ঢাকা, 19 জুলাই: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন অব্যহত বাংলাদেশে ৷ বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরও 18 জন ৷ সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা 25 ছুঁয়েছে ৷ আহতের সংখ্যা 300 ছাড়িয়েছে । অনির্দিষ্টকালের জন্য় বন্ধ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ আন্দোলনকারী ছাত্রদের দেশব্যাপী ধর্মঘটে আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি ৷
ছাত্রদের ধর্মঘটে হাসপাতাল এবং জরুরি পরিষেবাগুলি ছাড়া সমস্ত কিছু স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে । যোগ দিয়েছেন দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা ঢাকার রামপুরা এলাকায় রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন অবরোধ করে ৷ তাতে প্রচুর কর্মী ভেতরে আটকা পড়ে ।
" freedom of expression & peaceful assembly are fundamental human rights" - @volker_turk, United Nations High Commissioner for Human Rights, on #Bangladesh https://t.co/Gqa7zkrmsW
— UN in Bangladesh (@UNinBangladesh) July 17, 2024
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, ‘‘বৃহস্পতিবারের দেশব্যাপী আন্দোলনকারী ও শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী এবং দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত 18 জন নিহত এবং 2,500 জনের বেশি আহত হয়েছে ৷”
বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বিএসএস জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজধানী-সহ সারা দেশে আধা-সামরিক বর্ডার গার্ড নামিয়েছে । পাশাপাশি পুলিশ এবং অ্যান্টি ক্রাইম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে ৷ সরকারি অফিস এবং ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও গণপরিবহণ কম হওয়ার কারণে উপস্থিতি কম ছিল । বেশিরভাগ অফিসই কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে ।
Advisory on the ongoing situation in Bangladesh. pic.twitter.com/mjXouAST2M
— India in Bangladesh (@ihcdhaka) July 18, 2024
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন । একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
যদিও আইনমন্ত্রীর এই আশ্বাসবাণীতে কাজ হয়নি ৷ আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সরকারের সঙ্গে সংলাপ চায় না ৷ নাজমুল হাসান বলেন, ‘‘আমরা অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করার দাবি জানাচ্ছি ।’’
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য প্রায় 3 হাজার সরকারি চাকরি খোলা হয় । সরকারি চাকরির 56 শতাংশ বর্তমান কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত । সর্বাধিক 30 শতাংশ 1971 সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য, 10 শতাংশ অনগ্রসর প্রশাসনিক জেলাগুলির জন্য, 10 শতাংশ মহিলাদের জন্য, 5 শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য এবং এক শতাংশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত । আন্দোলনকারীদের দাবি, এই সংরক্ষণের ফলে মেধা ছাত্রছাত্রীরা চাকরিতে যথেষ্ঠ সুযোগ পান না ৷
বাংলাদেশে বাড়তে থাকা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে নির্দেশিকা জারি করেছে ভারত সরকারও ৷ ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয়দের বাংলাদেশে ভ্রমণ এড়াতে এবং সেখানে বসবাসরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের বাসস্থানের বাইরে চলাচল কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।’’ একই সঙ্গে কোনও জরুরি বা সাহায্যের প্রয়োজন হাই কমিশনের নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলা হয়েছে ৷