নয়াদিল্লি, 22 জুন: বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে জট কাটল না ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৷ তবে এই জট যাতে কাটানো যায়, সেই কারণে দুই দেশের মধ্যে কথা হল শনিবার ৷ এই নিয়ে ভবিষ্যত কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেটাও সামনে এল ৷
শুক্রবার দু’দিনের ভারত সফরে নয়াদিল্লিতে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ শনিবার রাজধানীর হায়দরাবাদ হাউজে হয় দুই দেশের মধ্যে বৈঠক ৷ তার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন ৷ সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে ।’’
এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা সংযোগ, বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে আমাদের ফোকাস হিসাবে রেখেছি । গত 10 বছরে আমরা 1965 সালের আগে থেকে তৈরি হওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছি । আমরা এখন ডিজিটাল এবং জ্বালানি সংযোগের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেব । এটি উভয় দেশের অর্থনীতির গতি বাড়াবে । আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য উভয়পক্ষই সেপা-তে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত ৷ 1996 সালের গঙ্গা জল চুক্তির নবায়নের জন্য বাংলাদেশে একটি দল যাবে ৷ এছাড়া তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কারিগরি দল শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে ।’’
উল্লেখ্য, এই তিস্তা চুক্তি 2011 সালে হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি ৷ এর পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় 14 বছর ৷ এখনও আলোচনার স্তরেই রয়ে গিয়েছে এই চুক্তি ৷ তা কি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আশার আলো দেখতেই পারে বাংলাদেশ ৷
এ দিনের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷ তার মধ্য়ে অন্যতম হল সেপা বা সুংসহত অর্থনৈতিক অংশদারিত্ব চুক্তি ৷ এই নিয়ে দুই দেশই সহমত হয়েছে ৷ এ দিন প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা বারবার তুলে ধরেছেন ৷ দুই দেশের মধ্য়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহযোগিতা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি ৷ এ দিনের বৈঠক দেশের মধ্যে সবুজ অংশীদারিত্ব বা গ্রিন পার্টনারশিপ নিয়ে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে ৷
এছাড়া সামুদ্রিক সহযোগিতা ও নীল অর্থনীতি নিয়েও চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে ৷ এছাড়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে ৷ মোদি বলেন, "ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগে যোগদানের বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই ।"
এ দিন প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণে বাংলাদেশের প্রতি নয়াদিল্লি প্রতিবেশী প্রথম নীতি, পর্বের জন্য কাজ করার নীতি, ভিশন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ তৈরিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ভারতের অঙ্গীকার ।’’
ঘটনাচক্রে যে দিন নয়াদিল্লিতে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বৈঠক করলেন, সেই দিনই অ্যান্টিগাতে টি20 ক্রিকেট বিশ্বকাপে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ ৷ সেই ম্যাচ নিয়ে দুই দেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
এ দিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের সহযোগিতার কথা বারবার বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তিনি বলেন, "ভারত আমাদের প্রধান প্রতিবেশী ও বিশ্বস্ত বন্ধু ৷" তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্যও আমন্ত্রণ জানান ৷