নয়াদিল্লি, 14 ডিসেম্বর: আবারও প্রকাশ্য বিবৃতি দিলেন শেখ হাসিনা। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকের মাধ্যমে 'শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস'-এর ইতিহাস তুলে ধরলেন তিনি। তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। তারই মধ্যে 1971 সালের এই 14 ডিসেম্বর বাংলাদেশের একাধিক বুদ্ধিজীবীকে খুন করেছিল 'পাকিস্তানি বাহিনী থেকে শুরু করে রাজাকার, আলবদর এবং আলশামস বাহিনী'। সে কথা বিস্তারিত উল্লেখ করে এখন যাদের হাতে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার আহ্বানও জানালেন মুজিব-কন্যা ।
গত কয়েকদশক ধরে দিনটি 'শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে। এবার পরিস্থিতি আলাদা। তাই ছেলের ফেসবুকের ব্যবহার করেই দেশবাসীকে এই দিবসের কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন যে 'অরাজক' পরিস্থিতি চলছে তা নিয়েও সরব হয়েছেন হাসিনা। তবে এবার কারও নাম না করেই আক্রমণ করেছেন হাসিনা।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই কারও নাম উল্লেখ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনা। দিন দশেক আগে ঢাকায় যান ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। সেখানে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন শীর্ষ আমলার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। দেখা হয় বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে।
ফিরে এসে বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে নিজের ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বিক্রম। সূত্রের খবর, বিক্রম জানান, হাসিনা যেভাবে ভারতের মাটিতে বসে একের পর এক প্রসঙ্গে ইউনুসের সরকারের সমালোচনা করছেন তা ঢাকা ভালোভাবে নিচ্ছে না। এরপরই শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিবৃতি দিলেন হাসিনা। আর তাতে ইউনুসদের নাম রইল না।
বিবৃতির শুরুতেই তিনি লেখেন, "হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী তাদের (মুক্তিযুদ্ধে) পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।" মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্বে 10 থেকে 14 ডিসেম্বরের মধ্যে আলবদর বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে ঢাকার মহম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর 14 ডিসেম্বরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় ।"
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাও তুলে ধরেন হাসিনা । তাতে নাম রয়েছে, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, ডা.ফজলের রাব্বি, ডা. মহাম্মদ মর্তুজা, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র(জিসি) দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, এস এ মান্নান(লাডু ভাই), আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন, আবুল বাশার চৌধুরী, মুহাম্মদ আখতার সহ আরও অনেকের।
এখানেই বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অতীতের মিল খুঁজে পান হাসিনা। তিনি লেখেন, "জাতির এক গভীর সংকটময় মুহূর্তে এ বছর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী এবং বুদ্ধিজীবী নিধনকারীদের দোসররা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত আওয়ামী লিগ সরকারকে সরগিয় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সাধারণ মানুষের উপর অমানবিক নিপীড়ন- নির্যাতন চালাচ্ছেন।" তবে এসব কারা করছে তা লেখেননি হাসিনা।
তাঁর আরও দাবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে জামাতে ইসলামি-সহ 1971 সালে পরাজিত শক্তিকে পুনর্বাসন করছে সরকার । পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মারকচিহ্ন ধ্বংস করেছে। প্রিয় দেশকে জঙ্গিদের উর্বর লীলাভূমিতে পরিণত করছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির এসব অপকর্ম বীর বাঙালি কোনওদিন মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। এদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত এবং শান্তি কামনা করছি।"