ETV Bharat / lifestyle

বিদ্যা ও সুন্দরের প্রেমকাহিনীর সাক্ষী বর্ধমানের এই কালী

জঙ্গলে ভরা বর্ধমানের তেজগঞ্জে মা থাকতেন সকলের অন্তরালে ৷ রাজা তেজচাঁদ অত্যাচারকারীদের এনে মায়ের সামনে বলি দিতেন ৷ একদিন ঘটল অঘটন ! তারপর ...

Bidya Sundar Kali Temple
পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালী (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 28, 2024, 4:10 PM IST

Updated : Oct 28, 2024, 5:39 PM IST

বর্ধমান, 28 অক্টোবর: কন্যা বিদ্যার সঙ্গে গরিব পূজারি সুন্দরের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি রাজা তেজচাঁদ ৷ রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরে বলির জন্য নিয়ে যান দু'জনকে ৷ বলির মুহূর্তেই ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা ৷ মিলিয়ে যান প্রেমিকযুগল ৷ সেই থেকেই রাজবাড়ির মা বিদ্যাসুন্দর কালী হিসেবে পরিচিত হন ৷

সেই সময় বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন তেজচাঁদ ৷ বর্ধমান শহরের দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা । সেখানকার এক কালী মন্দিরে প্রতিদিন পুজো দিতেন তেজচাঁদ । কিন্তু সেখানকার পরিবেশ এতটাই ছমছমে ছিল যে দিনের বেলাতেও কেউ সচরাচর ওই পথে যেতে সাহস করতেন না । জনশ্রুতি আছে, সেই সময় যারা অন্যায় কিংবা অত্যাচার করত তাদের ধরে এনে এই মন্দিরে মায়ের কাছে হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হত । নরবলি দেওয়া হত বলে এই কালী দক্ষিণ মশানকালী নামে পরিচিত ছিল ।

জানুন বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)


জানা যায়, বর্ধমান রাজবাড়ির পূজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক ৷ তাঁদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না ৷ তিনিই এই কালীপুজো করতেন ৷ সেই পুজোর জন্য প্রতিদিন ফুলের মালা নিয়ে আসতেন মালিনী মাসি । মন্দিরের পূজারি সুন্দর একদিন মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিদিন মায়ের জন্য এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথে দেয় । মালিনী মাসি জানায়, রাজকন্যা বিদ্যা নিজের হাতে প্রতিদিন মায়ের জন্য মালা গাঁথেন ।

সেই কথা শোনার পরে বিদ্যাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকেন সুন্দর । মালিনী মাসিকে অনুরোধ করেন একটিবার বিদ্যার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য ৷ উত্তরে মালিনী মাসি জানান, বিদ্যা তো রাজকুমারী তাই তাঁকে দেখা সম্ভব নয় । সুন্দরও নাছোড়বান্দা ৷ বাধ্য হয়ে বিদ্যা কোথায়, কোন ঘরে থাকে তা সুন্দরকে জানিয়ে দেন মালিনী ৷ দু'জন মিলে মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেন সুড়ঙ্গ ৷ সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে গিয়েই সুন্দরের প্রথম দেখা হয় বিদ্যার সঙ্গে ৷ বাড়ে সখ্যতা ৷ এভাবেই সুড়ঙ্গ পথে চলত দু'জনের সাক্ষাত ৷ তাতেই ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ৷ প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হয় বিদ্যা ও সুন্দর ৷

Vidyasundar Kali in Bardhaman
বিদ্যাসুন্দর কালী (ইটিভি ভারত)

এর মধ্যে একদিন চরের মাধ্যমে বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়ের বিষয়টি জেনে ফেলেন রাজা তেজচাঁদ । খবরটা কানে যেতেই প্রচণ্ড রেগে যান তিনি ৷ মেয়ে বিদ্যা এবং সুন্দরকে মা কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন । নির্দিষ্ট দিনে দু'জনকেই স্নান করিয়ে মা কালীর সামনে আনা হয় । কাপালিকও হাজির খাঁড়া নিয়ে । বলি দেওয়ার আগে বিদ্যা ও সুন্দর দু'জনেই কাপালিককে জানায় তাঁরা শেষবারের মতো মাকে প্রণাম করবে । কাপালিক সেই সুযোগ দিলে তাঁরা মায়ের সামনে দু'জনে মিলে প্রণাম করতে শুরু করে । সেই সময় মূর্ছা যান কাপালিক । জ্ঞান ফিরে দেখেন বিদ্যা ও সুন্দর উধাও ৷ তাঁদেরকে কোথাও খুঁজেও পাওয়া যায়নি ৷ মনে করা হয়, দেবীর আশীর্বাদই বিদ্যা ও সুন্দরকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ৷ অমর করেছে রাজকন্যা ও পূজারির প্রেম ৷ সেই সময় থেকে মন্দিরের নামকরণ হয় বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির । তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নরবলি ৷ পরবর্তীকালে সেখানে মোষ ও ভেড়া বলি দেওয়া হত । এখন কালীপুজোর রাতে পাঁঠাবলি দেওয়া হয় । পুজো দেখতে ভিড় জমান দূরদূরান্তের মানুষ ।

Bardhaman Ancient Kali Puja
বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির (ইটিভি ভারত)
মন্দিরের সেবাইত আভারানী বটব্যালের কথায়, "বিদ্যাসুন্দরের ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে ফেরে । মন্দিরের ভিতরের দিকে ছিল একটা সুড়ঙ্গ । দীর্ঘদিনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই সুরঙ্গ পথ বন্ধ হয়ে যায় । দেবী মূর্তির ঠিক উলটো দিকে আছে একটা শিবমন্দির । এছাড়া বাইরে আছে আরও একটা শিবমন্দির ৷ যা ভৈরব ও পঞ্চানন্দ নামে পরিচিত । মা খুব জাগ্রত ।" বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি যাওয়ার পথ নির্দেশ:

বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো পাওয়া যাবে । এছাড়াও স্টেশন থেকে বেরিয়ে জিটি রোড ধরে বীরহাটা যেতে হবে । বীরহাটা ব্রিজ থেকে ডানদিকে সদরঘাট রোড ধরে যেতে হবে তেলিপুকুর মোড় । সেখান থেকে জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুরের দিকে এক কিলোমিটার গেলেই বাঁদিকে পড়বে তেজগঞ্জ এলাকা । ওই রাস্তায় ঢুকে আরও হাফ কিলোমিটার গেলেই মিলবে বিদ্যাসুন্দর কালীমন্দির ।

রক্তরঞ্জিত খড়গ ও ছিন্নমস্তক হাতের কালীকে ভক্ত স্মার্টফোনে শোনান আকুল প্রার্থনা

বর্ধমান, 28 অক্টোবর: কন্যা বিদ্যার সঙ্গে গরিব পূজারি সুন্দরের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি রাজা তেজচাঁদ ৷ রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরে বলির জন্য নিয়ে যান দু'জনকে ৷ বলির মুহূর্তেই ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা ৷ মিলিয়ে যান প্রেমিকযুগল ৷ সেই থেকেই রাজবাড়ির মা বিদ্যাসুন্দর কালী হিসেবে পরিচিত হন ৷

সেই সময় বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন তেজচাঁদ ৷ বর্ধমান শহরের দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা । সেখানকার এক কালী মন্দিরে প্রতিদিন পুজো দিতেন তেজচাঁদ । কিন্তু সেখানকার পরিবেশ এতটাই ছমছমে ছিল যে দিনের বেলাতেও কেউ সচরাচর ওই পথে যেতে সাহস করতেন না । জনশ্রুতি আছে, সেই সময় যারা অন্যায় কিংবা অত্যাচার করত তাদের ধরে এনে এই মন্দিরে মায়ের কাছে হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হত । নরবলি দেওয়া হত বলে এই কালী দক্ষিণ মশানকালী নামে পরিচিত ছিল ।

জানুন বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)


জানা যায়, বর্ধমান রাজবাড়ির পূজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক ৷ তাঁদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না ৷ তিনিই এই কালীপুজো করতেন ৷ সেই পুজোর জন্য প্রতিদিন ফুলের মালা নিয়ে আসতেন মালিনী মাসি । মন্দিরের পূজারি সুন্দর একদিন মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিদিন মায়ের জন্য এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথে দেয় । মালিনী মাসি জানায়, রাজকন্যা বিদ্যা নিজের হাতে প্রতিদিন মায়ের জন্য মালা গাঁথেন ।

সেই কথা শোনার পরে বিদ্যাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকেন সুন্দর । মালিনী মাসিকে অনুরোধ করেন একটিবার বিদ্যার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য ৷ উত্তরে মালিনী মাসি জানান, বিদ্যা তো রাজকুমারী তাই তাঁকে দেখা সম্ভব নয় । সুন্দরও নাছোড়বান্দা ৷ বাধ্য হয়ে বিদ্যা কোথায়, কোন ঘরে থাকে তা সুন্দরকে জানিয়ে দেন মালিনী ৷ দু'জন মিলে মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেন সুড়ঙ্গ ৷ সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে গিয়েই সুন্দরের প্রথম দেখা হয় বিদ্যার সঙ্গে ৷ বাড়ে সখ্যতা ৷ এভাবেই সুড়ঙ্গ পথে চলত দু'জনের সাক্ষাত ৷ তাতেই ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ৷ প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হয় বিদ্যা ও সুন্দর ৷

Vidyasundar Kali in Bardhaman
বিদ্যাসুন্দর কালী (ইটিভি ভারত)

এর মধ্যে একদিন চরের মাধ্যমে বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়ের বিষয়টি জেনে ফেলেন রাজা তেজচাঁদ । খবরটা কানে যেতেই প্রচণ্ড রেগে যান তিনি ৷ মেয়ে বিদ্যা এবং সুন্দরকে মা কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন । নির্দিষ্ট দিনে দু'জনকেই স্নান করিয়ে মা কালীর সামনে আনা হয় । কাপালিকও হাজির খাঁড়া নিয়ে । বলি দেওয়ার আগে বিদ্যা ও সুন্দর দু'জনেই কাপালিককে জানায় তাঁরা শেষবারের মতো মাকে প্রণাম করবে । কাপালিক সেই সুযোগ দিলে তাঁরা মায়ের সামনে দু'জনে মিলে প্রণাম করতে শুরু করে । সেই সময় মূর্ছা যান কাপালিক । জ্ঞান ফিরে দেখেন বিদ্যা ও সুন্দর উধাও ৷ তাঁদেরকে কোথাও খুঁজেও পাওয়া যায়নি ৷ মনে করা হয়, দেবীর আশীর্বাদই বিদ্যা ও সুন্দরকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ৷ অমর করেছে রাজকন্যা ও পূজারির প্রেম ৷ সেই সময় থেকে মন্দিরের নামকরণ হয় বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির । তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নরবলি ৷ পরবর্তীকালে সেখানে মোষ ও ভেড়া বলি দেওয়া হত । এখন কালীপুজোর রাতে পাঁঠাবলি দেওয়া হয় । পুজো দেখতে ভিড় জমান দূরদূরান্তের মানুষ ।

Bardhaman Ancient Kali Puja
বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির (ইটিভি ভারত)
মন্দিরের সেবাইত আভারানী বটব্যালের কথায়, "বিদ্যাসুন্দরের ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে ফেরে । মন্দিরের ভিতরের দিকে ছিল একটা সুড়ঙ্গ । দীর্ঘদিনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই সুরঙ্গ পথ বন্ধ হয়ে যায় । দেবী মূর্তির ঠিক উলটো দিকে আছে একটা শিবমন্দির । এছাড়া বাইরে আছে আরও একটা শিবমন্দির ৷ যা ভৈরব ও পঞ্চানন্দ নামে পরিচিত । মা খুব জাগ্রত ।" বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি যাওয়ার পথ নির্দেশ:

বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো পাওয়া যাবে । এছাড়াও স্টেশন থেকে বেরিয়ে জিটি রোড ধরে বীরহাটা যেতে হবে । বীরহাটা ব্রিজ থেকে ডানদিকে সদরঘাট রোড ধরে যেতে হবে তেলিপুকুর মোড় । সেখান থেকে জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুরের দিকে এক কিলোমিটার গেলেই বাঁদিকে পড়বে তেজগঞ্জ এলাকা । ওই রাস্তায় ঢুকে আরও হাফ কিলোমিটার গেলেই মিলবে বিদ্যাসুন্দর কালীমন্দির ।

রক্তরঞ্জিত খড়গ ও ছিন্নমস্তক হাতের কালীকে ভক্ত স্মার্টফোনে শোনান আকুল প্রার্থনা
Last Updated : Oct 28, 2024, 5:39 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.