চন্দননগর, 8 নভেম্বর: চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর থেকেও বেশি জনপ্রিয় তার শোভাযাত্রা। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ আসেন এই শোভাযাত্রা দেখতে। আর শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ চন্দননগরের আলোকসজ্জা। সারারাত আলোর মালায় সেজে ওঠে চন্দননগরের আশপাশ। এখন দেখা যায় উন্নতমানের এলইডি আলো। সঙ্গী হয়েছে প্রযুক্তিও। চন্দননগরের আলোর ইতিহাসও সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ ।
ফরাসি আমলে জগদ্ধাত্রীর শোভাযাত্রায় থাকত গ্যাস লাইট, হ্যাচাক ও ডে লাইট (petromax)। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিউবলাইট আসে। তবে এখানকার আলোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে টর্চের টুনি অর্থাৎ 6.2 টুনি বাল্বের মধ্যে দিয়ে। আমেরিকা লন্ডন-সহ বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হয় চন্দননগরের আলোকসজ্জা। সেভাবেই চন্দননগরের আলোক শিল্পে জনপ্রিয়তা পান শ্রীধর দাস, তারক শেট, বাবু পাল ও অসীম দে'র মতো শিল্পীরা। এখন একাধিক শিল্পী নতুন ধরনের আলোর জাদুতে সাজিয়ে তুলছেন চন্দননগরের শোভাযাত্রাকে।
আলো শিল্প-
বর্তমানে চন্দননগরের আলো একটা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। তৈরির আগে আলোকসজ্জার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ আঁকা হয়। এরপর তা লোহা অথবা ফাইবারের কাঠামোর মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়। থ্রিডি ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। চন্দননগরের আলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেলেও শোভাযাত্রার আলোয় থাকে অন্যরকম চমক। সেই জন্য পুজো কমিটিগুলি ও আলোকশিল্পীরা সারা বছরের চিন্তাভাবনা ও পরিশ্রমে আলোর জাদু তুলে ধরেন এই জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায়।
কী বলছেন পুজো উদ্যোক্তা-
চন্দননগর বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজোর সদস্য বিমলেন্দু সরকার ও সহকোষাধ্যক্ষ অমিয় কুমার সাহা সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। এই পুজো থেকেই টুনির আলোর শোভাযাত্রা শুরু হয়।
চন্দননগর বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজোর সদস্যরা বলেন, "গ্যাস লাইট, হ্যাচাক, টিউবলাইটের শোভাযাত্রা দেখেছি। বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রথম টুনি বাল্বের আলো দিয়ে শোভাযাত্রা শুরু করে। হাওড়ার মহাকালী ইলেকট্রিক প্রথম চন্দননগরে টুনি বাল্বের আলো নিয়ে আসে। শিল্পী ছিলেন শ্রীধর দাস। নকশা করা বেতের উপর আলো লাগিয়ে শোভাযাত্রা শুরু হয় চন্দননগরে। পরবর্তীকালে চুঁচুড়ার তারক পাল বাগবাজারের পুজোয় আলো দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে টুনি বাল্বের পরিবর্তন হয়ে এলইডি লাইটের চল বাড়ে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আলো তৈরি করা হয় চন্দননগর শোভাযাত্রায়।"
তাঁরা আরও বলেন "চন্দননগরের আলোক শিল্পে প্রথমে গ্যাস লাইট, ডে-লাইট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প আসে। পরবর্তীকালে 6.2 টুনি বাল্বের জনপ্রিয়তা বাড়ে। আর এই টুনি বাল্বের আলোর জাদু তৈরি করেছিলেন চন্দননগরের বিখ্যাত আলোক শিল্পী শ্রীধর দাস। তিনি শুধু চন্দননগর নন ভারতের বিভিন্ন শহর এমনকী বিদেশেও গিয়েছেন। রাশিয়া, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডেও গিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। চন্দননগরের আলো বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন।
শিল্পী শ্রীধর পাল-
স্কুলে পড়ার সময় সরস্বতী পুজোর জন্য আলো তৈরির হাতে খড়ি। তিনি বলেন, " চন্দননগরের আলো আরও ভালো কীভাবে করা যায় তা সবসময় ভাবতাম ৷ চন্দননগরের আলোর ইতিহাসে চুঁচুড়ার তারক শেটের কথাও ভুললে চলবে না। চন্দননগরের আলোরা কারিগরি শিল্পীরা যতদিন বেঁচে থাকবেন চন্দননগরের আলো ততদিন থাকবে।"
শিল্পী অসীম দে-
চন্দননগর আলোকশিল্পে টুনি বাল্বের পর এলইডি লাইটের সঙ্গে পরিচয় করান শিল্পী অসীম দে। 1988 সালে চন্দননগরে এলইডির ব্যবহার হয়। আবার সেই এলইডির উজ্জ্বলতা কমাতে বাবু পাল এলইডি উপর ক্যাপ তৈরি করে আলোর অন্যমাত্রা যোগ করেছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন রকমের এলইডি আলো বাজারে এসেছে।
অসীম দে বলেন, "ফরাসি যুগ থেকেই গ্যাস লাইট, হ্যাচাক, ডে-লাইট চন্দননগরের শোভাযাত্রা হতো। পরবর্তীকালে বড় টুনি বাল্ব, পরে ছোট 6.2 টুনি বাল্ব কাজ শুরু হয় । এরপর আমি এলইডি লাইট শুরু করি চন্দননগরে। সেই সময় ব্লু এলইডি পাওয়া যেত । অন্য রঙের এলইডি পাওয়া যেত না বর্তমানে সেই এলইডিতে থ্রিডি ও অ্যানিমেশন এসেছে। বিভিন্ন রঙের লাইট পাওয়া যাচ্ছে।"