মালদা, 2 নভেম্বর: স্থানীয়রা বলেন, শুরু হয়েছিল প্রায় 300 বছর আগে ৷ শুরু করেছিলেন চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী ৷ সেই প্রাচীন রীতি আজও বর্তমান ৷ প্রাচীন সেই ঐতিহ্য মেনেই শুক্রবার রাতে চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের মালতিপুরে আয়োজিত হল কালীদৌড় ৷ শুধু হিন্দুরাই নয়, এই রেওয়াজে সামিল হন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনও ৷ প্রাচীন প্রথায় রাতের মালতিপুর হয়ে উঠেছিল সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র ৷
দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো ৷ মধ্যের দিনগুলিতে লক্ষ্মীপুজোর মতো উৎসব থাকলেও তাতে সব ধর্মের মানুষ সেভাবে অংশ নিতেন না ৷ তাই 300 বছর আগে চাঁচলরাজ শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী কালীপুজোর বিসর্জনকে ঘিরে নতুন আমোদের আয়োজন করেছিলেন ৷ প্রথমে বুড়ি কালী, ও বাজার কালীকে নিয়ে দৌড়ের আয়োজন করা হয় ৷ পরবর্তীতে আরও কিছু কালী প্রতিমাকে এই রেওয়াজে সামিল করা হয় ৷ এখন বুড়ি কালী ও বাজার কালী তো আছেই, তার সঙ্গে হাট কালী, শ্যামা কালী, চনকা কালী-সহ আরও কিছু কালী প্রতিমা এই দৌড়ে অংশ নেয় ৷
বিসর্জনের আগে প্রতিমাগুলিকে কাঁধে নিয়ে দৌড়য় সংগঠকরা ৷ তার আগে প্রতিমার নাচও হয় ৷ যাঁদের প্রতিমা অক্ষত অবস্থায় প্রথম ঘাটে পৌঁছয়, সেটিরই আগে বিসর্জন দেওয়া হয় ৷ গতকাল রাতেও তার আয়োজন করা হয়েছিল মালতিপুরে ৷
স্থানীয় বাসিন্দা অমিত দাস বলেন, "এলাকায় যত কালীপুজো হয়, প্রতিটি পুজোর সংগঠকদের সমন্বয়ে এই দৌড়ের আয়োজন করা হয় ৷ প্রতি বছরের মতো এবারও সেই ঐতিহ্যবাহী দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছে ৷ আগে রাজারা এই দৌড়ের আয়োজন করতেন ৷ প্রথমে দু'টি প্রতিমা নিয়ে দৌড়ের সূচনা হয়েছিল ৷ পরে কালীর সংখ্যা বেড়ে যায় ৷ এবার এখানে 8টি প্রতিমা দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছে ৷"
কালীদৌড় থাকায় গতকাল রাতে মালতিপুর ছেড়ে নড়েননি এলাকার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বকসি ৷ তিনি বলেন, "মালতিপুরের কালীদৌড় দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ৷ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের সঙ্গে প্রতিটি পুজো কমিটি সজাগ থাকে ৷ পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একমাত্র আমার বিধানসভা কেন্দ্র এলাকাতেই এই ঐতিহ্যবাহী কালীদৌড় হয় ৷ এই দৌড়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিয়ে সম্প্রীতির এক মিলনক্ষেত্র তৈরি করে দেন ৷"