জলপাইগুড়ি, 25 অক্টোবর: এখানে মা দশভূজা। কালীপুজোর দিন মা পূজিত হন পেটকাটি রূপে। কথিত রয়েছে, মাটি খুঁড়তে গিয়ে কোদালের আঘাতের পেট কেটে গিয়েছিল। তারপর থেকে উদ্ধারকৃত কষ্টিপাথরের মূর্তিটির নামকরণ করা হয়েছিল পেটকাটি। সম্পূর্ণ এক রহস্যবৃত্তের আড়ালে রয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার প্রাচীন জনপদ ময়নাগুড়ির পেটকাটি কালীমূর্তি বা পেটকাটি মাও।
ময়নাগুড়ি শহরের পেটকাটি এলাকায় কালো কষ্টি পাথরের এই প্রাচীন মায়ের মূর্তি আর পাঁচটা মূর্তি থেকে একদমই আলাদা। দেবীর পেট কাটা বলে স্থানীয় রাজবংশীদের মধ্যে পেটকাটি মাও নামে পরিচিত দেবী। তবে পেটকাটি আসলে কালীমূর্তি হলেও তাঁকে ধূমাবতী চণ্ডী কালী হিসেবেই পুজো করা হয় বলে পুরোহিত বাবলু দেবশর্মা জানান। তিনি বলেন, "কয়েক পুরুষ ধরে তাঁরা এই মন্দিরে পুজো করে আসছেন।"
কালী মায়ের মূর্তি-
ময়নাগুড়ি পেটকাটি মন্দিরের কালীর মূর্তিটি প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু। মূর্তিটি কালো কষ্টি পাথরের। মা একটি পদ্মের উপর আসীন । বাঁ-দিকের পাঁচটি হাতে রয়েছে হাতি, ঘণ্টা, ছিন্ন, নরমুণ্ড, নরমূর্তি ও একহাত ভাঙা ৷ দেবী মাথায় সর্প শোভিত মুকুট, গলায় ঝুলছে নরমুণ্ডের মালা, সারা শরীর সর্পমালায় শোভিত। শিরদাঁড়ার উপরের দিকে বিছে। দেবীর দু'টি চোখ বিস্ফোরিত হলেও কপালে ত্রিনয়ন আছে। দেবীর পায়ের নীচে নারী মূর্তি, একদিকে শেয়াল, পেঁচা। মূর্তির পেট কাটা এবং পেটের মধ্যে কাঁকড়াবিছের ছবি। ডানদিকের পাঁচটি হাতে রয়েছে হাতির মুখের দিকে রাখা, মানুষের কঙ্কাল, বাদ্য ঘণ্টা, অপর দু'টি হাত ভাঙা। পেটকাটি মার মূর্তি দশভূজা। কিন্তু তিনটি হাত ভেঙে গিয়েছে।
পেটকাটি মায়ের মন্দির-
জলপাইগুড়ির ইতিহাস গবেষক উমেশ শর্মা জানান, পেটকাটি কালীমূর্তি হলেও চণ্ডীকালী হিসেবেই পূজিত মা। তবে এই মূর্তির বয়স কত তা অজানা।অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবী। অতীতে ডুয়ার্স অঞ্চল ভুটানের অধীনে ছিল এ জায়গা। মাটি খনন করার সময় স্থানীয়রাই রহস্যময় দেবী মূর্তি পান। স্থানীয় বেশ কয়েকজন জমি দান করার পর সেখানেই পেটকাটি মায়ের মন্দির স্থাপন করা হয়েছে।
মন্দির কমিটির সম্পাদক তুষার মজুমদার বলেন, "আমাদের পেটকাটি মন্দির খুব জাগ্রত। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনেছি মাটি খোঁড়ার সময় মূর্তিটির গায়ে কোদালের কোপ লেগেছিল তারপর নাকি পেট কেটে যায়। সেইথেকেই পেটকাটি নাম দেওয়া হয়েছে মা কালীর।"