ETV Bharat / opinion

তিব্বতের প্রশ্নে আইন আনলেও সমস্যা জিইয়েই রাখবে আমেরিকা ! পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ - USA focus on Tibet - USA FOCUS ON TIBET

USA focus on Tibet: তিব্বতের সমস্যা সমাধানে রিসলভ টিবেট অ্যাক্ট গৃহীত হয়েছে মার্কিন আইনসভার উভয় কক্ষে ৷ সম্প্রতি ধরমশালায় এসে দলাই লামার সঙ্গে দেখা করেছে মার্কিন প্রতিনিধি দল ৷ তা সত্ত্বেও আমেরিকা কি আপাতত তিব্বত সমস্যাকে জিইয়েই রাখতে চাইবে ? লিখছেন রাষ্ট্রদূত জিতেন্দ্র কুমার ত্রিপাঠী ৷

ETV BHARAT
তিব্বত সমাধানে আইন আনলেও সমস্যা জিইয়েই রাখবে আমেরিকা ! (ফাইল ছবি)
author img

By J K Tripathi

Published : Jun 23, 2024, 7:26 PM IST

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির রিপাবলিকান চেয়ার মাইকেল ম্যাককলের নেতৃত্বে মার্কিন কংগ্রেসের সাত-সদস্যের দ্বিদলীয় কংগ্রেস প্রতিনিধিদল ধরমশালায় চতুর্দশ দালাই লামার সঙ্গে দেখা করতে ভারতে এসেছিলেন ৷ ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি । 19 জুন এই প্রতিনিধি দল দলাই লামার সঙ্গে দেখা করার আগে নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদের সদস্য এবং নির্বাসিত তিব্বত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করে ।

12 জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয় কক্ষের দ্বারা গৃহীত হয় 'তিব্বত-চিনা বিরোধ আইনের সমাধানে একটি প্রচার', যা 'তিব্বত সমাধান আইন' নামে পরিচিত ৷ তার পরেই এই সফর স্পষ্টতই চিনের ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলেছে ৷ আইনটি স্পষ্টভাবে বলে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে তিব্বতের জনগণের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে । রিসলভ টিবেট অ্যাক্ট তিব্বতের জনগণের বহুমুখী সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়, বিশেষ করে তাদের 'স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পরিচয়' চিনতে এবং 'তিব্বতের ইতিহাস, তিব্বতি জনগণ ও তিব্বতি প্রতিষ্ঠান এবং দালাই লামার ইতিহাস সম্পর্কে বিভ্রান্তি'-সহ তিব্বত সম্পর্কে চিনের তৈরি করা বিভ্রান্তি মোকাবিলায় তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর ঘিরে চিনের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতভাবেই খুব তীক্ষ্ণ ছিল । 20 জুন চিনা সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, পেলোসিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৷ সেখানে দাবি করা হয়, পেলোসি নেটিভ আমেরিকানদের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়েছেন এবং পরিবর্তে জিজাং (তিব্বত) সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার জন্য উৎসাহী হয়েছেন । গ্লোবাল টাইমস 'রিসলভ টিবেট অ্যাক্ট'-কে 'একটি বর্জ্য কাগজ এবং সম্পূর্ণরূপে একটি স্ব-আমোদজনক কর্মক্ষমতা' হিসেবে চিহ্নিত করেছে । পাশাপাশি দলাই লামাকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বলে অভিহিত করে গবেষণাপত্রটি বলেছে, 'মার্কিন রাজনীতিবিদরা মনে করেন, দলাই-তাসটি রাজনৈতিক দিক থেকে নতুন পুঁজি দিতে পারে। একইসঙ্গে চিনের জন্য বাধাও তৈরি করতে পারে। যাঁদের মনোভাব এমন তাঁরা আসলে জঘন্য।" চিন আরও অভিযোগ করে যে, দলাই লামা 'একজন সম্পূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন'। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁকে ঘৃণা করে এমন দাবিও করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

কমিউনিস্ট চিন 1950 সালে তিব্বত আক্রমণ করে এবং এটিকে সংযুক্ত করার পরে, তারা এই অঞ্চলের সিনিসাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করে । সেখানে আরও বেশি সংখ্যক হান জনবসতি স্থাপন করে এই অঞ্চলের জনসংখ্যার পরিবর্তন করে, চিন তিব্বতীয় পরিচয়কে প্রভাবশালী হান পরিচয়ে জোরপূর্বক পরিবর্তিত করতে শুরু করে । এটা দৃঢ়ভাবে মনে করা হয় যে, লক্ষ লক্ষ তিব্বতি শিশুকে অল্প বয়সেই তাদের বাবামায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং তাদের কমিউনিস্ট মতাদর্শে মগজ ধোলাই করার জন্য বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয় । তাদের ম্যান্ডারিন, কমিউনিজম শেখানো হয় এবং কৌশলে ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি সংস্কৃতির বাইরে রাখা হয় ।

উদাহরণ হিসেবে গাধুন ঘোইকি নাইমার কথা বলা যায় ৷ সে একটি ছয় বছর বয়সি বালক, যাকে দলাই লামা 1995 সালে 11তম পঞ্চেন লামা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন (তিব্বতি ঐতিহ্যে, প্রতিটি দালাই লামা পরবর্তী পঞ্চেন লামাকে স্বীকৃতি দেন ৷ এটি হল দলাই লামার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব)। এই স্বীকৃতির 2 দিনের মধ্যে ছেলেটিকে চিনা বাহিনী অপহরণ করেছিল এবং তার হদিশ আজ পর্যন্ত মেলেনি ৷ চিন অবিলম্বে সিয়াইন কেইন নরবুকে 11তম পঞ্চেন লামা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। তিনি অবশ্য দলাই লামা দ্বারা স্বীকৃত ছিলেন না । বর্তমানেও প্রত্যাশিতভাবেই এক চিনা বংশোদ্ভূত ব্যক্তি পাঞ্চেন লামা ।

চিন তিব্বতের খনিজগুলির প্রতি আগ্রহী ৷ কয়লা, তামা, ক্রোমিয়াম, লিথিয়াম, জিঙ্ক, সিসা, বোরনের বিশাল মজুত রয়েছে এই মালভূমিতে এবং এটি জলবিদ্যুৎ ও খনিজ জলের একটি প্রধান সম্পদ । এই কারণেই চিন এই অঞ্চলে দ্রুত পরিকাঠামো উন্নয়ন করছে ৷ যদিও অবিবেচক খনন এবং শিল্পায়ন স্থানীয় জনগণের আতঙ্ক স্বাভাবিকভাবেই বাড়াচ্ছে, কারণ সেগুলি একটি গুরুতর পরিবেশগত হুমকির সৃষ্টি করেছে, যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চললেও এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ হয়নি ৷ তিব্বতের বিস্তীর্ণ জলসম্পদের মাধ্যমে চিন নদী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রতিবেশী দেশগুলিকেও হার মানাতে চায় ।

তিব্বতের প্রতি মার্কিন আগ্রহ নতুন নয়, যদিও মাঝে মাঝে, ফোকাস নষ্ট হয়েছে ৷ 1950 থেকে 1971 সাল পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল কমিউনিস্ট চিনের উপর সম্ভাব্য সব উপায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করা এবং তিব্বত ইস্যু এই প্রচেষ্টার একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল । সাতের দশকে উভয় দেশ একে-অপরের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায় এবং চিনা আধুনিকীকরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বাণিজ্যের সুযোগ খুলে দেয় । এর ফলে তিব্বত ইস্যুটি প্রায় 30 বছর ধরে পিছনের আসনে চলে যায় । কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঁচিশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিব্বতের বিষয়ে তিনটি প্রস্তাব পাশ করেছে । প্রথমটি, তিব্বত নীতি আইন, 2002 - চিনা সরকার তিব্বতবাসীদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করছিল, তা তুলে ধরা হয় তবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যে, তিব্বত চিনের মধ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । তৃতীয়, রিসলভ তিব্বত অ্যাক্ট, সম্প্রতি উভয় কক্ষে এটি পাশ হয়েছে কিন্তু এখনও প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৷

এর একটি বৃহত্তর কার্যকরী অংশও রয়েছে। এটি তিব্বতের ইতিহাস, তিব্বতের জনগণ এবং দলাই লামা ও তিব্বতের প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে বিভ্রান্তি-সহ তিব্বতের বিষয়ে চিনা ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ৷ পূর্ব-শর্ত ছাড়াই মতবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিনকে তার বা তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সরাসরি আলোচনায় মিলিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় । দুটি কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী (নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং তিব্বতের জনগণকে রক্ষা করার জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি) হিসাবে চিনের কর্তব্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষাগত পরিচয়ের কথাও তুলে ধরে এই আইন ৷ এখানে উল্লেখ্য যে, এই আইন ডেমোক্র্যাটদের নীতির মূল হাতিয়ার ৷

চিনের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও 1989 সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন দলাই লামা ৷ তিনি চলতি বছরের অগস্টে একটি অস্ত্রোপচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন, যেখানে তাঁর মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক এবং সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দেখা করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

মার্কিন প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও দেখা করে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে । 1950 সাল থেকে তিব্বতকে চিনের একটি অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত ৷ তবে এই অঞ্চলের জন্য একটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষেও সওয়াল করেছে দিল্লি ৷ অন্যদিকে, চিন সর্বদা অরুণাচলপ্রদেশকে তার অঞ্চল হিসাবে দাবি করে আসছে ৷ তারা সর্বদা এই অঞ্চলে ভারতীয় নেতৃত্বের যে কোনও সফরের প্রতিবাদ করে এবং রাজ্যের বাসিন্দাদের পাসপোর্টে চিনা ভিসা লাগাতে অস্বীকার করে ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে ইউক্রেন ও ইজরায়েল নিয়ে পশ্চিমীদের সঙ্গে দক্ষিণ চিন সাগরের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনায় জড়িত চিন, সেখানে তিব্বতে তারা কোনও কঠোর পদক্ষেপ করবে না ৷ বরং, তারা সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাই করবে । অন্তত ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা পরিচালিত বর্তমান সরকারের সময়ে এটাই হবে আমেরিকার নীতি ।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির রিপাবলিকান চেয়ার মাইকেল ম্যাককলের নেতৃত্বে মার্কিন কংগ্রেসের সাত-সদস্যের দ্বিদলীয় কংগ্রেস প্রতিনিধিদল ধরমশালায় চতুর্দশ দালাই লামার সঙ্গে দেখা করতে ভারতে এসেছিলেন ৷ ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি । 19 জুন এই প্রতিনিধি দল দলাই লামার সঙ্গে দেখা করার আগে নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদের সদস্য এবং নির্বাসিত তিব্বত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করে ।

12 জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয় কক্ষের দ্বারা গৃহীত হয় 'তিব্বত-চিনা বিরোধ আইনের সমাধানে একটি প্রচার', যা 'তিব্বত সমাধান আইন' নামে পরিচিত ৷ তার পরেই এই সফর স্পষ্টতই চিনের ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলেছে ৷ আইনটি স্পষ্টভাবে বলে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে তিব্বতের জনগণের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে । রিসলভ টিবেট অ্যাক্ট তিব্বতের জনগণের বহুমুখী সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়, বিশেষ করে তাদের 'স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পরিচয়' চিনতে এবং 'তিব্বতের ইতিহাস, তিব্বতি জনগণ ও তিব্বতি প্রতিষ্ঠান এবং দালাই লামার ইতিহাস সম্পর্কে বিভ্রান্তি'-সহ তিব্বত সম্পর্কে চিনের তৈরি করা বিভ্রান্তি মোকাবিলায় তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর ঘিরে চিনের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতভাবেই খুব তীক্ষ্ণ ছিল । 20 জুন চিনা সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, পেলোসিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৷ সেখানে দাবি করা হয়, পেলোসি নেটিভ আমেরিকানদের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়েছেন এবং পরিবর্তে জিজাং (তিব্বত) সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার জন্য উৎসাহী হয়েছেন । গ্লোবাল টাইমস 'রিসলভ টিবেট অ্যাক্ট'-কে 'একটি বর্জ্য কাগজ এবং সম্পূর্ণরূপে একটি স্ব-আমোদজনক কর্মক্ষমতা' হিসেবে চিহ্নিত করেছে । পাশাপাশি দলাই লামাকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বলে অভিহিত করে গবেষণাপত্রটি বলেছে, 'মার্কিন রাজনীতিবিদরা মনে করেন, দলাই-তাসটি রাজনৈতিক দিক থেকে নতুন পুঁজি দিতে পারে। একইসঙ্গে চিনের জন্য বাধাও তৈরি করতে পারে। যাঁদের মনোভাব এমন তাঁরা আসলে জঘন্য।" চিন আরও অভিযোগ করে যে, দলাই লামা 'একজন সম্পূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন'। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁকে ঘৃণা করে এমন দাবিও করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

কমিউনিস্ট চিন 1950 সালে তিব্বত আক্রমণ করে এবং এটিকে সংযুক্ত করার পরে, তারা এই অঞ্চলের সিনিসাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করে । সেখানে আরও বেশি সংখ্যক হান জনবসতি স্থাপন করে এই অঞ্চলের জনসংখ্যার পরিবর্তন করে, চিন তিব্বতীয় পরিচয়কে প্রভাবশালী হান পরিচয়ে জোরপূর্বক পরিবর্তিত করতে শুরু করে । এটা দৃঢ়ভাবে মনে করা হয় যে, লক্ষ লক্ষ তিব্বতি শিশুকে অল্প বয়সেই তাদের বাবামায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং তাদের কমিউনিস্ট মতাদর্শে মগজ ধোলাই করার জন্য বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয় । তাদের ম্যান্ডারিন, কমিউনিজম শেখানো হয় এবং কৌশলে ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি সংস্কৃতির বাইরে রাখা হয় ।

উদাহরণ হিসেবে গাধুন ঘোইকি নাইমার কথা বলা যায় ৷ সে একটি ছয় বছর বয়সি বালক, যাকে দলাই লামা 1995 সালে 11তম পঞ্চেন লামা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন (তিব্বতি ঐতিহ্যে, প্রতিটি দালাই লামা পরবর্তী পঞ্চেন লামাকে স্বীকৃতি দেন ৷ এটি হল দলাই লামার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব)। এই স্বীকৃতির 2 দিনের মধ্যে ছেলেটিকে চিনা বাহিনী অপহরণ করেছিল এবং তার হদিশ আজ পর্যন্ত মেলেনি ৷ চিন অবিলম্বে সিয়াইন কেইন নরবুকে 11তম পঞ্চেন লামা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। তিনি অবশ্য দলাই লামা দ্বারা স্বীকৃত ছিলেন না । বর্তমানেও প্রত্যাশিতভাবেই এক চিনা বংশোদ্ভূত ব্যক্তি পাঞ্চেন লামা ।

চিন তিব্বতের খনিজগুলির প্রতি আগ্রহী ৷ কয়লা, তামা, ক্রোমিয়াম, লিথিয়াম, জিঙ্ক, সিসা, বোরনের বিশাল মজুত রয়েছে এই মালভূমিতে এবং এটি জলবিদ্যুৎ ও খনিজ জলের একটি প্রধান সম্পদ । এই কারণেই চিন এই অঞ্চলে দ্রুত পরিকাঠামো উন্নয়ন করছে ৷ যদিও অবিবেচক খনন এবং শিল্পায়ন স্থানীয় জনগণের আতঙ্ক স্বাভাবিকভাবেই বাড়াচ্ছে, কারণ সেগুলি একটি গুরুতর পরিবেশগত হুমকির সৃষ্টি করেছে, যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চললেও এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ হয়নি ৷ তিব্বতের বিস্তীর্ণ জলসম্পদের মাধ্যমে চিন নদী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রতিবেশী দেশগুলিকেও হার মানাতে চায় ।

তিব্বতের প্রতি মার্কিন আগ্রহ নতুন নয়, যদিও মাঝে মাঝে, ফোকাস নষ্ট হয়েছে ৷ 1950 থেকে 1971 সাল পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল কমিউনিস্ট চিনের উপর সম্ভাব্য সব উপায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করা এবং তিব্বত ইস্যু এই প্রচেষ্টার একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল । সাতের দশকে উভয় দেশ একে-অপরের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায় এবং চিনা আধুনিকীকরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বাণিজ্যের সুযোগ খুলে দেয় । এর ফলে তিব্বত ইস্যুটি প্রায় 30 বছর ধরে পিছনের আসনে চলে যায় । কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঁচিশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিব্বতের বিষয়ে তিনটি প্রস্তাব পাশ করেছে । প্রথমটি, তিব্বত নীতি আইন, 2002 - চিনা সরকার তিব্বতবাসীদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করছিল, তা তুলে ধরা হয় তবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যে, তিব্বত চিনের মধ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । তৃতীয়, রিসলভ তিব্বত অ্যাক্ট, সম্প্রতি উভয় কক্ষে এটি পাশ হয়েছে কিন্তু এখনও প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৷

এর একটি বৃহত্তর কার্যকরী অংশও রয়েছে। এটি তিব্বতের ইতিহাস, তিব্বতের জনগণ এবং দলাই লামা ও তিব্বতের প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে বিভ্রান্তি-সহ তিব্বতের বিষয়ে চিনা ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ৷ পূর্ব-শর্ত ছাড়াই মতবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিনকে তার বা তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সরাসরি আলোচনায় মিলিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় । দুটি কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী (নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং তিব্বতের জনগণকে রক্ষা করার জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি) হিসাবে চিনের কর্তব্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষাগত পরিচয়ের কথাও তুলে ধরে এই আইন ৷ এখানে উল্লেখ্য যে, এই আইন ডেমোক্র্যাটদের নীতির মূল হাতিয়ার ৷

চিনের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও 1989 সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন দলাই লামা ৷ তিনি চলতি বছরের অগস্টে একটি অস্ত্রোপচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন, যেখানে তাঁর মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক এবং সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দেখা করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

মার্কিন প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও দেখা করে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে । 1950 সাল থেকে তিব্বতকে চিনের একটি অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত ৷ তবে এই অঞ্চলের জন্য একটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষেও সওয়াল করেছে দিল্লি ৷ অন্যদিকে, চিন সর্বদা অরুণাচলপ্রদেশকে তার অঞ্চল হিসাবে দাবি করে আসছে ৷ তারা সর্বদা এই অঞ্চলে ভারতীয় নেতৃত্বের যে কোনও সফরের প্রতিবাদ করে এবং রাজ্যের বাসিন্দাদের পাসপোর্টে চিনা ভিসা লাগাতে অস্বীকার করে ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে ইউক্রেন ও ইজরায়েল নিয়ে পশ্চিমীদের সঙ্গে দক্ষিণ চিন সাগরের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনায় জড়িত চিন, সেখানে তিব্বতে তারা কোনও কঠোর পদক্ষেপ করবে না ৷ বরং, তারা সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাই করবে । অন্তত ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা পরিচালিত বর্তমান সরকারের সময়ে এটাই হবে আমেরিকার নীতি ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.