপাশি যৌনাঙ্গ প্রভাবিত হতে পারে ৷ ফোলা ও বেদনাদায়ক লিম্ফ নোডগুলি এক্ষেত্রে আরেকটি বৈশিষ্ট্য । রোগীদের জ্বর, পেশীতে ব্যাথা ও ত্বকের ক্ষত তৈরি হয়, যা বিভিন্ন পর্যায়ে বাড়তে থাকে ৷ এটা ততক্ষণ হয়, যতক্ষণ না শুকনো স্ক্যাব হিসাবে তা ছড়িয়ে পড়ে যা অন্যদের সংক্রামিত করে । সংক্রমণ সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক যোগাযোগ, স্পর্শ বা যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে হয় । থুতুর ফোঁটা থেকেও সংক্রামিত হতে পারে, যদি একজন ব্যক্তি সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকেন ।

সাধারণত সকলেই সেরে ওঠেন ৷ তবে অসুস্থতার তীব্রতা ও মৃত্যুর হার ভাইরাসের দু’টি স্ট্রেনের মধ্যে আলাদা । স্মলপক্সের টিকা দেওয়া থাকলে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ৷ কিন্তু 1978 সালের পরে জন্ম নেওয়া ভারতীয়রা এই সুরক্ষা পাবেন না ৷ কারণ, ওই বছরই এদেশে স্মলপক্সের টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় ৷ বয়স্ক ব্যক্তি, অপুষ্টিতে ভুগছে শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের গুরুতর রোগ ও জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।

ত্বকের ক্ষতগুলির কারণে কোভিড-19 এর তুলনায় এমপক্স শনাক্ত করা সহজ । যদি কেউ ত্বকে ভেসিকল (ফোসকা জাতীয়) দেখতে পান, সেক্ষেত্রে সকলকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে উৎসাহিত করা উচিত ৷ এমপক্সে আক্রান্ত হলে কাউকে হেনস্তার মুখে পড়তে হবে না, তাই দ্বিধাহীনভাবে চিকিৎসা করাতে যাওয়া উচিত ৷ যাঁরা এমপক্সে আক্রান্ত, তাঁদের ত্বকের ক্ষত থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্য ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করা প্রয়োজন ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করা উচিত ।

যদিও কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ তৈরি করা হয়েছে ৷ সাম্প্রতিক একটি ওষুধের ট্রায়াল সুবিধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে । দুই ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় ৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী তা বিতরণ করা হয়নি । যেহেতু বেশিরভাগ সংক্রামিত ব্যক্তি গুরুতর জটিলতা ছাড়াই সেরে উঠেছে ৷ অনেক দেশ এখনও একটি গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেনি । যখন এটা শুরু হবে, তখন 1978 সালের পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে ।

যাঁরা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সময় বা ভ্রমণের সময়, তাঁদের শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া উচিত । কথোপকথনের সময়ও সংক্রামিত ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে । নিরাপদ যৌন আচরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ৷ সমকামী পুরুষদের যৌনতা এড়িয়ে চলতে হবে ৷ যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনমিলনে ঝুঁকি রয়েছে ৷ কোভিড-19 এর মতো এমপক্স ভাইরাস অ্যারোসল দ্বারা ছড়ায় না । সুতরাং, সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি না থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে ৷

ভারতে, জুলাই 2022 থেকে মার্চ 2024 এর মধ্যে প্রায় 30টি বিক্ষিপ্ত ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল । সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময় কোনও নতুন কেস রিপোর্ট করা হয়নি । ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া, যাদের জনাকীর্ণ বিমানবন্দর দিয়ে আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীরা চলাচল করেন, তারা ভারতের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে । ভারতে একটি বড় প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা কম ৷ কারণ আমরা এই ধরনের ট্রানজিট যাত্রী দেখতে পাই না । কোভিড-19 মাঙ্কিপক্স ভাইরাস অ্যারোসলের মাধ্যমে বায়ুবাহিত সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায় না । যাইহোক, আমাদের অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে হবে এবং সংক্রমণ বেড়েছে বা কমছে কি না, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে ।

আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই ৷ তবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলিকে অবশ্যই জুনোটিক সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ৷ এমপক্স বেড়ে যাওয়া আর একটি উদাহরণ, যেখানে বোঝা যাচ্ছে জঙ্গল সাফ করার ফলে এই ধরনের সংক্রমণ বনে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের মধ্য়েও ছড়িয়ে পড়ছে ৷

(অধ্যাপক কে শ্রীনাথ রেড্ডি পিএইচএফআই এর পাবলিক হেলথের অধ্য়াপক এবং পালস টু প্ল্যানেটের লেখক)

এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.