রোম, 8 জানুয়ারি: মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করেছেন আগেই । সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে বড় পদক্ষেপ নিলেন পোপ ফ্রান্সিস । বিশ্বের সমস্ত ক্যাথলিক চার্চের নীতি নির্ধারনের দায়িত্বে এলেন ইতালির সিস্টার সিমোনা ব্রামমিল্লা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
সংবাদসসংস্থা এপি জানিয়েছে, দুনিয়ায় ক্যাথলিক চার্চের সংখ্যা 6 লক্ষ । সেগুলি কীভাবে পরিচালিত হবে তা ঠিক করে ভ্যাটিকানের সংস্থা 'হলি সি কুরিয়া'। সেই সংস্থার দায়িত্বে এসেছেন সিস্টার সিমোনা। এতদিন চার্চ পরিচালনের নীতি থেকে শুরু করে এই ধরনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পুরুষদের উপরেই থাকত । মহিলারা তাঁদের সাহায্য করতেন। আগল ভাঙল এতদিনে। ভ্যাটিকানের নিজস্ব সংবাদপত্রে এই খবর ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে । শুধু চার্চ নয়, ক্যাথলিকরা কীভাবে জীবন যাপন করবেন তা ঠিক করার ক্ষেত্রেও এই সংস্থার বড় ভূমিকা আছে ।
বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ব পড়ান অধ্যাপক টমাস গ্রুম। ভ্যাটিকানের ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে মহিলাদের যাতে আরও বেশি করে নিয়ে আসা হয় সেই দাবি তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। পোপের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর তিনি জানন, দায়িত্ব একজন মহিলার হাতে যাওয়া অবশ্যই উচিত ছিল। বহু আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হত । এমনিতে 'হলি সি কুরিয়া'র দায়িত্বে একজন মহিলার হাতে আসা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মনে হতেই পারে । আর এই সিদ্ধান্তের জন্য ভ্যাটিকানের ক্ষমতার বিন্যাস পুরো পাল্টে যাবে এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই । তবে নারীদের ক্ষমতায়ানের ক্ষেত্রে এটি যে প্রাথমিক পদক্ষেপ তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।
পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন টমাস। ভ্যাটিকানে ক্ষমতায় আহোরনের যে নির্দিষ্ট স্তর আছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ হল কার্ডিন্যাল। চার্চের নীতি নির্ধারনের সুবাদে সেই পদেও আসছেন সিস্টার সিমোনা। তবে এতবড় পদক্ষেপ নেওয়া পোপের পক্ষে খুব একটা সহজ ছিল না তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হবে তা বুঝতে না পেরে সিমোরের একজন ডেপুটিরও সন্ধান করা হয়েছে। তিনি হলেন, অ্যাঞ্জেল ফার্নান্ডেজ। তাছাড়া চার্চের তরফে পদযাত্রার আয়োজন থেকে শুরু করে এমন বেশ কয়েকটি কাজ আছে যা শুধু পুরুষরাই করতে পারেন ।
ম্যানহাটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও ধর্মতত্বের অধ্যাপক নাটালিয়া ইম্পেটোরিলি মনে করেন, সিস্টার সিমোনার ডেপুটি হিসেবে একজন পুরুষকে নিয়োগ না করা হলেই ভালো হত । তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি এমন একটা দিন আসবে যেদিন চার্চ মহিলাদের যোগ্যতা নিয়ে কোনওরকম সংশয়ের মধ্যে থাকবে না। ডেপুটি হিসেবে একজন পুরুষের থাকা মানে এতদিন ধরে চলে আসা সেই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকেই প্রাধান্য দেওয়া।"
59 বছর বয়সি সিস্টার সিমোনা 2023 সাল থেকে 'হলি সি কুরিয়া'র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারি হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর এই দায়িত্বে আসাটাও ছিল বেশ কঠিন । 2022 সালে সংস্থার কার্যবিধিতে কিছু সংস্কার হয়েছিল। তারপরই সিস্টার সিমোনার নিয়োগ সম্ভব হয় । কর্মজীবনে মোজাম্বিকে একটা বড় সময় কাটিয়েছেন সিস্টার সিমোনা ।