হায়দরাবাদ, 24 এপ্রিল: সমগ্র পৃথিবীতে যে কোনও ধরণের প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ অপরিহার্য ৷ অস্থিতিশীল ব্যবহারের জন্য (মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফলস্বরূপ চাহিদা বৃদ্ধি) এই সম্পদের সীমাহীন অবক্ষয় ঘটে চলেছে । ভারতীয় সংবিধানের ধারা 21-এর অধীনে জীবনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট জলের অধিকারকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে সুরক্ষিত করে রেখেছে । তবে বিশুদ্ধ পরিবেশের অধিকার এবং বিশুদ্ধ স্বাস্থ্যের অধিকার, সর্বোপরি বিশুদ্ধ পানীয় জলের অধিকার এই ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে শেষ তিন দশ ধরে ৷ ধারা 21 ছাড়াও, রাষ্ট্রীয় নীতির (DPSP) নির্দেশমূলক নীতির ধারা 39 (b), যা সংবিধান অযৌক্তিক বলে মনে করে, সম্প্রদায়ের বস্তুগত সম্পদে সমান ব্যবহারের নীতিকে স্বীকৃতি দেয় ৷
পরিবেশের অপরাধীদেরকে সাধারণত কোনও আইনের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায় না ৷ কারণ তাঁদের অপরাধ নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিপিবদ্ধ হয় না ৷ সর্বোপরি তাঁদের অপরাধের কোনও তৎক্ষণাৎ পরিণতিও চোখে পড়ে না কারও ৷ অথচ তাঁদের সেই অপরাধের এক গভীর প্রভাব থেকে যায় যুগ যুগ ধরে ৷ বিরুপ প্রভাব পরে স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি এবং উন্নয়নের উপর ৷ 1977 সালে জল সম্মেলনে রাষ্ট্রসংঘের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় ৷ সেখানে বলা হয়, "আর্থ-সামাজিক অবস্থান যাই হোক, সমাজের প্রতিটি মানুষের তাঁদের মৌলিক চাহিদার সমান পানীয় জল ব্যবহারের অধিকার রয়েছে ৷" বলা ভালো, বান্দুয়া মুক্তি মোর্চার সঙ্গে ভারতীয় ইউনিয়নের মতানৈক্যের সময় এই ধারণার প্রথম ব্যবহারিক প্রয়োগ হয় ৷
ক্রমবর্ধমান জল সংকট বেঙ্গালুরুর মতো দেশের তৃতীয় জনবহুল শহরের বাসিন্দাদেরও পানীয় জলের জন্য বিকল্প পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে ৷ বেঙ্গালুরুর পরে সেই তালিকায় রয়েছে জয়পুর, ইন্দোর, থানে, ভাদোদরা, শ্রীনগর, রাজকোট, কোটা, নাসিক শহর ৷ এই সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজন ৷ জলবায়ুর পরিবর্তন ছা়ড়াও এই সংকটের অপর কারণ হল ভূগর্ভস্থ জলের স্তর হ্রাস ৷ গবেষকদের মতে, 2041 সাল থেকে 2080 সালের মধ্যে এই জলের হ্রাসের হার প্রায় 3.26 গুণ ৷ তাঁদের মতে, এর ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত ও চিনের মতো এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলি ৷ অবশ্য 2020-2022 সালে এই জল উত্তোলনের মাত্রা অনেকাংশে কম ছিল ৷ 244.92 বিলিয়ন কিউবিক মিটার থেকে কমে এই পরিমাণ দাঁড়ায় 239.16 বিলিয়ন কিউবিক মিটারে ৷
1980 সালে জলের উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ন্যাশনাল ওয়াটার রিসোর্স কাউন্সিল (NWRC) গঠন করা হয় । 2002 সালের জলের জাতীয় নীতির পরিবর্তন করা হয় ৷ প্রধান পরিবর্তনটি ছিল সমন্বিত জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা (IWRM)-এর অন্তর্ভুক্তি। এই নীতির অধীনে নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয় । ভারতের অনেক রাজ্যের নিজস্ব জল নীতি রয়েছে । তামিলনাড়ু এবং হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যের জল নীতি জল সম্পদের উপর জনগণের সংস্থা বা সম্প্রদায় ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকাকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় ৷ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের জল নীতির উপর সমান অধিকার রয়েছে ৷ তবে সেই নীতি কোথায়, কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক করবে সরকার ৷
গত কয়েক বছরে এই বিষয়ে অনেক উদ্ভাবনী নীতি ও কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে ৷ তবে পদ্ধতিগতভাবে আইনি বিকল্পগুলি অন্বেষণ করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, যা পরিবেশগত এবং সামাজিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জল এবং ভূ-পৃষ্ঠের জল ব্যবহারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করবে । ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় সব স্থানে সমানভাবে নেই ৷ সেক্ষেত্রে জলের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করার জন্য জলের অধিকারকে ভূমির অধিকার সঙ্গে পৃথকীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এখনও পর্যন্ত যদিও এই বিষয়ে কোনও জাতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা একমাত্র রাজ্য হল গুজরাত । তাই ভবিষ্যতে জল আইনে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে ৷
আরও পড়ুন: