বর্ধমান, 25 অক্টোবর: প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছর আগের কথা । বর্ধমান শহর তখন ঘন জঙ্গলে ঘেরা ৷ এই রকমই লাকুর্ডি নামে একটা এলাকায় সন্ন্যাসী গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী মা কালীর আরাধনা ও তপস্যা করতেন । খবর পেয়ে একদিন বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদ সেই সাধকের সঙ্গে দেখা করতে যান । মায়ের প্রাণের অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না তা জানতে চেয়ে রাজা ওই ব্রহ্মচারীকে প্রশ্ন করেন ।
সেদিন ছিল অমাবস্যা । রাজার প্রশ্নের উত্তরে গোকুলানন্দ বলে বসেন সেদিন রাতে রাজাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাবেন । বলার পর তিনি ভাবেন আজ তো পূর্ণিমা নয় অমাবস্যা ৷ কীভাবে চাঁদ দেখাবেন তিনি ? প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে সাধক নিজেও চিন্তায় পড়ে যান ৷ রাজাকে চাঁদ দেখাতে না পারলে কী হবে তা ভেবে খুব ভয় পেয়েছিলেন । এরপর সেদিন রাতে রাজা দলবল নিয়ে ফের জঙ্গলে যান । গোকুলানন্দ মনে মনে মাকে ডাকতে থাকেন ৷ সেই সময় আকাশের দিকে তাকাতেই চাঁদ দেখতে পান তাঁরা ৷ তবে কেবল রাজা ও সাধকই অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পেয়েছিলেন ৷ তাতেই অবাক হয়ে যান তেজচাঁদ ৷ পরে রাজার সহযোগিতায় ওই এলাকায় গড়ে ওঠে মন্দির ।
নাম দুর্লভা হওয়ার কারণ :
দুর্লভ কথার অর্থ হল যাকে সহজে পাওয়া যায় না । শোনা যায়, অনেকদিন ধরে সাধনা করে পেয়েছিলেন বলেই নাম হয়েছে মায়ের নাম দুর্লভা কালী । তবে এও বলা হয় যে, মৃত্যুর আগে সাধক যাকে পুজোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই পূজারির নাম দুর্লভ ভট্টাচার্য থেকে দেবী দুর্লভা কালী হিসেবে পরিচিতি পান ৷
পুরোহিতের থেকে জানা গিয়েছে, মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে পঞ্চমুন্ডির আসন আছে । পাশে সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর সমাধি । তার উপর একটি বেলগাছ আছে । সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, "মৃত্যুর পর আমাকে এখানেই বেলকাঠ দিয়ে পোড়াবি ৷ আর একটা পোড়া বেলকাঠ এখানে পুঁতে দিবি ৷ সেই বেলকাঠ থেকে যদি গাছ বের হয় তাহলে আমাকে সাধু-সন্ন্যাসী মেনে পুজো করবি ৷ যদি গাছ না বেরোয় তাহলে আমাকে ভণ্ড তপস্বী বলে মনে করবি ৷" তবে সেই পোড়া বেলকাঠ থেকে গাছ বেরিয়েছিল ৷ এখানে মায়ের পুজো হয়ে গেলে সেই বেলগাছের নীচে পুজো করতে হয় ৷ এমনটাই চলে আসছে ৷ বেলগাছের পাশেই ভোগ দেওয়ার জন্য একটা জায়গা বাঁধানো রয়েছে । প্রতিদিন পুজো শেষে শেয়ালদের খাওয়ার উদ্দেশ্যে সেই বেদিতে ভোগ প্রসাদ রাখা হয় । এলাকার শেয়ালরা সেই ভোগ প্রসাদ খেয়ে যেত । এখন শেয়াল না থাকলেও পুজোর শেষে সেই ভোগ দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে । কাক-পক্ষীরা এসে সেই ভোগ খেয়ে যায় ৷
কোন রাস্তা ধরে যাওয়া যাবে দুর্লভা কালী মন্দির :
ট্রেনে করে এলে প্রথমে নামতে হবে বর্ধমান স্টেশন । সেখান থেকে টোটো করে দুর্লভা কালীবাড়ি যাওয়া যায় ৷ তবে স্টেশন থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ দিকে জিটি রোড ধরে প্রথমে যেতে হবে কার্জন গেট । তার ভিতর দিয়ে পশ্চিমে বোরহাট এলাকা দিয়ে লাকুর্ডি গেলেই মিলবে দুর্লভা কালীর মন্দির ।
অথবা বর্ধমান শহর থেকে দু'নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কাঞ্চননগর রথতলার দিকে গেলেই মিলবে লাকুর্ডি । সেখানে খোঁজ করলেই সহজে পৌঁছনো যাবে দুর্লভা কালীর মন্দির ।